ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

সিলেটে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নৌকার প্রার্থীর গণসংযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ১৪ জুন ২০২৩

সিলেটে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নৌকার প্রার্থীর গণসংযোগ

ভারি বর্ষণের কারণে বুধবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে

ভারি বর্ষণের কারণে বুধবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে দুপুরের পর প্রচারে গতি আসে। সকালের বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েন। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নবনির্বাচিত মেয়রের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন নগরবাসী। নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা) এই বিষয়ে নিজের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আসছেন। তিনি নগরীর জলাবদ্ধতাকে অন্যতম সমস্যা চিহ্নিত করে পরিকল্পিত উপায়ে সেটা সমাধানের কথা উল্লেখ করেন।
বুধবার সকালে আনোয়ারুজ্জামান নগরীর জলমগ্ন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় জলাবদ্ধ নগরবাসীকে সান্ত¡না দেন এবং তিনি নির্বাচিত হলে এ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে তার কর্মপরিকল্পনায় আশ্বস্ত করেন। নগরবাসী এ জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনের উদাসীনতাকে দায়ী করেন। অনেকে বলছেন, ড্রেনেজ সিস্টেম যদি সঠিক সময় সংস্কার করে রাখা হতো, তাহলে এই ভোগান্তি জনগণকে পোহাতে হতো না। বারবার এই ভোগান্তির পর সিসিকের টনক না নড়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান বলেন, নগরের অপরিকল্পিত উন্নয়নের জন্যই এ জলাবদ্ধতা। নগরের এই জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে দখল হওয়া ছড়াগুলো উদ্ধার করে বৃষ্টির পানিপ্রবাহ অবাধ করতে হবে। এ ধরনের দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হবে। যতটা সম্ভব পরিবেশ নষ্ট না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, পানি যাতে মাটির নিচে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। এবারের সিটি নির্বাচনে তিনি যদি মেয়র নির্বাচিত হন, তাহলে নগরবাসীকে এ জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
সিটি নির্বাচনে সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা) ও  নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙল) প্রচারে সরব থাকলেও অন্য প্রার্থীদের প্রচারে কোনো উত্তাপ নেই। বুধবার দিনভর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিভিন্ন পথসভায় অংশগ্রহণ এবং গণসংযোগ করেন। তবে বৃষ্টির কারণে নজরুল ইসলাম বাবুল দিনের সকল কর্মসূচি স্থগিত করেন।
নৌকার মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ২২ নং ওয়ার্ডের উপশহরস্থ এবিসি পয়েন্টে নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্যে বলেন, উন্নয়নের বদলে নগরবাসীকে উন্নয়ন দুর্ভোগ উপহার দেওয়া হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন হয়েছে। এর কোনো সুূফল নেই। অল্প বৃষ্টিতে নগরবাসীকে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে অবশ্যই পরিকল্পিত উন্নয়ন উপহার দেব। প্রয়োজনীয় প্রকল্পে বরাদ্দ দিতে প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই আন্তরিক, ইতিবাচক।
সভার আগে ও পরে আনোয়ারুজ্জামান দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে উপশহরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় তিনি স্থানীয় অধিবাসী, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের সঙ্গে একান্তে আলাপকালে ওই এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবগত হন এবং ২১ জুন নৌকা বিজয়ী হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
কাজির বাজারে প্রচার ॥ বৃষ্টি উপেক্ষা করে আনোয়ারুজ্জামান বুধবার কাজির বাজার, মীরাবাজার, জালালাবাদসহ বিভিন্ন জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন এবং গণসংযোগ করেন। এ সময় আনোয়ারুজ্জামান জলাবদ্ধতামুক্ত নগর গড়তে পরিকল্পিত উন্নয়ন, নগরায়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বাধা ও হুমকির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিলেটে নির্বাচনী পরিবেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ। আলোচনায় আসতেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এসব অভিযোগ করছেন। এসব বিষয়কে নাটক বলে অভিহিত করেন তিনি।
নৌকার প্রচারে চিত্রনায়ক ফেরদৌস ॥ নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচারে সিলেটে এসেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। বুধবার বিকেলে মহানগরীর তালতলা, মির্জাজাঙ্গাল, লামাবাজার ও তার আশপাশে নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের প্রচারে অংশ নেন তিনি। এ সময় লিফলেটও বিতরণ করেন নায়ক ফেরদৌস। এ সময় তাকে দেখতে ভিড় জমান স্থানীয়রা।
জাপা প্রার্থীর অভিযোগ ॥ সংবাদ সম্মেলন ডেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নৌকার মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙল)। বুধবার বিকেল চারটায় কুমারপাড়াস্থ লাঙল প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন অভিযোগ করে বাবুল বলেন, সিলেটে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নেই। বাধ্য হয়ে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হাতপাখার প্রার্থী মাহমুদুল হাসান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন সরকারদলীয় প্রার্থীর টার্গেট আমি। বিভিন্নভাবে আমাকে চাপে রাখা হচ্ছে। আমার কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে আমার ব্যানার-ফেস্টুন। ভুয়া ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু আমি কিছুতেই ভোটের মাঠ ছাড়ব না। 
লিখিত বক্তব্যে জাপা প্রার্থী বলেন, জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবার সিটি নির্বাচনে আমার হাতে তুলে দিয়েছেন লাঙল প্রতীক। এরপর থেকে আমি ভোটের মাঠে আছি। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে যা ঘটছে, তাতে আমি শঙ্কিত। নানাভাবে আমাকে চাপের মুখে রাখা হচ্ছে। মাঠে থাকা জাপা নেতাকর্মীদের ওপর চোখরাঙানো হচ্ছে।

×