
পুলিশের হামলার বিচার ও তিন দফা দাবি আদায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা
দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে নামা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইস উদ্দিন।
বৃষ্টির মধ্যেও গত দুদিন ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচিতে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থান করছেন। অবস্থান কর্মসূচি পালন করায় অনেক শিক্ষার্থী ক্লান্ত হলেও আন্দোলন থেকে সরে আসেননি কেউ। কেউ কেউ বুধবার রাতভর রাস্তায় ঘুমিয়ে ও বসে কেটেছেন। আর বৃহস্পতিবার সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৩০টি একতলা ও দোতালা বাসে করে বর্তমান শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীরা এসে আন্দোলতরতদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
সেখানে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল। এই কর্মসূচিতে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করা হয়। রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন।
এদিকে প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনের সামনে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে নতুন করে গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন শত শত শিক্ষার্থী। দুপুর সোয়া ১২টা থেকে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। তারা জানান, সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া ঝড়-ঝঞ্ঝা বা কোনো রক্তচক্ষু তাদের রাজপথ থেকে সরাতে পারবে না। দাবি পূরণ করেই তারা ঘরে ফিরবেন।
জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, শিক্ষার্থীদের বুধবার তিন দফা দাবির সঙ্গে নতুন আরও এক দাবি যুক্ত হয় বৃহস্পতিবার। নতুন দাবিটি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। আন্দোলনকারীরা জানান- ৭০ শতাংশ আবাসন ভাতা, বাজেটে বৃদ্ধি এবং সব প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়ার তিন দফা দাবি নিয়ে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ টু যমুনা’কর্মসূচি।
বুধবার সারা রাত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার মোড়ে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আর প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাও এই সময়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেনি। মাইকে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।
রাত ৮টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মোড়ে এখনো অবস্থান করছেন। তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। উপদেষ্টা ও তার সংশ্লিষ্টরা সার্বক্ষণিক আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। অচিরেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পর বিকেলে জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেন জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইস উদ্দিন। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকারের দাবি নিয়ে এসেছি। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মদদে আমাদের ওপরে বুধবার নির্বিচারে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অরাজকতা ও অন্যায়।
আমরা কারও বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি, কোনো ষড়যন্ত্র করতেও আসিনি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না। যতক্ষণ দাবি মেনে না নেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন থাকবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষা-পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে না। দুদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন বিক্ষোভকারীরা। এতে যান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।
ভয়াবহ যানজটে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আর এই ভোগান্তি কমাতে ঢাকায় কিছু এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সর্ব সাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সম্প্রতি উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্সের (অর্ডিন্যান্স নং-ওওও/৭৬) ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে ১৫ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেট, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ এর প্রবেশ গেট, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের সম্মুখে সব প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো। এ ছাড়া বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে যখন-তখন সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে পুনরায় অনুরোধ করা হলো।