
নিহত আলোকচিত্রী নুর ইসলাম | ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর জাফরাবাদে এক পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২৬ বছর বয়সী আলোকচিত্রী নুর ইসলাম। ১৫ বছর বয়স থেকে ছবি তোলার কাজ শুরু করা নুর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেই পেশাকেই কাজে লাগিয়ে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ডেকে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে।
নিহত নুর ইসলামের স্বজন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় জাফরাবাদের দুর্গামন্দির গলির পাশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছবি তোলার কথা বলে নুর ইসলামকে সেখানে ডেকে পাঠানো হয়েছিল এবং অগ্রিম হিসেবে তার মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকাও পাঠানো হয়। তবে তদন্তে জানা গেছে, এটি ছিল নিছক একটি ফাঁদ, নুর ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যেই দুর্বৃত্তরা এই পরিকল্পনা করেছিল।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক তদন্তে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। ঘটনার পর স্থানীয়দের সহায়তায় রক্তাক্ত অবস্থায় নুর ইসলামকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার নিহত নুর ইসলামের বড় ভাই ওসমান গনি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওসমান গনি জানান, তার ভাই অবিবাহিত ছিলেন এবং ধানমন্ডির শংকর এলাকায় মেসে থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। ঘটনার দিন দুপুরে নুর ইসলাম তাকে ফোনে জানান যে জাফরাবাদের দুর্গামন্দির গলিতে একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছবি তোলার প্রস্তাব পেয়েছেন এবং এর জন্য অগ্রিম টাকাও পেয়েছেন।
সন্ধ্যায় নুর ইসলামের ফোন বন্ধ পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তারা তার লাশ শনাক্ত করেন। ঘটনার সময় নুর ইসলামের সাথে থাকা দুটি ক্যামেরা পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, নুর ইসলামের সাথে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না বলে তাদের জানা।
বরিশালের আগৈলঝাড়ার সুজনকাঠীর বাসিন্দা নুর ইসলাম চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন। প্রায় ১৬ বছর আগে বড় ভাই ওসমান গনি তাকে ঢাকায় নিয়ে এসে একটি ছাপাখানায় কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ১৫ বছর বয়সে ফটোগ্রাফির কাজ শেখার পর তিনি মেসে থাকা শুরু করেন এবং গ্রামের বাড়িতে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওসমান গনি বলেন, প্রতি বছর দুই ভাই ঈদে একসাথে গ্রামে যেতেন, কিন্তু এবার সেই সুযোগ আর রইল না। দুর্বৃত্তরা তার ভাইকে চিরতরে কেড়ে নিয়েছে।
হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল আজিজ সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নুর ইসলামের শরীরে একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, যার মধ্যে বাম কান প্রায় বিচ্ছিন্ন এবং ঘাড় ও কাঁধে গভীর ক্ষত রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, নুর ইসলামের কাছে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম জানান, হত্যাকাণ্ডে অন্তত পাঁচ-ছয়জন অংশ নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের পর নুর ইসলামের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সাব্বির