
সাগরপারের জনপদ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ২৯টি রাখাইন পল্লীর দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থানের সরকারি উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। এসব রাখাইন নারীদের কর্মসংস্থানে কুয়াকাটায় ১৬ কক্ষের মহিলা মার্কেট উদ্বোধনের ২১ বছর পরও বাকি কাজ শুরু হয়নি। কবে নাগাদ নির্মাণ কাজ শেষ করে মার্কেটটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে তা কেউ বলতে পারছে না। উলটো পায়রা বন্দও নির্মাণে এরই মধ্যে পুনর্বাসন ছাড়াই একটি রাখাইন পল্লী (ছআনিপাড়া) সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ১৯৯৯ সালে মার্কেটটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। আরডিপি-১৬ এর জিওবির ফান্ডের সহায়তায় দুই শ’ ৫০ কক্ষের দ্বিতল ইউটাইপ রাখাইন মহিলা মার্কেটটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। রাখাইন গরিব মহিলাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কুয়াকাটায় এ মহিলা মার্কেটটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেরানিপাড়ার রাখাইন জনগোষ্ঠী মার্কেট করার জন্য পয়োজনীয় জমি দান করেন। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে প্রথম দফায় ১৯টি কক্ষের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র ১৬টি কক্ষ নির্মাণ করা হয়। ২০০৩ সালে ১৬টি কক্ষ বরাদ্দ দিয়ে মার্কেটটি চালু করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত বাকি কক্ষের নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কলাপাড়ার প্রকৌশলীরা কিছুই জানাতে পারেন নি। ফলে গরিব রাখাইন নারীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন চরম অনিশ্চয়তায় ঝুলে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এটির বাস্তবায়ন ভেস্তে গেছে। এ মার্কেটটি না করায় দরিদ্র রাখাইনরা বিভিন্ন পাড়ায় তাদের টংঘরের নিচে জীর্ণদশায় বুনছেন কাপড়সহ উলের সামগ্রী। যা ন্যায্যমূল্যে বিক্রির সুযোগ পায় না। ফলে গরিব রাখাইন নারীরা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন।
কেরানীপাড়ার বাসিন্দা লুমো রাখাইন জানান, এই মার্কেটটি চালু করলে তাদের অনেক উপকারে লাগতো। এসব রাখাইনরা তাদের কর্মসংস্থানের যুগান্তকারী উদ্যোগটি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কারণ ১৯৯৮ সালে সরকারিভাবে কুয়াকাটা পর্যটন এলাকাকে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন এখানকার আদিবাসী রাখাইনদের জীবনমানের উন্নয়নে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আড়াইশ’ কক্ষের রাখাইন মহিলা মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। পরবর্তীতে নির্মিত ১৬কক্ষের মার্কেটটির উদ্বোধন করা হয়। বাকি কক্ষের নির্মাণ কাজ আর হয়নি। এখন মহা অনিশ্চয়তায় পড়েছে রাখাইন মহিলা মার্কেট নির্মাণ কাজ।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাখাইন মংম্যা জানান, বর্তমানে এই উপজেলার ২৮টি রাখাইন পল্লীর শতকরা ৮০ ভাগ পরিবার দরিদ্র। তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এ মার্কেটটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা দরকার।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, রাখাইনদের জীবনমান উন্নয়নে ওই মার্কেটটি বহুতল করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাখাইনদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের পক্ষে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
সজিব