ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সৈয়দপুরে ইটভাঁটির ধোঁয়ায় পুড়ছে চাষির স্বপ্ন

নিজস্ব সংবাদদাতা, সৈয়দপুর

প্রকাশিত: ২০:৫২, ৭ মে ২০২৫

সৈয়দপুরে ইটভাঁটির ধোঁয়ায় পুড়ছে চাষির স্বপ্ন

ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা

সৈয়দপুরের পল্লীতে  ইটভাঁটির বিষাক্ত ধোঁয়ায় দশ একর জমির ফসল পুড়ে গেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। 
জানা যায়, উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের কোচারপাড়া এলাকায় কৃষিক্ষেতে গড়ে উঠেছে তানিয়া ব্রিকস লিমিটেড (টিবিএল) নামে একটি অবৈধ ইটভাঁটি। সেই ভাঁটির পাশের জমিতে চলতি মৌসুমে চাষাবাদ করা হয়েছে ইরি-বোরো ধান। বর্তমানে ওই সকল ক্ষেতের ধান কাঁচাপাকা। সবুজ আর হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। তবে দূর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে পাকা ধানের ভেতরে চাল নেই। রয়েছে চিটা।

সংলগ্ন ভাঁটির বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে চিটা হয়ে গেছে। রাকিবুল ইসলাম নামে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, এখানে কৃষি জমিতে ইটভাঁটি করা হয়েছে। সেটা কতটুকু বৈধ? আমরা জানি না। এর কালো ধোঁয়ায় প্রতি ইরি-বোরো মৌসুমে ক্ষতির শিকার হই। আকাক্সিক্ষত ফসল পাই না। এ নিয়ে অভিযোগ করলে তারা গালাগাল করে। বিশেষ করে ওই ভাঁটির ম্যানেজার ও কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়টি এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে জানালে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ক্ষতির শিকার হলেও সান্ত¡নাও দেননি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও সুরাহা না পেয়ে বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেই। এবার সেখানে থেকে খালি হাতে ফিরলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। 
কৃষক ওবায়দুল ও তার স্ত্রী জাহিদা খাতুন বলেন, আমরা গরিব মানুষ। এক দোন (৩০ শতক) জমির আবাদ দিয়েই আমাদের সারা বছরের ভাতের জোগান হয়। কিন্তু ইটভাঁটির কারণে ভালোভাবে চাষাবাদ করতে পারি না। ভাঁটির ধোঁয়ায় প্রতিবছর ধান নষ্ট হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এবার ক্ষতিপূরণ না পেলে সারাবছর না খেয়ে থাকতে হবে। কারণ চাল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই।

ধরিয়া নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত চাষি বলেন, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। এবার করেছি ৩০ শতক। সেখানে ধান চাষ করায় চিটার কারণে ব্যয় উঠবে না। এখন আমরা ভাঁটির মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইলে চাঁদাবাজ বলে গালামন্দ করছে। এমন অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত সকল কৃষকের। 
জানা যায়, এই ভাঁটির পাশে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জামিয়া মাদ্রাসা, রেশম বোর্ডের চাকী পশুপালন কেন্দ্র। যা ভাঁটি স্থাপন নীতিমালার পরিপন্থি। এই ভাঁটির কারণে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ সমস্যা হচ্ছে। সঙ্গে আবাসিক এলাকার ফলদ গাছের ফলন কমে গেছে। তাই এখান থেকে ভাঁটিটি অপসারণ জরুরি বলে মতামত প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। আজিজুল কবির নামে ভাঁটির ম্যানেজার বলেন, ভাঁটির ধোঁয়ায় ধানের ক্ষতি হয়নি।

প্রাকৃতিক কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। আহসান হাবীব সাজু নামে ওই ইটভাঁটির মালিক বলেন, ভাঁটির ধোঁয়ায় ধানের ক্ষতি হয়নি। কেননা আমার ভাঁটির আগুন এখনো জ্বলছে। দোষ ঢাকতে তিনি ভিন্ন একটি ভাঁটির নাম উল্লেখ করেন। এ নিয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনছারুল ইসলাম বলেন, সামান্য ওষুধ ব্যবহার করলেই ধানগুলোর ভালো ফলন পাওয়া যাবে। আমরা ওষুধের খরচ দিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা তা নেয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের দাবি ন্যায্য।  ভাঁটি মালিকের উচিত হচ্ছে নষ্ট ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

×