
সংরক্ষিত বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো করাতকল স্থাপন করা যাবে না, এমনটাই বলা আছে ২০১২ সালের করাতকল লাইসেন্স বিধিমালায়। কিন্তু এই বিধান অমান্য করে কক্সবাজার জেলার উত্তর বন বিভাগের অধিকাংশ বনভূমির চারপাশজুড়ে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ করাতকল। সেখানে নির্বিচারে চিরাই হচ্ছে বনের কাঠ।
এসব করাতকলের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশই গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক ও বন কর্মকর্তাদের ছত্রচ্ছায়ায়। এ কারণে অবৈধ এসব করাতকলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শুধু রামু উপজেলার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ৪০ থেকে ৫০টির বেশি অবৈধ করাতকল। এসব করাতকলের অধিকাংশই অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে চলছে। উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, কাউয়ারখোপ, জোয়ারিয়ানালা, খুনিয়াপালং, মিঠাছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা এসব করাতকলে প্রতিদিন চিরাই হচ্ছে মেহগনি, সেগুন, গোদা, জারুল, লালমনিসহ বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান কাঠ।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, করাতকলগুলোতে চিরাই হওয়া মোট কাঠের প্রায় ৬০ শতাংশ কক্সবাজারের দক্ষিণ ও উত্তর বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি থেকেই আসে।
অবৈধ করাতকলগুলোতে প্রকাশ্যে বনের মূল্যবান কাঠ চিরাই হলেও স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ নীরব। আইনে স্পষ্টত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা ফরেস্টারদের করাতকল পরিদর্শনের ক্ষমতা দেওয়া হলেও দৃশ্যত কোনো প্রকার অভিযান রামুতে চোখে পড়ে না। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় জনমনে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামুর এক করাতকল মালিক বলেন,করাতকল চালাতে প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট ফরেস্ট অফিস, প্রশাসন থেকে শুরু করে নেতাদেরও টাকা দিতে হয়। লাইসেন্সের আবেদন করলেও লাইসেন্স মেলে না।
রাজারকুল রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ও রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: অভিউজ্জামান বলেন, এখানে সব অবৈধ করাতকল এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বন মামলা দায়ের করা আছে। উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অতি দ্রুত উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বাঁকখালী রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ও রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ আল আমিন বলেন, এই অবৈধ করাতকলের বিষয়ে ডিভিশন অফিস থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে অতি দ্রুত উচ্ছেদ করতে সক্ষম হবো।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমির কাছেই গড়ে উঠেছে করাতকল। অবৈধ এসব করাতকলে দিনদুপুরে চলছে বনের কাঠ চিরাই। এ দৃশ্য দেখেও দেখছেন না বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
রামুর একটি করাতকল লাইসেন্স না থাকার পরেও কী ভাবে করাতকলে বনের কাঠ চিরাই হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ মারুফ হোসেন বলেন, একবার উচ্ছেদ করলে আবার করাতকল বসায় অসাধু ব্যবসায়ীরা। আমরা ম্যাজিস্ট্রেট পেলেই অবৈধ করাতকলগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাব। অনেক জায়গায় চাহিদা থাকলেও আইনি জটিলতায় করাতকল লাইসেন্স দিতে না পারার কথাও জানান এই কর্মকর্তা।
দিনের পর দিন অবৈধ করাতকলের সংখ্যা বাড়তে থাকলে কক্সবাজারের উত্তর বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমির বড় অংশ অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রামু উপজেলা শাখার সভাপতি মাষ্টার মোহাম্মদ আলম বলেন, বন ভূমি যা দরকার তার তুলনা অর্ধেকই নাই। এই অবৈধ করাতকল কই টা আছে বৈধ করাতকল কই আছে আমি দাবী করতে চাই। অবৈধ করাতকল কারণ বন ভূতি থেকে নিধন করা হচ্ছে। অতি দ্রুত এই অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করার দাবী জানাচ্ছি।
স্থানীয়রা বলেন, অচিরে এই অবৈধ করাতকল বন্ধ করা না গেলে বন রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। মূলত স্থানীয় প্রশাসন ও বনকর্মীদের সহযোগিতা না থাকলে এসব করাতকল কোনোভাবেই চলতে পারে না। এভাবে দিনের পর দিন রামুতে অবৈধ করাতকল বাড়তে থাকলে রামু বনশূন্য হয়ে যাবে
মুমু