ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী বর্মন হত্যা মামলায় কাওছারের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ২৭ মে ২০২৫; আপডেট: ১৮:৫০, ২৭ মে ২০২৫

বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী বর্মন হত্যা মামলায় কাওছারের মৃত্যুদণ্ড

ছবিঃ সংগৃহীত

নেত্রকোনার বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী বর্মন (১৬) হত্যা মামলায়  কাওছার মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়। মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ মোঃ হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামি কাওছার হাজতী হিসেবে আদালতে উপস্থিত ছিল।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, বারহাট্টা উপজেলার প্রেমনগর গ্রামের নিখিল চন্দ্র বর্মনের মেয়ে মুক্তি রানী বর্মন প্রেমনগর-ছালিপুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণিতে পড়ত। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের ইয়ুথ গ্রুপ এবং উদীচীর উপজেলা শাখার সদস্য হিসেবে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ছিল সে। কিন্তু একই গ্রামের শামছু উদ্দীন ওরফে শামছুর ছেলে কাওছার মিয়া (২০) তাকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রেম নিবেদন করত। মুক্তির কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর তার অভিভাবকরা বিষয়টি কাওছারের বাবা-মাকে জানান। এতে কাওছার আরও ক্ষিপ্ত হয়।

২০২৩ সালের ২ মে দুপুরে মুক্তি রানী বর্মন তার অন্যান্য সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুল থেকে ফিরছিল। স্থানীয় ঈদগাহ মাঠের কাঁচা রাস্তায় পৌঁছামাত্রই আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা বখাটে কাওছার তাকে তার সহপাঠীদের সামনেই ধারালো দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। কয়েক সহপাঠীসহ আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পরদিন নিখিল চন্দ্র বর্মন মামলা দায়ের করেন।

কাওছারের হামলায় মেধাবী মুক্তি রানী বর্মনের মৃত্যুর ঘটনাটি ওই সময় গোটা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। কাওছারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নেত্রকোনা জেলা সদর ও বারহাট্টা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা ও শিক্ষার্থীরা। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্থানীয় একটি জঙ্গল থেকে কাওছারকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরপর একই বছরের ৭ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবু সায়েম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

ঘটনার মাত্র দুই বছরের মাথায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুক্তির বড় বোন নিপা রানী বর্মন। ওই ঘটনার পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ নিপাকে নিজ কার্যালয়ের নেজারত শাখায় ‘আউটসোর্সিং স্টাফ’ হিসেবে চাকরি দিয়েছিলেন। এদিকে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের বারহাট্টা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সুরজিৎ ভৌমিক বলেন, ‘আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছিলাম। আদালত সে-রকম রায়ই দিয়েছেন। প্রতিটি চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ঘটনায় এভাবে দ্রুত রায় ঘোষিত হলে অপরাধ প্রবণতা কমবে। রাস্তাঘাটে স্কুলছাত্রীসহ নারীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।’
 

মারিয়া

×