
শীতল পাটি
গরমে শীতল পরশ দেওয়া বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের শীতল পাটি। আগের চেয়ে দাম ও দেশ জুড়ে চাহিদা বেশি বাড়ায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অনেকটাই উচ্ছ্বসিত। তবে উৎপাদন খরচের চেয়ে পাইকারী মূল্য তেমন না থাকায় দেশে বাজার সৃষ্টি ও অগ্রগতিতে সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন পাটি শিল্পীরা। চাহিদা কমলেও নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পাটি তৈরি করছেন অনেকে।
এটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যগত কুটির শিল্প। মুর্তা বা পাটি বেত বা মোস্তাকনামক গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের ছাল থেকে এটি তৈরি হয়ে থাকে। গ্রামে মাদুর ও চাদরের পরিবর্তে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধানঘড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া ও দরবস্ত হচ্ছে শীতল পাটির গ্রাম। গ্রামের আশপাশ জুড়ে থাকা জমিতে হয়েছে পাটি তৈরির প্রধান উপকরণ বেত চাষ। এখান থেকে এ বেত সংগ্রহ করে গ্রামগুলোতে নানা প্রক্রিয়ায় শীতল পাটি নিখুঁত বুননে আটঘরিয়া ও দরবস্ত গ্রামের কর্মব্যস্ত নারী-পুরুষ।
শীতল পাটির বিছানায় সুখ খুঁজতেন মানুষ” কালক্রমে এর কদর কমলেও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ধানগড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া ও দরবস্ত গ্রামে শতাধিক পরিবার এখনও এ পাটি তৈরি ও বিক্রিতে জড়িত। শীতল পাটি নাম শুনলেই যেন দেহে শীতল অনুভূতি তৈরি হয়। নিপুণ হাতে নারীরা বোনেন শীতল পাটি। নানা নকশার এ পাটির কদর দেশজুড়ে। দুই দশক আগেও গ্রীষ্মকালে গ্রামের ঘরে ঘরে এর অনেক ব্যবহার ছিল।
উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া ও দরবস্ত গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। একসময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা অগ্রিম টাকা দিয়ে শীতল পাটি তৈরি করে নিতেন। সংসারের কাজের ফাঁকে বাড়ির নারীরাই তৈরি করতেন নান্দনিক পাটি। এলাকাগুলোতে কয়েক দশক আগেও আয়ের প্রধান উৎস ছিল শীতল পাটি। গরমে প্রশান্তি পেতে শীতল পাটি ব্যবহার করলেও বিয়ে, গায়ে হলুদ, খাৎনাসহ নানা অনুষ্ঠানে এর ব্যাপক ব্যবহার ছিল। এখন তা অনেকটাই কমে গেছে।
ধানগড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া গ্রামের টুম্পা রানী সরকার বলেন, একটি পাটি বানাতে অন্তত সাত দিন সময় লাগে। বিছানায় ব্যবহারের একেকটি শীতল পাটি বিক্রি হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। দিন দিন চাহিদা কমায় তারাও কম তৈরি করছেন। একই এলাকার বুলবুলি রানী সরকার বলেন, শীতল পাটির উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম বাড়ছে না।
মানুষের চাহিদা দিন দিন কমছে। তবুও নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তৈরি করছেন। আগে গ্রামের হাটে পাটির কদর থাকলেও এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে আসায় গরমেও ব্যবহার কমেছে। এখন গাজীপুর, ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকার এসে পাটি নিয়ে যান। পাটির তৈরির কারিগররা বলেন, অনেকে পুঁজির অভাবে কাজ কম করে। চাহিদা কমতে থাকা এবং কারিগরদের পুঁজির অভাবে এ কাজে মানুষের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে।
পাটির চলতি প্রধান মৌসুমে বাজার চাঙ্গা থাকায় উঠান ও ঘরের বারান্দায় হরেক নকশায় বুননে দিন-রাত পাড় করছে শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সীরা। বর্তমানে প্রতিটি পাটি পাইকারী বিক্রি হচ্ছে হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা মূল্যে। এতে মজুরি বাদে তেমন লাভ না হওয়ায় অন্য দেশে বাজারজাতসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করলেন পাটিশিল্পীরা। সনাতন ধর্মালম্বী এসব এলাকার প্রায় দেড় সহস্রাধিক মানুষের এখনও প্রধান পেশা এ শীতল পাটি ব্যবসা ও বুনন।
যেখানে নারীরাও জীবিকা খুঁজে পেয়েছেন। তবে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্বল্প মজুরিতে অসন্তষ্ট তারা। পাশাপাশি এ শিল্পে প্লাস্টিকের পাটির বিরুপ প্রভাব পড়েছে। চলতি গ্রীষ্মের প্রধান মৌসুমে শীতল পাটির চাহিদা বেশ, বললেন পাটিশিল্পীরা।