
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক বিভাগের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা চুকনগর
শুকনা মৌসুমে ধুলায় দৃষ্টিশক্তি ছোট হয়ে যায়। আর বর্ষা মৌসুমে খানাখন্দে পানি জমে কাদামাটিতে একাকার। ছোট-বড় আকৃতির গর্তের সঙ্গে ঢেউ খেলে খেলে চলতে হয় পরিবহনগুলোর। নামে মহাসড়ক কিন্তু রাস্তার মাঝে-মধ্যে ইট পাতানো। কোথাও আবার পার্শ্ব রাস্তা ভেঙে সঙ্কুচিত হয়ে সাইকেল, ভ্যানসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহন চলাচলের জায়গাই নেই। প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। এমন চিত্র খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের। গেল কয়েক মাস ধরে সড়কের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অথচ মাত্র আড়াই বছর আগে শতকোটি টাকার ওপরে ব্যয় হয়েছিল সড়কটি সংস্কারে।
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক বিভাগের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক। যার খুলনা অংশের জিরোপয়েন্ট থেকে চুকনগর পর্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সড়কটির পিচ, বালু, পাথর, খোয়া উঠে বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন থাকে গোটা এলাকা। কোথাও কোথাও আবার দেখা দিয়েছে বড় বড় গর্ত। সেই গর্ত ঢাকতে সড়কে করা হয়েছে ইটের ব্যবহারও। কোথাও আবার রাস্তা দেবে গিয়ে ঢেউয়ের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলে নৌকার মতো হেলেদুলে। পথচারীদের চলাচল করতে হয় নাক-মুখ বন্ধ করে। অপরদিকে বৃষ্টির সময় পানি জমে সড়কজুড়ে। ফলে কোথায় গর্ত আর কেতটুকু ভালো সেটা বুঝে ওঠা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে শুধু যানবাহন চলাচলই ব্যাহত হয় এমনটি নয়, পায়ে হেঁটে রাস্তায় চলাচলও দায় হয়ে পড়েছে।
সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৪ কিলোমিটার। এরমধ্যে খুলনা-চুকনগর অংশের প্রায় ৩০ কিলোমিটার সংস্কারে খরচ হয়েছিল ১০৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২১ সালের মার্চে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাগেরহাটের মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ কাজটি করেছিল। মিজানুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, গাড়িতেও এই রাস্তায় চলাচল করা যায় না। কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হয়ে যায়। রহিমা বেগম নামের পথচারী বলেন, আমার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিনই স্কুলে যেতে হয়। নিজে ও ছেলে-মেয়ের মুখে মাস্ক দিয়ে চলি। এত ধুলা তা বোঝাতে পারব না। শাবনূর বেগম নামের ঠিকরাবন্দ এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, এখন তো ধুলা কিন্তু বর্ষাকালে কাদা পানি এতটাই হয় যে খুলনা থেকে এদিকে কোনো ছোট যানবাহন আসতে চায় না। আর অল্প দূরত্বের যাত্রী বিধায় বাসে নিতে চায় না। তখন অসুবিধা আরও বেশি হয়।
গাড়ি চালক বাবু মিয়া বলেন, এই রাস্তায় গাড়ি চালালে পাতিসহ বিভিন্ন জিনিস ভেঙে যায়। প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষ মারা যায়। অ্যাম্বুলেন্স চালক ডালিম হোসেন জানান, অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই রোগী মারা যায়। এ ছাড়া একটা মহাসড়কে ইট পাতানো এটা ভাবতেও লজ্জা লাগে। কৈয়া এলাকার বাসিন্দা সবুজ মন্ডল বলেন, একশ’ কোটি টাকার ওপরে ব্যয়ে মাত্র আড়াই বছর আগে এই রাস্তা সংস্কার করেছিল মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখনই আমরা বলেছিলাম নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তাই সড়কের আজ এই অবস্থা।
খুলনা সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, এই মহাসড়কের কিছু অংশের অবস্থা আসলেই খারাপ। তার মধ্যে বেশি খারাপ অংশে আমরা জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করছি। আর সংস্কার করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া রয়েছে। বাজেট পাস হলেই কাজ শুরু হবে। মাত্র আড়াই বছরের মাথায় কেন সড়কের পরিস্থিতি খারাপ হলো এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মাটিই খারাপ। বর্ষার সময় সড়কের দুইপাশে পানি জমে থাকে দীর্ঘদিন। এ ছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ভোমরা স্থল বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগসহ বিভিন্ন কারণে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ওভারলোডের বিড়ম্বনাও রয়েছে।
খুলনা বিআরটিএ এর পরিচালক জিয়াউর রহমান জানান, ২০২৪ সালে এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১২টি। এতে নিহত হয়েছেন ১৯ ও আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন।