
ছবি: জনকণ্ঠ
বুধবার সকালে বাবার জানাজা ও লাশের দাফন শেষ করে পরীক্ষার হলে গেলেন মেহনাব হোসেন। এ বছর তিনি দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছেন।
মেহনাবের বাবার নাম মো. জসিম উদ্দিন (৪৫)। তিনি সাত বছর আগে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে মালদ্বীপ গিয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল কাজ করে ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন, সংসারে ফিরিয়ে আনবেন সচ্ছলতা। হাসি ফোটাবেন স্ত্রী–সন্তানদের মুখে।
স্বপ্নপূরণের ধারপ্রান্তেও এসেছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের আগেই তিনি মারা যান। বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে লাশ হয়ে।
তাঁর স্ত্রী মোসা. মাসুমা আক্তার (৩৭)। জানান বাংলাদেশ সময় গত শনিবার দিবাগত রাত চারটার দিকে মালদ্বীপের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জসিম। হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
জসিমের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বড় ডালিমা গ্রামে। তার বাবার নাম মো.আলাউদ্দিন আহম্মেদ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সেজ। জসিমের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে মেহনাব হোসেন এ বছর দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে। আর মেয়ে মোছা. জেরিন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
জসিমের ছোট ভাই মো. মাহফুজ বলেন, জীবিকার তাগিদে ২০০৫ সালে সৌদি আরব গিয়েছিলেন জসিম। ২০১৭ সালে বাড়ি ফিরে এসে মুরগির খামার করেছিলেন। মুরগির খামারে লোকসানে প্রবাসের আয় করা সব টাকা শেষ হয়ে যায়। উল্টো ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন।
২০১৮ সালে চলে যান মালদ্বীপে। মালদ্বীপের কুলহুধুফুশি আইসল্যান্ডে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। আসছে ঈদুল আজহায় বাড়ি ফেরার কথা ছিল।
২৫ এপ্রিল, শুক্রবার বুকে ব্যথা নিয়ে মালদ্বীপের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিনই বাসায় ফিরে যান। পরের দিন শনিবার রাতে বুকে ব্যথা অনুভব হলে সহকর্মীরা তাঁকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত চারটার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মঙ্গলবার রাতে জসিমের লাশ নিয়ে আসা হয় বাড়িতে মালদ্বীপের প্রবাসী ডা. এইচএম সোহেলের সহযোগিতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে তার লাশ দেশে পাঠানো হয়।
মেহনাবের বাবার জানাজায় স্থানীয় কয়েকশ মুসুল্লিরা জানার নামাজে অংশ নেয়। ঢাকা থেকে জানজায় ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ও বাউফল উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
তিনি বক্তব্যে প্রবাসী জসিমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
বিশেষ করে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রবাসী চিকিৎসক ডা. এইচএম সোহেলের প্রতি। তার পদক্ষেপের কারণেই জসিমের লাশ দ্রুত দেশে পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
এদিকে বাবার জানাজা ও দাফন শেষ করে জসিম উদ্দিনের বড় ছেলে মেহনাব হোসেন পরীক্ষার হলে যান। মেহনাব এ বছর কালাইয়া রাব্বানীয়া ফাযিল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছেন।
শিহাব