ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উত্তরাঞ্চলের ২৯৫টি হাটে গরুর ছড়াছড়ি, নিস্প্রাণ বেচাবিক্রি

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ২৮ মে ২০২৫

উত্তরাঞ্চলের ২৯৫টি হাটে গরুর ছড়াছড়ি, নিস্প্রাণ বেচাবিক্রি

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।

কোরবানির ঈদ দরজায় কড়া নাড়ছে। উত্তরাঞ্চলের  রংপুর বিভাগের আট জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২৯৫টি হাট চালু করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পশুর হাটগুলো এখনও জমেনি। হাটে দেশি গরুর পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। তবে আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। হাটে ক্রেতা সমাগমের অপোয় আছেন তারা। 

রংপুর বিভাগের প্রাণিসম্পদ পরিচালক ডা. আব্দুল হাই সরকার  বলেন, ‘এখন হাটগুলোতে পশুর সরবরাহ অনেক বেশি। তবে ধীরে ধীরে ক্রেতা বাড়ছে। শেষ দিকে বাজার জমলে চাষি ও খামারিরা আশানুরূপ দাম পেতে পারেন।’ তিনি আরও জানান, ক্রেতা সাধারণের সুবিধার্থে বিভাগের আট জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ২৯৫টি হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং পশুর হাট শুরু হয়েছে। এসব হাটে সবধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া খামারিদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।    

বুধবার (২৮ মে) বিভিন্ন পশুর হাটে খবর নিয়ে জানা যায়, ঈদের এখনও প্রায় ৯দিন বাকী রয়েছে। তাই হাটে প্রচুর কোরবানীর পশু উঠলেও ক্রেতারা এসে ঢু মেরে যাচ্ছে। দাম যাচাই করছেন। ফলে বেচাবিক্রি কম। কয়েকজন খামারি ও গৃহস্থদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম অত্যাধিক বেশি হওয়ায় পশু পালন একটা কষ্ট সাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি গরু -ছাগলকে খাওয়ানোর মতো ঘাস ভরা মাঠ বর্তমানে নেই বললেই চলে। আগের মানুষ মাঠে গরু ছাগল ছেড়ে দিতো সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রেখে গোয়ালে নিয়ে আসতো। আর এখন গোয়ালেই রেখে গরু-ছাগল লালন-পালন করতে হচ্ছে। এদিকে দেশি গরুতেই কোরবানির জোগান সম্ভব হবে বলে মনে করছেন খামারিরা। এজন্য চোরাচালান ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানোর দাবি তাদের। খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ের গৃহস্থরা বলছেন, ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ না করলে কোরবানির হাটে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে।

এবার এই অঞ্চলের রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রায় ১৯ লাখ ৮০ হাজার গবাদি পশু প্রস্তুত করেছেন খামারি ও গৃহস্থরা। এসব পশুর বিপরীতে বিভাগে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৪ লাখ ১২ হাজারের কিছু বেশি। এতে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। এর মধ্যে উট এবং দুম্বা শতাধিকের বেশি রয়েছে।

বিভাগের আট জেলার মধ্যে:
নীলফামারী:
এ জেলায় প্রাণীর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ১৬৬টি পশুর। সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ১৫৭টি। এই জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬৫ হাজার ৯৫১টি কেরবানির পশু।
 
রংপুর:
এ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৫২টি। সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩১২টি। এ জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১লাখ ৩৮ হাজার ৫৬১টি। 

গাইবান্ধা:
জেলায় ১ লাখ ২৬ হাজার ৩০৫টি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তত করা হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৭টি। এ জেলায় চাহিদার চেয়ে ৬৯ হাজার ৯৭২টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। 

ঠাকুরগাঁও:
এ জেলায় ৭৫ হাজার ৩৬১টি কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তত করা হয়েছে ৯০ হাজার ৮৮৬টি। এই জেলায় চাহিদার চেয়ে ১৫ হাজার ৫২৫টি পশু বেশি রয়েছে।

পঞ্চগড়:
এ জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৯  হাজার ৮৫৬টি পশু। এ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৩০০টির। সেখানে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫৬টি পশু প্রস্তত করা হয়েছে। 

কুড়িগ্রাম:
২ লাখ ২২ হাজার ৮৪০টি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলায়। তবে সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৪৮৬টি পশু। চাহিদার চেয়ে এ জেলায় ১ লাখ ৭ হাজার ৬৪৬টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। 

লালমনিরহাট:
এ জেলায় চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৭টি পশুর। সেখানে প্রস্তত করা হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৬৩১টি। চাহিদার তুলনায় এ জেলায় ৯০ হাজার ৮৫৪টি বেশি রয়েছে। 

দিনাজপুর:
এই জেলায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৪৬টি কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৫টি পশু প্রস্তত করা হয়েছে। এই জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬৯ হাজার ৮৩৯টি।

রংপুর ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন বলেন, ‘আসন্ন ঈদুল আযহা ঘিরে কোরবানির জন্য রংপুর বিভাগে পর্যাপ্ত গরু ও ছাগল রয়েছে। একারণে বাহির থেকে গরু-ছাগল আমদানি করতে হবে না। বরং এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশু দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’

মিরাজ খান

×