ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

খুলনায় সালাহউদ্দিন আহমদ

দুই উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে  অপসারণ করুন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১৭ মে ২০২৫

দুই উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে  অপসারণ করুন

খুলনায় ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠে শনিবার তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ইতোমধ্যে কিছু কিছু উপদেষ্টা আপনার নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন করে উচ্চাভিলাষ প্রকাশ করছেন। তাদের উদ্দেশ্য অনিদিষ্টকাল পর্যন্ত যেন অনির্বাচিত এই সরকার থাকতে পারে। আপনাদের কী উদ্দেশ্য অবশ্য আমরা জানি না। যদি কোনোদিন নির্বাচনের দাবিতে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘেরাও করতে হয়, তা হবে আমাদের জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।

আপনি কী চান- এই নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক। এদেশের জনগণ সংশয় প্রকাশ করুক। এদেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক। হুঁশিয়ার করে দিতে চাই- প্রফেসর ডক্টর ইউনূস সাহেব! আপনি বিশ্ববরেণ্য। বিচার ও সংস্কারের বাহানা দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে কণ্টকাকীর্ণ করবেন না। যাদের কথায়, যাদের পরামর্শে আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের আপনার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণ করুন।

আমরা আগেই বলেছিলাম, আপনার উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আছে। আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম। এখন কিছু বিদেশি দোসর আছে- আমরা এখন তাদের অপসারণের কথা বলছি। আর যারা এনজিও মার্কা উপদেষ্টা আছে, যারা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে- ‘বাংলাদেশের জনগণের কথা শোনার প্রয়োজন নাই’। তাদের আপনি অপসারণ করুন। না হলে আপনি সসম্মানে বিদায় নিতে পারবেন কিনা - আমি অন্তত সংশয়ে।
শনিবার বিকেলে খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ছাড়াও গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্র-যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিনিধিরা সমাবেশে যোগ দেন। 
তিনি আর বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাংবিধানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু মনে করবেন না, রোজকেয়ামত পর্যন্ত আপনাদেরকে আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইব। আপনার সরকার, এখন মানুষ বলছে ‘এনসিপি মার্কা সরকার’। আপনার সরকারে এনসিপির দুইজন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা, তারা আবার এনসিপির সংগঠন করেন। অফিসিয়ালি করে না।

কিন্তু সবাই সবকিছু জানে। ওপেন-সিক্রেট! যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান- তাহলে সেই এনসিপি মার্কা দুইজন উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলুন। যদি পদত্যাগ না করে আপনি বিদায় করুন।’  এ সময় তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। একজন বিদেশি নাগরিক এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করবে- কিভাবে ভাবলেন। তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চান।

বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেননি। এদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করেননি। অত্যন্ত ‘এ্যারোগ্যান্টলি’ আপনার সেই উপদেষ্টা বলছে, ‘তাতে নাকি কিছু যায়-আসে না’। এই জনসভা থেকে দাবি করছি, সেই জাতীয় উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয় নিজে পদত্যাগ করবেন, না হয় আপনি তাঁকে বিদায় করবেন।

এদেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব দায়িত্ব বিদেশি নাগরিকের কাছে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে  বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য। আমরা তা হতে দেব না।’ 
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই দেশের বন্দর, করিডর সবকিছু নাকি ইউনূস সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে। বিদেশি আপনি কী কণ্ঠে আর্জি করে এসেছেন জানিনা। আপনি অবলিলা ক্রমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর, নদী বন্দর, করিডর সব বিদেশির হাতে হস্তান্তর করবেন। কী চুক্তি করে এসেছেন? কী এখতিয়ার আছে আপনার? কী ম্যান্ডেট নিয়ে এসছেন! আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট- বাংলাদেশে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন করা।

আমরা বলেছিলাম, যথেষ্ট হয়েছে। নির্বাচনমুখী যেই সমস্ত জরুরি সংস্কার করা দরকার, সেই সমস্ত জরুরি সংস্কার আমরা যা পরামর্শ দিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের  ভেতরে এই জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন। আবার আপনি সরে গেলেন। আপনি মনে করছেন, আপনাকে জনগণ অসীম ক্ষমতাসীন বানিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলসমূহের কোনো পরামর্শ আপনার মানার দরকার নাই। যদি তাই মনে করেন; আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ হবে। 
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশে খুনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতিসংঘ স্বীকৃত খুনি শেখ হাসিনার মাধ্যমে। গণতন্ত্র হরণ করে ১৪শ’ মানুষকে হত্যা করেছে। এত গণহত্যার পরও আওয়ামী লীগ কোনো ক্ষমা চায়নি, দুঃখ প্রকাশ করেনি। বরং দিল্লিতে বসে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের দায়ী করছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস গণতন্ত্র ধ্বংসের ইতিহাস।

বাকশাল গঠনের মধ্যে দিয়ে তাদের প্রথম রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে। তারা গত ১৭ বছরে হাজার হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা, গুম, অপহরণ ও গণতান্ত্রিক অধিকারহরণসহ সীমাহীন নির্যাতন করেছে। আর এভাবে তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটিয়েছে। তাদের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায় আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে। আমরা বিশ্বে ফ্যাসিবাদী দলের মতো তাদের বিচার চেয়েছিলাম। আইন সংস্কারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার অনেক জল ঘোলা করে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজেদের কর্মকা-ে নিজের মৃত্যু ডেকে এনেছে। 
সালাহউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগ শাসনামলে মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে মেগা লুটপাট, অর্থপাচার, ব্যাংক ধ্বংস, বৈদেশিক ঋণের পাহাড় রেখে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রকাশ কমিটি ৪ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ, প্রতিবছর ৭ লাখ কোটি টাকা পাচার, মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। 
বেলা সাড়ে ৪টায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন। সমবেশ সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। 
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুর বারী হেলাল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান মন্টু, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। সমাবেশে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রায় সকল জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যরা বলেন, তরুণরা এখনো মাঠ ছাড়েনি। তাই আগামীতে দেশের যে কোনো ধরনের সংকটে যারা রাজপথে নামবে। ষড়যন্ত্রে পা দিলে ছাত্রলীগের মতো তাদের দেশছাড়া করা হবে। কেউ যদি ছাত্রলীগকে জায়গা করে দিতে চায় তাহলে তাদের প্রতিহত করা হবে। এ সময় অন্যান্য নেতারা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

একইসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়েও সমালোচনা করেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ। এ সময় নেতারা ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করারও সমালোচনা করেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সেগুলো পুনর্জীবিত করারও আশ্বাস প্রদান করেন।

×