
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সোমবার নতুন করে আরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। খাগড়াছড়িতে টানা বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে, এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ অঞ্চলে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে সড়ক তলিয়ে যান চলাচল দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সাতক্ষীরায় সেতুর একাংশের সংযোগ স্থান ধসে পড়ায় তিন উপজেলার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
পটুয়াখালীতে তিন স্থানে ধসে গেছে বেড়িবাঁধ। এতে ১১ গ্রামের কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, শেরপুরে চেল্লাখালী নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মৌলভীবাজারে চার নদীর পানি বেড়েছে। মনু ও জুড়ী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা, সংবাদদাতা ও পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধির।
খাগড়াছড়িতে টানা বর্ষণে জেলা সদরের শালবন, কুমিল্লাটিলা, সবুজবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা কয়েকশ পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়েছে প্রশাসন। দীঘিনালায় নিচু এলাকা প্লাবিত হযে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় দীঘিনালা-লংগদু সড়কে যান চলাচল দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে ভারি বর্ষণে খাগড়াছড়ির নদী-খালে পানি বেড়েছে। দীঘিনালার মাইনীনদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের অনেক পরিবার পানিতে তলিয়ে গেছে। দীঘিনালা-লংগদু সড়কের মেরুং ইউনিয়নের হেডকোয়ার্টারের স্টিল ব্রিজ এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে পানি ওঠায় রাঙ্গামাটির লংগদুর সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের মতো যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। লংগদু ও মেরুংগামী কয়েকটি পণ্যবাহী ট্রাক আটকে গেছে।
এদিকে, রাত থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাগড়াছড়ির প্রধান তিন নদী ফেনী, চেঙ্গি ও মাইনী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
সোমবার সকালে খাগড়াছড়ির আকাশ মেঘলা ছিল এবং থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেনাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোতে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা ॥ মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত এল্লারচর সেতুর একাংশের সংযোগস্থান ধসে পড়ায় তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা এবং আশাশুনি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এখন সেতু পার হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এলাকাবাসি খুঁটিতে লাল কাপড় টানিয়ে বিপদ সংকেতের জানান দিচ্ছে। ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সেতুর ওপারে দেবহাটার অংশে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ রয়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন চিংড়ি ও সবজি চাষিরা। যেকোনো সময় সেতুটি সম্পূর্ণ ধসে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ষাটের দশকে নির্মিত এই সেতুটি ধীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ সোমবার এল্লারচর সেতু পরিদর্শন করে জানান, এটি অনেক পুরাতন। এর প্রশস্ততা নদীর চেয়ে কম। জোয়ার-ভাটায় ¯্রােতের টানে হয়তো সেতুর সংযোগ বেজমেন্ট ধসে গিয়েছে।
কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ নি¤œচাপের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ধানখালীর লোন্দা হাফেজ প্যাদা বাজার সংলগ্ন বেড়িবাঁধের রিভার সাইটের বাঁধে দেওয়া জিও ব্যাগ ধসে গেছে। এতে প্রায় ১০০ ফুট এলাকাজুড়ে টিয়াখালী নদীতে ধসে গেছে বাঁধের রিভার সাইট। একটি স্লুইসসহ মূল বাঁধ এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫৪ নম্বর পোল্ডারের ওই বাঁধটি মেরামত না করলে তা ধসে তিন গ্রামের গোটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. হালিম প্যাদা জানান, ব্লক দিয়ে প্রটেকশন দেওয়া জরুরি।
একই দশা পাঁচ মাস আগে দেড় কোটি টাকা ব্যয় করা রাবনাবাদ পাড়ের চম্পাপুরের করমজাতলা এলাকার বাঁধের। জিওব্যাগ জিও টিউব ধসে মূল বাঁধের দুই তৃতীয়াংশ ধসে গেছে। রিভারসাইট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কান্ট্রিসাইট আছে চরম ঝুঁকিতে। ওখানকার ৫৪/এ পোল্ডারের ১৩ দশমিক শূন্য পয়েন্ট থেকে ১৪ দশমিক ১২০তম কিলোমিটার পর্যন্ত ১ হাজার ১২০ মিটার বেড়িবাঁধের জরুরি প্রটেকশন কোনো কাজে আসছে না। দুই গ্রামসহ পুরো এলাকায় প্লাবনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নীলগঞ্জের গৈয়াতলা এলাকায় বেড়িবাঁধের রিভার সাইট জলোচ্ছ্বাসে এক তৃতীয়াংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার অস্বাভাবিক জোয়ারে বাঁধটির কিছু অংশ ধসে যায়। জরুরিভাবে সংস্কার করা না হলে পুরো বাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, তিনি খোঁজ-খবর নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন। তবে, করমজাতলার জায়গাটি ক্রিটিক্যাল। ভেতরে জায়গা নেই। মাটি ও প্রয়োজনীয় জায়গা পাওয়া গেলে ওখানে স্থায়ীভাবে বিকল্প বেড়িবাঁধ করতে হবে। নইলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।
শেরপুর ॥ জেলায় পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে সব নদ-নদীর পানি। এর মধ্যে নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঢলের পানিতে জেলার নি¤œাঞ্চল ও খালবিলে পানি বেড়েছে। সকালে ঝিনাইগাতীর ধানশাইল ইউনিয়নের কাড়াগাঁও এলাকায় সোমেশ্বরী নদীর পাড় ভেঙে নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত কয়েকদিনে ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, ভোগাই নদীর পানি নাকুগাঁও পয়েন্টে ১৩৪ সেন্টিমিটার ও নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৬৬ সেন্টিমিটার এবং সদরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৫৯৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতীতে সোমেশ্বরী ও মহারশি নদীর পানি সকালে বাড়লেও দুপুর থেকে কমতে শুরু করেছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত হওয়ায় শেরপুরের নদ-নদীর পানি বেড়েছে। তবে, আগামী ১২ ঘণ্টায় পানি কমতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সোমেশ্বরী নদীর পাড়ের ভাঙা অংশ দিয়ে নি¤œাঞ্চলে কিছুটা পানি প্রবেশ করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।