ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

থাকছে নিজস্ব ডাম্পিং ইয়ার্ড, সোলার বিদ্যুতের সুবিধা

মুন্সীগঞ্জে ১০০ একর জমিতে মুদ্রণ শিল্পনগরী হচ্ছে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০০:১১, ১ অক্টোবর ২০২২

মুন্সীগঞ্জে ১০০ একর জমিতে মুদ্রণ শিল্পনগরী হচ্ছে

মুন্সীগঞ্জে ১০০ একর জমিতে মুদ্রণ শিল্পনগরী হচ্ছে

রাজধানী  হওয়ার পর থেকে মেগা শহর ঢাকায় নানা সময়ে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ফলে আবাসিক এলাকায় মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে। এখন বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে সরকার ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্পনগরী গড়ে তোলার মাধ্যমে পরিকল্পিত শিল্পায়নের দিকে এগোচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে মুদ্রণ শিল্পকে ঢাকার বাইরে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
চলতি অর্থবছরের তৃতীয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়- ‘বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী’ নামের একটি সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২৬৪ কোটি ব্যয়ের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ শিল্পনগরী গড়ে তোলার কথা রয়েছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানে এ আধুনিক নগরী প্রতিষ্ঠা করা হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব মামুন আল রশীদ বলেন, যে কোন শিল্প যখন এক জায়গায় নিয়ে আসা হয় তখন তাদের দক্ষতা বাড়ে। এটা পরিবেশের জন্যও ভাল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভালভাবে ম্যানেজ করা যাবে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মুদ্রণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে একটি ছাতার নিচে আনার জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এ শিল্পনগরীতে স্থানান্তরিত হতে যাবতীয় সহায়তা করবে সরকার। সেখানে ৩০০টির মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। যার মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতি গতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি পরিবেশবান্ধব শিল্পনগরীতে নিয়ে আসার জন্য এটা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সাত শতাধিক প্রতিষ্ঠান এ নগরীতে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। মুদ্রণ শিল্প সমিতির মাধ্যমে তালিকা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতার বিষয়ে বিসিক বলছে, দেশের মুদ্রণ শিল্পের একটি বড় অংশ পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। এসব কারখানাতে কয়েক লাখ শ্রমজীবীর কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে পরিকল্পিতভাবে কারখানাগুলো গড়ে না ওঠায় ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তাই পরিবেশসম্মত স্থানে ও নিরাপদে এসব কারখানা স্থানান্তরের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালে প্রথম ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা  থাকলেও ১ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে করোনা পরিস্থিতির কারণে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়।  তবে কাজ শেষ না হওয়ায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে ফের এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২১ সালে আনা হয়। এবার প্রকল্পটির মধ্যে কয়েকটি নতুন কাজ অন্তর্ভুক্ত করে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। এতে ৯০ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি ও সময় বাড়ানো হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
বারবার সময় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথমে যখন প্রকল্পের সমীক্ষা করা হয় তখন এটা খাস জমিতে করার পরিকল্পনা ছিল। যেখানে অনেক মানুষের বসতি গড়ে উঠেছিল। তখন ২০১৯ সালে এত মানুষকে উচ্ছেদ করা এবং ফসলের জমি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী অফিস থেকেই এ জায়গা বাতিল করা হয়। এখন নতুন করে জমি বরাদ্দ হওয়ায় সময় মতো কাজ শেষ হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ১০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন। যেটা প্রথমে ৫০ একর ধরা হয়েছিল। পৌনে ৯শ’ বর্গমিটারের অফিস ভবন তৈরি করা। আড়াই হাজার মিটারের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। ৫২ হাজার বর্গমিটার রাস্তা তৈরি করা হবে। প্রায় ১২ হাজার মিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

২৭টি কালভার্ট ও একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে। ১১ হাজার মিটার পানির লাইন ও ১২ কিলোমিটার বিদ্যুত লাইন স্থাপন করা হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহে ১২টি সোলার প্যানেল থাকবে। ড্রাইভারদের জন্য কোয়ার্টার তৈরি করা হবে। নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ২২ বর্গমিটারের ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের ব্যয়ের বিষয়ে নিজাম উদ্দিন বলেন, এখন ৩৬ হাজার টাকা মৌজা রেটে জমি ক্রয় করা হচ্ছে। আগে যেখানে ৪২ একর জমি ক্রয় করতে ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয় হতো। এখন সেখানে ১০০ একর জমি ক্রয়ে ব্যয় হবে ১২৩ কোটি টাকা। অথচ আগের দামে জমি কিনলে প্রকল্প ব্যয় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত।

কম মূলে জমি ক্রয় করার শিল্প মালিকরাও তিনগুণ কম দামে জমি পাবে বলে জানান তিনি। তাছাড়া উৎপাদন কার্যক্রমে কোন ধরনের গ্যাস সংযোগ লাগবে না, যুক্ত করেন তিনি। জলাশয়ে কোন ধরনের প্রভাব পড়বে না এবং পরিবেশে মারাত্মক দূষণের কিছু নেই বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
প্রকল্পটিতে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলা হচ্ছে। সরকার শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ উন্নীত করতে চায়। এর মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৪১ দশমিক ৮৬ শতাংশে নিয়ে যেতে চায়। এরই অংশ হিসেবে বেসরকারী খাত প্রসারের জন্য এ শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে।
এদিকে প্রকল্পটিতে সময় বেশি লাগার কারণ হিসেবে বিসিকের পক্ষ থেকে নতুন স্থান নির্বাচনের বিষয়টি বলা হচ্ছে। তাছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে নতুন নির্ধারণ করা নতুন জায়গার পরিমাণ বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন রেট সিডিউল। আবার কিছু নতুন কাজ যুক্ত করা হয়েছে, প্রকল্পটিতে ব্যয়ও বেড়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ৭৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। এ বছর আরও ৭২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পরিকল্পনা কমিশনে এ প্রকল্প নিয়ে মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে দীর্ঘ সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তাছাড়া মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাবটি বাদ দেয়া হয়। ভূমি উন্নয়ন ও মূল ফটক নির্মাণের ব্যয় হ্রাসেরও পরামর্শ দেয়া হয়। পরবর্তীতে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে তা অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন।
উল্লেখ্য, শিল্প মন্ত্রণায়ের জন্য চলমান ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বা এডিপিতে ২৭টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। যাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিসিকের মাধ্যমে ৯টি প্রকল্প চলমান আছে। যেখানে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা।

×