
রোপা আমন ধানের চারা রোপণের বৃষ্টি নেই। তাই স্যালো মেশিন দিয়ে খেতে সেচ
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে যশোরের আমন চাষিরা। আমন চাষের ভরা মৌসুমেও চারা রোপণ করতে পারছেন না তারা। বৃষ্টিনির্ভর আমন চাষে এবার বাধ্য হয়ে কৃষককে ব্যবহার করতে হচ্ছে সেচযন্ত্র। ফলে শুরুতেই বেড়েছে চাষের খরচ। অন্যদিকে, ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার সেচ খরচ বাবদ কৃষককে অতিরিক্ত গুনতে হবে ২০৭ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যশোরের আট উপজেলার কৃষক এবার খরার কবলে পড়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই আমন চাষিরা গভীর-অগভীর সেচযন্ত্র চালু করে আমনের চারা লাগাচ্ছেন। কিন্তু পানির স্তর নিচে চলে যাওয়ায় ঠিকমতো সেচযন্ত্রে পানি উঠছে না। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে এক লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। যশোর জেলা বিএডিসি (সেচ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আল রশিদ বলেন, বৃহত্তর যশোর জেলাতে সেচের জন্য ডিপ টিউব-অয়েল (বিদ্যুৎ এবং ডিজেল চালিত) রয়েছে ১৭৩০টি, শ্যালো টিউব-অয়েল এক লাখ ৬১ হাজার ৬১৫টি, পাওয়ার পাম্প দুই হাজার ২৮৬টি। সব মিলিয়ে জেলায় এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৭টি সেচযন্ত্র রয়েছে। খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত সেচযন্ত্রের প্রায় সবই চালু রয়েছে।
চৌগাছা উপজেলার শিমুল বলেন, ভরা আমন মৌসুমেও কোনো বৃষ্টি নেই। খরার কারণে চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। যেসব জমিতে চারা লাগানো হয়েছে সেই সব জমিতে পানি দিতে হচ্ছে নিয়মিত। আবার মাটি ফেটে যাওয়ায় জমিতে পানি বেশি দিতে হচ্ছে। যেখানে আমন মৌসুমে পানির জন্য খরচ হতো না। এবার শুরুতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। সে অনুপাতে চারাও তৈরি করেছি। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় খরচ বেড়েছে। হয়ত ১০বিঘাও লাগাতে পারব না। ঝিকরগাছার আজিম, বাবলু ও তোফাজ্জেল বলেন, আষাঢ়-শ্রাবণে ঠিকমতো বৃষ্টি নেই। সেচ দিয়ে ধান লাগাতে হচ্ছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস বৃষ্টি নেই চিন্তাই করা যায় না। এ রকম খরার কারণে ধান আবাদ করতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, বৃষ্টি না হলেও আমনের লক্ষ্যেমাত্রা অর্জন নিয়ে তেমন চিন্তার কিছু নেই। মৌসুম শুরু হয়েছে। ১৫ আগস্ট পর্যন্ত আমনের চারা লাগানো যাবে।
নীলফামারীতে বেড়েছে খরচ
স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, আকাশের বৃষ্টির আশা ছেড়ে দিয়ে বিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্প দিয়ে আমন চারা রোপণ করছি। দাবদাহে বীজতলা পুড়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে সেচের পানি দিয়ে ধান লাগাচ্ছি। এতে খরচের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। জেলা সদরের হারোয়া এলাকার কৃষক মজিদুল ইসলাম, মহুবার রহমান বুধবার জমিতে আমনের চারা রোপণের সময় কথাগুলো বলছিলেন। শ্রাবণের বৃষ্টির ওপর নির্ভর করেই কৃষক আমন ধান চাষ করে থাকেন। বর্ষাকালে জমিতে জমে থাকা পানি দিয়ে বীজতলাসহ চারা রোপণের কাজ করেন কৃষক। কিন্তু এবার নীলফামারীতে ভরা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক। এ পরিস্থিতিতে নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করে আমন চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের দীঘলটারি গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রত্যেক বছর ১০-১২ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করেন তিনি। গত দুই-তিন বছর বৃষ্টি না হওয়ায় আমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে আমনের চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা এ পর্যন্ত সাত হাজার ২৩৪টি সেচযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আমনের চারা রোপণ করছে।
দিনাজপুরে বিপাকে কৃষক
স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, গত কয়েক দিনের টানা দাবদাহে শুকিয়ে গেছে জমে থাকা জমির পানি। ফলে চারা রোপণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের আমন চাষিরা। জেলার ১৩ উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আমন চাষিরা ডেপ ও পটাশ সার ছিটিয়ে জমি তৈরি করছেন। তবে চারা রোপণে পর্যাপ্ত পানি নেই জমিতে। কিছু কিছু জমিতে দেখা যাচ্ছে পানি, এসব জমিতে কৃষক চারা রোপণ করছেন। আবার যেসব জমিতে পানি শুকিয়ে গেছে, তারা জমি তৈরি করে বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন। কেউ কেউ জমির পাশের ডোবা-নালা থেকে শ্যালো মেশিন দ্বারা পানি সেচ দিচ্ছেন।
দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, জেলার ১৩ উপজেলায় ২ লাখ ৬০ হাজার ৭শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
মাগুরায় সেচ পানির ব্যবসা জমজমাট
নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানির ব্যবসা চলছে। প্রতিঘণ্টা পানি বিক্রি হচ্ছে ২শ’ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে একশ’ টাকা ঘণ্টার পানি ২শ’ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। জানা গেছে, রোপা আমন চারা রোপণে কৃষক বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি সেচ দিচ্ছে। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে ৪ ঘণ্টা পানি লাগছে। যার মূল্য ৮শ’ টাকা। একদিন পর পর জমিতে পানি সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। এদিকে পানি সেচ দিয়ে অনেকে পাট জাগ দিচ্ছে। ফলে জেলায় পানির ব্যবসা জমজমাট। লাভবান হচ্ছে সেচযন্ত্রের মালিকরা। বৃষ্টির অভাবে অনেকে জমির পাট কাটতে ভয় পাচ্ছেন। কিভাবে পাট জাগ দেবেন। এ বছর জেলায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।