ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লক্ষ্মীপুরে এক বছরে পানিতে ডুবে ১১১ শিশুর মৃত্যু

প্রদীপ কুমার রায়, নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর 

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ২৯ মে ২০২৫

লক্ষ্মীপুরে এক বছরে পানিতে ডুবে ১১১ শিশুর মৃত্যু

লক্ষ্মীপুর জেলায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু। ঘরের পাশের পুকুর, ডোবা, খাল কিংবা নির্মাণাধীন গর্ত—সব কিছুই যেন ফাঁদ হয়ে উঠছে কোমলমতি শিশুদের জন্য। জেলার পাঁচ উপজেলায় গত এক বছরে পানিতে ডুবে মারা গেছে অন্তত ১১১ শিশু। চলতি মে মাসেই প্রাণ গেছে আরও চারজনের।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জেলা সদর, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তবে সংখ্যা আরও বেশি। অনেক শিশুর মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই, হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ায় তা হিসেবের বাইরে থেকে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্র মতে, প্রকৃত সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়ে যেতে পারে।

শুধু ১৫ মে, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্চানগরে খেলার ছলে পুকুরে পড়ে প্রাণ হারায় দুই খালাতো ভাই—নাজিম ও জিহাদ। তাদের বয়স আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে। একইভাবে ১১ মে রামগতি উপজেলার চর বাদাম এলাকায় বাড়ির পাশে গর্তে পড়ে মারা যায় ভাই-বোন তাহিয়া (৫) ও আবদুল্লাহ (৩)। একজন পড়ে গেলে অন্যজন তাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, পাঁচ মিনিটের বেশি সময় পানিতে ডুবে থাকলেই শিশুর মৃত্যু হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরূপ পাল জানান, বসতবাড়ির আশপাশে খোলা পুকুর বা ডোবা বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব জায়গা ঘেরাবদ্ধ করা এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া মৃত্যু ঠেকানো কঠিন।

শিশু উন্নয়নকর্মী পারভীন হালিম বলছেন, প্রতিটি পরিবারকে শিশুদের সাঁতার শেখাতে হবে। এটা শুধু নিরাপত্তার নয়, খেলাধুলারও অংশ হতে পারে। তিনি আরো জানান, এক থেকে আট বছর বয়সী শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে ২০২২ সালে সরকার ‘সাঁতার প্রশিক্ষণ প্রকল্প’ চালু করেছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির তত্ত্বাবধানে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী চার হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানো হবে। জুন থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত দ্রুত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বিস্তৃত করা যাবে, তত দ্রুত মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রতিটি বাড়ির আশপাশের জলাশয়কে নিরাপদ করার কাজও জরুরি।

 

রাজু

×