
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা ফলের রাজ্য হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর এই উপজেলায় ৫০ কোটি টাকারও অধিক ফল বিক্রি হয়। বিশেষ করে আম, জাম, কাঠাঁল, লিচু, পেয়ারা, আনারস, মাল্টা, কমলা, আখ, কুল ইত্যাদি প্রচুর পরিমানে উৎপাদন হয়।
উপজেলাটি সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা হওয়ায় কৃষিনির্ভর ঐতিহ্যবাহী অর্থনৈতিক এ উপজেলাকে অধিক অর্থের লোভে অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে কুলশিত করছে একটি মহল।মাদক
বিজয়নগর উপজেলা ভারতের সঙ্গে ৩৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দীর্ঘ সীমান্ত থাকার সুবাদে এখানকার বাসিন্দাদের একটি অংশ মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।গাজা,ফেন্সিডিল,ইয়াবা,বিদেশি মদ,হেরোইন,স্কফ সিরাপ অবৈধ ভাবে মাদক ব্যবসায়ীরা আমদানি করছে, মাদকের এই বয়াল থাবায় ধ্বংস হচ্ছে কিশোর, তরুণ ও যুব সমাজ। এর থেকে বাদ পড়ছে না শিশুরাও। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় পাড়ায় পাড়ায় মাদক সেবনের স্পট রয়েছে। রাস্তার পাশে, স্কুলের মাঠে, ব্রীজ কালভার্টের নিচে, রেললাইনের পাশে, খোলা মাঠে এমন কি পবিত্র কবরস্থানেও পাওয়া যায় স্কোপ এবং ফেন্সিডিলের খালি বোতল। প্রতিদিন বিকালে জেলা সদর থেকে শতশত মোটরসাইকেলে মাদকাসক্তরা সীমান্ত এলাকায় আসে মাদক সেবন করতে। কেউ খেয়ে চলে যায় আবার কেউ সাথে করে নিয়েও যায়। অপরদিকে বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা এলাকায় তৈরী হচ্ছে দেশীয় মদ। এগুলো প্রকাশ্যে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। কাউকে মাদক বিক্রি ও বহন করা অবস্থায় পেলে থাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
চোরাচালান
বিজয়নগরের সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত ঢুকছে ভারতীয় পণ্য। এসব পন্যের মাঝে রয়েছে উন্নতমানের মোবাইল, ডিসপ্লে, সানগ্লাস, কসমেটিকস, খেলনা, থ্রি-পিস, শাড়ি, চিনি, জিরা, গরু, ছাগল, দুম্বা, মহিষ, মোটর সাইকেল ইত্যাদি। এছাড়াও অবৈধ ভাবে বিএসএফ ভারতীয় নাগরিকদেরকে বাংলাদেশে পুশইন করছে এবং পুশইন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও রাতের আধারে অবৈধভাবে কাঁটাতার পেরিয়ে ভারত যাচ্ছে বাংলাদেশী নাগরিক।
২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ বলেন, বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে আমরা সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছি। সীমান্তবর্তী এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।মাটি কাটা
ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ট্রাক্টর দিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এভাবে জমির মাটি কাটার ফলে আবাদি জমির উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে মাটির জৈব গুণাগুণ, নিচু হয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি। উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় ইট পুড়ানোর মৌসুম শুরুর আগে থেকেই শুরু হয় ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার প্রতিযোগিতা। পরিবেশের জন্য হুমকি সরূপ এসব ইটভাটার কালো ধোয়ায় ক্ষতি হচ্ছে নারিকেল গাছ এবং ধানের জমি। ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুরের ন্যায় গভীর করা হচ্ছে ফলে জমি তার উর্বর গুনাগুন হারাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিজয়নগর উপজেলায় আবাদযোগ্য কৃষি জমি থেকে রাতের আঁধারে স্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে করে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২৫টি ইটভাটা থাকায় এখানে মাটির চাহিদাও বেশি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জিয়াউল ইসলাম জানান, ইটভাটার ধোয়ার কারনে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ধানের জমি নষ্ট হওয়ার কারনে ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন ইটভাটার মালিককে জরিমানা করেছি। তাছাড়া ফসিল জমির উপরিভাগের মাটি উর্বর থাকে। উপরিভাগের মাটি কেটে নিলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাধনা ত্রিপুরা জানান, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। স্পটে অপরাধী পাওয়া গেলে মোবাইল কোর্টে মামলা দিয়ে জরিমানা করছি আর পাওয়া না গেলে থানায় নিয়মিত মামলা দিচ্ছি।
রাজু