ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

গাইবান্ধায় জমে উঠেছে পশুর হাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১০ জুন ২০২৪

গাইবান্ধায় জমে উঠেছে পশুর হাট

কোরবানির হাটে ওঠা গরু

ঈদুল আজহা সামনে রেখে গাইবান্ধা কোরবানির পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। প্রতিটি হাট-বাজারে প্রচুর পরিমাণে গরু-ছাগল আমদানি হচ্ছে। বিক্রিও বেশ জমে উঠেছে। এখন পর্যন্ত ভারতীয় গরু দেখা না গেলেও বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েই গরু কেনা-বেচায় খুশি নন। গাইবান্ধায় ৪১ স্থানে বসছে কোরবানির পশুর হাট। এর মধ্যে ২৬টি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী হাট রয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে আরও ৭টি প্ল্যাটফর্মে পশু কেনা-বেচা হচ্ছে।
সম্প্রতি গাইবান্ধার দাড়িয়াপুর, লক্ষীপুর, ভরতখালি, সাদুল্লাপুর ও মাঠেরহাটসহ আরও বিভিন্ন হাটে দেখা যায় কোরবানি পশু কেনা-বেচার চিত্র। এসব হাটে কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ষাঁড়, বলদ, মহিষ, গাভী, ছাগল ও ভেড়া কেনা-বেচা শুরু হয়েছে। আর কয়েকদিন পরই পুরোদমে জমে উঠবে বলে ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গাইবান্ধা সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর হাটে দেখা যায়, নিয়মিত এবং মৌসুমিসহ প্রচুর পরিমাণে দেশী-বিদেশী, ছোট-বড় গরু-ছাগল আমদানি ও বেচা-কেনা হচ্ছে।

বছরব্যাপী গরু পালনকারী খামারিরা এ সময় এসব হাটে প্রচুর পরিমাণে কোরবানির গরু বিক্রি করে। খামারি আনছার আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে অনাগ্রহ বেড়ে গেছে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে না পারলে এবার খামারিদেরকে লোকসান গুনতে হবে।

সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী হাটের হাট কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা জানান, এবার ভারত থেকে গরু না এলেও দেশী গরুর সংখ্যা অনেক বেশি রয়েছে। কিন্তু পাইকারদের আনাগোনা কম। এদিকে দুর্বৃত্তরা জাল টাকা ছড়িয়ে দিয়ে যেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারে সেজন্য হাট কমিটির লোকজন ও পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানান সাঘাটা থানার পুলিশ কর্মকর্তা।

বাকেরগঞ্জে নজর কাড়ছে লালচান
নিজস্ব সংবাদদাতা বাকেরগঞ্জ বরিশাল থেকে জানান, বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের নুর আলম মাঝি কৃষিকাজের পাশাপাশি শখের বশে প্রথমে একটি গরু পোষেন। প্রথম বাছুর হয় এঁড়ে গরু। গত তিন বছর ধরে তার পোষা ষাঁড়টির ওজন প্রায় ২০ মণ। বর্তমান দাম প্রায় ১০ লাখ টাকা। তিনি ষাঁড়টির নাম দিয়েছেন ‘লালচান’। এবারের কোরবানিতে লালচানকে বিক্রি করতে চান তিনি। সবসময় সন্তানের মতো ষাঁড়টিকে আগলে রেখেছেন নুর আলম মাঝির স্ত্রী হ্যাপি বেগম।

লালচানকে দেখতে নুর আলম মাঝির বাড়িতে আসছেন অনেকেই। অনেকে মোবাইলে ধারণ করছেন ষাঁড়টির ছবি ও ভিডিও। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন বাকেরগঞ্জে কোরবানির হাটে রাজত্ব করবে লালচান। 
নুর আলম মাঝি বলেন, প্রথমে শখের বশে একটি গরু পোষেন তিনি। এখন তার গোয়ালঘরে চারটি গরু রয়েছে। এখন পর্যন্ত হাটে লালচানকে নেওয়া হয়নি। বিভিন্নজন দেখতে এসে বিভিন্ন রকমের দাম বলছে। তবে হাটে নেওয়া খুব কষ্টসাধ্য। ‘লালচান’ বদমেজাজ স্বভাবের। ন্যায্য দাম পেলে বাড়িতে বসেই বিক্রি করব। 
নুর আলম মাঝির স্ত্রী হ্যাপি বেগম বলেন, রোজার ঈদের পর থেকে ষাঁড় দেখতে বাড়িতে লোকজন আসা শুরু করেছে। গত দশদিন ধরে মানুষের ভিড় বেড়েছে। লালচানকে আমরা কোনো ফিড খাবার খাওয়াইনি। মাঠের ঘাস ও খরকুটা খাইয়ে ওকে এত বড় করেছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেশী গরুর চাহিদা বেশি
নিজস্ব সংবাদদাতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, প্রতি বছর ঈদুল আজহা ঘিরে কোরবানির পশু বেচাকেনার মাধ্যমে বড় অঙ্কের লেনদেন হয়। যার মাধ্যমে গতি আসে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে। এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকার পশু কেনাবেচার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এবারও চোরাইপথে ভারতীয় গরু আসার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এটি ঠেকানো না গেলে, বড় অঙ্কের লোকসান গুনে পথে বসতে হবে বলে জানিয়েছেন এসব স্থানীয় খামারি। যদিও প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু আসা বন্ধে কঠোর নজরদারি থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪ হাজারেরও বেশি খামারি কোরবানির পশু মোটাতাজা করেছেন। যার গোয়ালে অন্তত ৫টি গরু-মহিষ আছে, তাকেই খামারি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঈদ সামনে রেখে হাটে ভালো দাম পাওয়ার আশায় এখন পশুর বাড়তি যতœ নেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত খাবার।

