
ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে বিএনপির ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ইশরাক সমর্থকদের লং মার্চে বাধা দেয় পুলিশ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরও শপথ অনুষ্ঠানে গড়িমসি করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে শনিবার তৃতীয় দিনের মতো ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবন অবরুদ্ধ করে রাখে তার সমর্থকরা। দাবি আদায়ের জন নগর ভবনের প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন স্থানে মোট ৬৫টি তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে নগর ভবনে কেউ প্রবেশ ও বের হতে পারছে না।
অন্যদিকে মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে শনিবার সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে তার সমর্থকরা। ডিএসসিসি ভবনের সামনে থেকে লংমার্চ গুলিস্তান মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ এতে বাধা দেয়।
ইশরাক হোসেন জানান, শপথ গ্রহণের দাবিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে আমি বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলাম। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস প্রশাসনের সহযোগিতায় অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিজয়ী হন। ভোটারবিহীন কেন্দ্রে ইভিএম দখল করে ভোটগ্রহণ করা হয়।
নির্বাচনের পরদিন ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে, নির্বাচন কমিশন তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। এর বিরুদ্ধে ইশরাক হোসেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তিনি ওই গেজেট বাতিল করে নিজেকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করার আবেদন জানান।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ রায় ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের ২০২০ সালের গেজেট বাতিল এবং ইশরাক হোসেনকে বৈধভাবে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এই রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল নতুন গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ইশরাক বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে এবং তার নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হলে, ৩০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু গেজেট প্রকাশের পর প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও শপথগ্রহণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আইনের স্পষ্ট বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন অবিলম্বে আমাকে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগে আবেদন ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পাঠ করানোর জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেন। শনিবার এই আবেদন করেন তিনি। এতে গত ২৭ মার্চের রায় ও নির্বাচন কমিশন থেকে প্রকাশিত গেজেট যুক্ত করা হয়।
ডিএসসিসি নগর ভবনে তালা ॥ শনিবার ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা একই দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে নগর ভবনের দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার নগর ভবনের প্রধান দুই ফটকে তালা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শনিবার সকালেই নগর ভবনে ঢোকার সব কয়টি ফটক আর সিঁড়িতে তালা ঝোলানো হয়। বন্ধ করা হয় ভবনে ওঠানামার সব কয়টি লিফট।
ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে গত বুধবার থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে তার সমর্থক ও অনুসারীরা। কর্মসূচিতে অংশ নেয়া বিক্ষোভকারীরা জানান, তারা নগর ভবনে মোট ৬৫টি তালা লাগিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ॥ উচ্চ আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তার সমর্থকেরা। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ডিএসসিসির নগর ভবনের সামনে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচিতে এই দাবি জানানো হয়। এই কর্মসূচি থেকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ডিএসসিসির নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ইশরাকের অনুসারীরা।
লংমার্চ কর্মসূচিতে বাধা ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে শনিবার সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে তার সমর্থকরা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএসসি ভবনের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু করা হয়। মিছিলটি গুলিস্তান মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ এতে বাধা দেয়।
বাধা পেয়ে মিছিলটি নগর ভবনের সামনে ফিরে যায়। ব্যারিকেডের কারণে সচিবালয়ের দিকে যেতে পারেননি ইশরাক সমর্থকরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে-‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না’, ‘অবিলম্বে ইশরাক হোসেনের শপথ চাই’, ‘জনতার মেয়র ইশরাক ভাই, অন্য কোনো মেয়র নাই।’