ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কহর দরিয়া থেকে তুরাগ: এক নদীর বেদনার গল্প

রাহাত শেখ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, টঙ্গী, গাজীপুর

প্রকাশিত: ১৯:১২, ২২ মে ২০২৫

কহর দরিয়া থেকে তুরাগ: এক নদীর বেদনার গল্প

ছবি: সংগৃহীত

এক সময় টঙ্গীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া কহর দরিয়া নদী ছিল প্রাণের উৎস। ধ্বংসাত্মক প্রবাহের জন্য ‘ধ্বংসের নদী’ নামে খ্যাত এই জলধারা একসময় ছিল হাজারো মানুষের জীবিকার অবলম্বন। কালের পরিক্রমায় এই নদীর নাম বদলিয়ে হয়েছে তুরাগ, কিন্তু নদীর সেই প্রাণবন্ত চিত্র আজ হারিয়ে গেছে। বদলে এসেছে বিষাক্ত বর্জ্যে ভরা জলে নদীটির ভয়াবহ অবস্থা। নদীর স্রোত নিস্তব্ধ, তার পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি আর কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া।

‘কহর দরিয়া’ নামটি ছিল এই নদীর প্রাকৃতিক রূপের ইতিহাসবাহী সাক্ষী। বন্যার সময় এটি যেমন ভয়ঙ্কর, তেমনি তার স্রোত ছিল অসাধারণ শক্তিশালী। নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছিল জেলেদের বসতি, কৃষিজমি এবং নৌবন্দর। কহর দরিয়ার জলে ভেসে আসত জীবনের গন্ধ আর শান্তির ছোঁয়া।

কিন্তু আজ, নদীটির নাম হলেও তার পূর্বের সেই প্রাণ কেবল স্মৃতি রয়ে গেছে। তুরাগ নদী এখন বিষাক্ত বর্জ্যের স্রোত। কালচে-ধূসর পানি, ভাসমান প্লাস্টিকের আবর্জনা আর মৃতপ্রাণীর গন্ধ মিশে নদী যেন মৃতদেহের মতো নিস্তব্ধ।

এই সংকটের মূল কারণ প্রকৃতি নয়, বরং মানুষের অবহেলা। নদীর পাড়ে বেআইনি স্থাপনা এবং শতাধিক কারখানা প্রতিদিন সরাসরি বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, নদীর স্বাভাবিক স্রোত প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। স্থানীয় জেলে বাচ্চু মিয়া বলেন, “আগে মাছ ধরা খুব সহজ ছিল, এখন সারাদিন অপেক্ষা করলেও একটাও মাছ ধরা যায় না।”

২০১৯ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট তুরাগসহ সব নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাদের পক্ষে মামলা করার অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতায় এই আইনি সত্তা কার্যকর হয়নি। নদী রক্ষায় গঠিত কমিটি সত্ত্বেও কাজের অভাবই বেশি।

স্থানীয়রা বলছেন, নদী শুধু পানি নয়, এটি জীবনদায়ী ধারা। তুরাগ যদি মরে যায়, তা শুধু টঙ্গীর নয়, এই অঞ্চলের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য এক ভয়ঙ্কর সংকট।

নদীকে বাঁচাতে এখন সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, নয়তো একদিন এই নদী শুধুই হয়ে থাকবে এক স্মৃতি—মৃত্যুপথের নিঃসঙ্গ পথে হাঁটছে একসময়কার প্রাণভরা কহর দরিয়া।

আলীম

×