ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড সহজের পরিবর্তে জটিল হচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ২৮ মে ২০২৫

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড সহজের পরিবর্তে জটিল হচ্ছে


সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ চুয়াডাঙ্গা সার্কেলের কর্মকাণ্ড সহজের পরিবর্তে জটিল হওয়ার
অভিযোগ উঠেছে। একই অনুমতির ক্ষেত্রে একই কর্মকর্তাকে একাধিকবার অনুমোদন দিতে হচ্ছে। নতুন কাজে কিছুটা গতি এলেও পুরাতন সব কাজে দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ছে। এ ধরনের নানা অভিযোগ করেছেন চুয়াডাঙ্গা সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা
ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন, করোনাকালীন অচলাবস্থাসহ থমকে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ডের ডাটা ঢাকায় গেলেও ‘রেডি ফর প্রিন্ট’ দেখাচ্ছে। এসব লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ছবির সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় কার্যালয় থেকে স্লিপ নিয়ে ঢাকার বনানী সদর কার্যালয়ে গিয়ে স্লিপের ওপর লিখিত অনুমোদন নিয়ে আবারও নিজ জেলায়
এসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হচ্ছে। যে কাজ নিজ জেলা থেকে অনুমোদন দেয়া সম্ভব। পেশাদার নবায়নের সময় পরিবহন চালকদের পিএসভি নবায়নের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু যে চালকরা যাত্রীবাহী বাস চালায় তাদের ক্ষেত্রে পিএসভি অপশন থাকছে না। সে কারনে চালকরা লাইসেন্স নিতে গিয়ে হয়রানী হচ্ছে। যেসব কাজে ‘রেডি ফর প্রিন্ট’ দেখাচ্ছে, প্রায় দেড় থেকে দু’বছর পেরিয়ে গেলেও সেসব পুরাতন স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট হচ্ছে না। যেখানে নতুন ইস্যুকৃত কার্ড এক মাসের মধ্যে দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয়ে গেলে পুরাতন আবেদনকারীরা আদৌ তাদের কার্ড পাবেন কিনা তার নিশ্চয়তা নেই।
কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার মোটরযান চালক গনি জানান, তিনি যাত্রীবাহী পরিবহন চালানোর জন্য তার ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনে পিএসভি অপশন দিলেও সেটা হেভি যানবাহন অপশন দেখাচ্ছে। সে কারনে তার লাইসেন্স আটকে আছে। একই কথা বলেন, ভুক্তভোগী সোহেল, মেহেরপুর জেলার রাজীব ও চুয়াডাঙ্গার ফরহাদ। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, যদি কার্ডের সংকট থাকে তাহলে তাদের অনলাইন স্লিপ কার্ড দিয়েও সাময়িক সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হলে অনেক ক্ষেত্রে এসব আবেদনকারীর তথ্য পাওয়া যাবে না বা হয়রানি শিকার হতে হবে।

অভিযোগকারীরা বলেন, ড্রাইভিং বিএসপি অনলাইন করার ক্ষেত্রেও জটিলতা রয়েছে। এছাড়া, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বোর্ডে একজন অতিরিক্ত সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় টেকনিক্যাল বিদ্যালয়ের একজন প্রশিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতি মাসের পরীক্ষার বোর্ডে তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানের ৫০-১০০ শিক্ষার্থী থাকে। সেক্ষেত্রে
অনিয়ম হওয়াটাই স্বাভাবিক। যারা বিআরটিএ থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক, যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও আছে। তারা এ কাজে দায়িত্ব পেলে অনিয়ম কমে যাবে। লাইসেন্স পরীক্ষার সময় বিআরটিএ অফিসের দালালরা পরীক্ষা নেয়ার মাঠ সাজানো, যন্ত্র নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও পালন করছে। সেসব ক্ষেত্রে বিআরটিএ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকদের দায়িত্ব দিলে তারাই সেগুলো করবে। এসব নিয়ম করা হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বলে
তারা জানান। এ অবস্থায় প্রশিক্ষকদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। সে কারনে বিগত সরকারের আমলের বৈষম্য থেকেই যাচ্ছে । জেলা ভিত্তিক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করা যাবে বলে তারা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে বিআরটিএ অফিসের প্রতিটি জেলা কার্যালয়ে একজন করে স্পীড গভর্ণর সিল ম্যাকানিক পদে কর্মরত আছেন। সেসময় সরকারী সকল নিয়ম মেনেই তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। সেসময় সার্কেল অফিসে এডি-ইন্সপেক্টর ছাড়া কোন পদে নিয়োগই ছিলো না। তখন পুরো জোনাল অফিসগুলোর সকল কাজের দেখভাল করতো সিল ম্যাকানিকরা। চাকরির এক পর্যায়ে ২০২৩ সালে তারা নিয়মিত করণের দাবীতে আদালতে রিট করে। যার নম্বর ২৩৮১। যেই রিটে সিল ম্যাকানিকদের পক্ষে রায় আসে। কিন্তু তা আজো বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক সিল ম্যাকানিক আছেন, যাদের বাস্তত অভিজ্ঞতা একজন মোটরযান পরিদর্শকের চেয়েও কম নয়। বাণিজ্যিক নতুন বড় মোটযানের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে স্পীড গভর্নর সিল বাধার নিয়ম আছে। তারা ওই পদে নিয়োগও দাবী করছেন। সিল ম্যাকানিকদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। অনেক সিল
ম্যাকানিকদের ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আছে। বিকল্প ব্যবস্থ না করে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে তারা চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপদে পড়বে। এমতবস্থায় বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য তাদেরকে এক দু’বছর সময় দিয়ে নোটিশ দিলে তারা হয়তো নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারবে।
ভুক্তভোগী সিল ম্যাকানিকরা প্রধান উপদেষ্টা ও যোগাযোগ উপদেষ্টার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা জানান, সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের চুয়াডাঙ্গা সার্কেল কার্যালয়ে দিন দিন সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সুনজর না দিলে আরো ভোগান্তির শিকার হবে সেবা গ্রহণকারীরা।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ চুয়াডাঙ্গা সার্কেলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গির আলম বলেন, এটা স্থানীয় বিআরটিএ’র সমস্যা না, এগুলো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সমস্যা। দীর্ঘদিন এ সমস্যা চলতে থাকলেও সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান সমস্যার সমাধান না করায় সারা দেশেই এ সংকট দেখা দিয়েছে। এখন যে প্রতিষ্ঠান কাজ করছে ,এরা চলে গেলে সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।
 

সাব্বির

×