ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

যশোরে দুই সেতু মরণফাঁদ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ২২:২০, ১২ জুলাই ২০২৩

যশোরে দুই সেতু মরণফাঁদ

শার্শায় নাভারণ-গোড়পাড়া সড়কে বেতনা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। বিকল্প সাঁকোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

কাজের মেয়াদ শেষ হলেও শার্শার নাভারণ থেকে গোড়পাড়া সড়কের দুটি স্থানে বেতনা নদীর ওপর দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে যথাক্রমে ৬০ ও ৪০ শতাংশ। কাজে ধীরগতির কারণে সেতু দুটি এখন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতু দুটির কাজ শেষ হলে হাজারো মানুষের যোগাযোগ সহজ হবে। তাই দ্রুত কাজ শেষ করে সেতু দুটি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
জানা যায়, শার্শার নাভারণ-গোড়পাড়া সড়কের বেতনা নদীর ওপর কাজিরবেড় ও গাতিপাড়ায় দুটি ৬০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ কাজ পায় যশোরের আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ সেতু দুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি কাজ শুরু হয়ে ২০২৩ এর ৩ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার সময় বেঁধে দিয়েছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। কাজ শুরু করে এ পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সেতু দুটির একটির ৬০ এবং অপরটির ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কাজের ধীরগতিতে যাতায়াত ও এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতে বিঘœ সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছে এলাকাবাসী।

এ ছাড়া সেতু দুটির পাশে কাঠের তৈরি অস্থায়ী সেতু দিয়ে চলাচলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। গত কয়েকদিনে উন্মুক্ত এ কাঠের সেতু পারাপারের সময় ভ্যান, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল নিচে পড়ে একই পরিবারের তিনজনসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নাসরিন খাতুন (৩৫) নামে এক নারী আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহত নাসরিনের নিকটাত্মীয় বলিদাদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ দুটি সেতুর কাজ নিয়ে ব্যাপক টালবাহানা শুরু করেছে। কাজ শেষ করার ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।

বর্ষা মৌসুমে চলাচলকারীদের ভোগান্তি নিরসনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক জামিরুল ইসলাম বলেন, কাঠের উন্মুক্ত সেতু দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই যানবাহন থেকে যাত্রী নিয়ে নিচে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছেন। নির্মাণাধীন সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানাচ্ছি। গাতিপাড়া গ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান সর্দার বলেন, সেতু নির্মাণে যে পরিমাণ ধীরগতি দেখছি তাতে কবে এই সেতুর কাজ শেষ হবে বলা মুশকিল। দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইসিএলের ম্যানেজার সুখেশ মজুমদার বলেন, আমরা এরইমধ্যে গাতিপাড়া খেয়াঘাট সেতুর কাজ ৬০ শতাংশ এবং কাজিরবেড় সেতুর ৪০ শতাংশ শেষ করেছি। বাকি শেষ করার জন্য জোর চেষ্টা চলছে।

বাউফলে পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি  
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী থেকে জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি রাস্তা নির্মাণের কাজ দীর্ঘ ৫ বছরেও শেষ হয়নি। অগ্রিম তুলে নেওয়া হয়েছে ওই রাস্তার অনুকূলে বরাদ্দের ৯৪ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা-কনকদিয়া-কাছিপাড়া সড়কের বৌলতলী বাজার ব্রিজ থেকে ৩ কিলোমিটার রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোহিনুর অ্যান্ড রুটস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। রাস্তার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৮ হাজার ৫শ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ৩০ জুন।  
স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটি নির্মাণের কাজ পাঁচ বছর আগে শুরু হলেও শেষ হয়নি চার ভাগের একভাগ কাজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই কাজ করা নিয়ে গাফিলতি করে আসছে। 
কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার বলেন, ‘মিল্টন নামের এক ঠিকাদারের আগেও দুটি প্রকল্পের কাজ নিয়ে গাফিলতি করেছে এবং দীর্ঘদিন ফেলেও রেখেছিলেন। তারপরও তাকে ফের কাজ দেওয়া হয়েছে কেন এটা আমার বুঝে আসছে না। তার মতো ঠিকাদারকে কাজ দেয় আজ কয়েকটি এলাকার জনমানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এলাকার মানুষ এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চায়’। 
বরিশাল কোহিনুর অ্যান্ড রুটস্ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ঠিকাদার মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, ‘করোনার মহামারী ও আম্ফানসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হয়েছে। শীঘ্রই এ কাজটি সম্পন্ন করে ফেলব’। এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না আপনি কোন সড়কের কথা বলছেন। একটু কষ্ট করে উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
এ ব্যাপারে জানতে বাউফল উপজেলা প্রকৌশলী সুলতান হোসেনকে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

হোসেনপুরে জনদুর্ভোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা, হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে দীর্ঘদিনেও শেষ হয়নি নরসুন্দা নদীর ওপর নির্মাণাধীন কাওনা সেতুর নির্মাণ কাজ। এ সড়ক দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে কিশোরগঞ্জের সদর, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া এবং ময়মনসিংহের নান্দাইল ও গফরগাঁওয়ের লোকজন। দুই বছর আগেই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যবধি কাজ শেষ হয়নি। সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণের। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য নির্মাণাধীন সেতুর পাশে মাটির একটি সরু রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সে সড়কে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।  
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আলম প্রুপের মালিক এস আলম বলেন, নিয়মিত বরাদ্দের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে সেতুর কাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুর বাকি কাজ শেষ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী গালিব মোর্শেদ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপকে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই এস আলম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

×