সবকটি খামারেই কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। জেলার বাণিজ্যিক খামার ও সাধারণ কৃষকদের কাছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোরবানি যোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯৩ হাজার ১৭৪টি গরু, ১২ হাজার ২৩৪টি মহিষ, ১৫ হাজার ছাগল এবং সাড়ে ৬ হাজার ভেড়া রয়েছে। যা আপাতত কোরবানির চাহিদার সমপরিমাণ। খামারগুলোতে দেশীয় ষাঁড়, শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশী ষাঁড়ের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।
জেলা শহরের খাঁজা ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী জুয়েল মিয়া জানান, পশুখাদ্যের সঙ্গে শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। তাই পশুর দাম না বাড়লে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। কোরবানির জন্য সবসময় দেশীয় ষাঁড়ের চাহিদা থাকে বেশি। এ ছাড়া প্রত্যেক খামারেই পর্যাপ্ত গরু-মহিষ রয়েছে।

তাই বিদেশ থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন হবে না। জেলা ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সাইফুদ্দিন খান শুভ্র বলেন, পশু পালনে খরচের ওপর নির্ভর করে পশুর দাম।
মাগুরায় মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি
নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, কোরবানির পশুর হাট জমে উঠেছে। আমদানি ব্যাপক হলেও  এবছর দাম বেশ ভালো। ফলে খামারিরা নায্যমূল্য পাচ্ছেন।  তবে ক্রেতারা মাঝারি আকারের গরু বেশি পছন্দ করছেন। জানা গেছে, এবছর সদর উপজেলার আড়পাড়া, কাটাখালী, আলমখালী, রামনগর, আলোকদিয়া, মহম্ম্দপুরের বেথুলিয়া, নহাটা,  সীমাখালী, পুলুম, শ্রীপুরের  লাঙ্গলবাধ ও সারঙ্গদিয়া প্রভৃতিস্থানে কোরবানির পশুর  হাট বসেছে।

হাটে বিভিন্ন আকারের গরু ও ছাগল উঠেছে বিক্রির জন্য। তবে মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। প্রতিটি গরু ৫০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের দাম প্রকার ভেদে ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।

ফেনীতে অপেক্ষায় খামারিরা
নিজস্ব সংবাদদাতা ফেনী থেকে জানান, ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশু বিক্রির অপেক্ষায় খামারি ও ব্যাপারিরা। তাদের অতি যতেœ পালিত পশু বিভিন্ন হাটে নেওয়ার অপেক্ষায় দিন গণনা করছেন ব্যাপারিরা। তবে খামারি ও ব্যাপারিদের দাবি একদিকে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে ভারত থেকে চোরাইপথে গরু আসার কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। ফলে ব্যাপক লোকসানের শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন খামারিরা।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু পরিচর্যায় দম ফেলার সময় নেই ফেনীর খামারিদের। এবারের ঈদের কোরবানির জন্য জেলায় ৫ হাজার ২৪৬ জন তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক খামারির বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে পালন করছেন গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। বড় বড় খামারের পাশাপাশি অনেকেই পারিবারিকভাবেও গরু পালন করেছেন। 

দেশীয় খাবার  চালের কুঁড়া, খৈল, কাঁচা ঘাস খাইয়ে মোটাতাজাকরণ করছেন তারা। খামারিরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রতি বস্তা খাদ্যে ১ হাজার টাকারও বেশি বেড়েছে। সে হিসাবে এবার পশুর দামও কিছুটা বেশি হবে। জেলার চাহিদার চেয়েও বেশি গরু, ছাগল, মহিষ রয়েছে বলে জনিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হক। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার। বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালন-পালন করা হচ্ছে প্রায় ১ লাখের বেশি গবাদিপশু।

সাটুরিয়ায় প্রস্তুত কোরবানির পশু
নিজস্ব সংবাদদাতা সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, সাটুরিয়া উপজেলায় আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২১ হাজার ৭শ’ ৭৭টি কোরবানির পশু লালন-পালন করেছেন খামারিরা। জানা যায়, এ বছর সাটুরিয়া উপজেলায় চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ৭শ ৭৭টি কোরবানি পশু প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু খামারিদের আতঙ্ক যদি ভারতীয় পশু পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশের বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য আনা হয় তাহলে দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন তারা।

সাটুরিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়িতেই গরু, ছাগল ও ভেড়া লালন-পালন করেছেন খামারিরা। বিশেষ করে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রতি বছরই এখানকার কৃষকরা গরু মোটাতাজাকরণ করে থাকে। এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পশুর হাটগুলোতেও জমে উঠছে বেচাকেনা। 

খুলনায় শুরু হলো বড় হাট
স্টাফ রিপোর্টার খুলনা অফিস থেকে জানান, শুরু হয়েছে খুলনা অঞ্চলের কোরবানির পশু কেনাবেচার সবচেয়ে বড় নগরীর জোড়াগেট হাট। সোমবার দুপুর ১২টায় প্রধান অতিথি হিসেবে হাটের উদ্বোধন করেন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হক এবং কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সানজিদা বেগম।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র (১) ও হাট পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এস এম রফিউদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সোনালী সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান, কেসিসির বাজার স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ হাসান ইফতেখার চালু, প্যানেল মেয়র এসএম খুরশিদ আহম্মেদ টোনা, এ্যাডভোকেট মেমরী সুফিয়া রহমান শুনু, হাট পরিচলনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম মুন্নাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সংরক্ষতি নারী আসনের কাউন্সিলর, কেসিসির বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

×