শেরপুরের নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় বাস করে পাহাড়ী গারো ও কোচ আদিবাসী সম্প্রদায়। মুসলমান, হিন্দু কোচ, ডালু, বানাই ও হদি ইত্যাদি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি গারো সম্প্রদায়ের মানুষগুলো ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন। এদের অধিকাংশ পরিবারই বন থেকে লাকড়ি সংগ্রহ আর অন্যের বাড়িতে দিনমজুরি ও অনেকেই আগাম শ্রম বিক্রি করে অবহেলিত জীবনযাপন করছেন।
জানা গেছে, ৩শ’ ২৭.৬১ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নের ৭৪টি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবারের প্রায় ২০ হাজার আদিবাসী প্রকৃতির বিভিন্ন প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বসবাস করে আসছেন। প্রায় ২শ’ বছর আগে সুদূর চীনের তিব্বত প্রদেশ থেকে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের আগমন। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ লক্ষাধিক গারো আদিবাসী বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বাস করেন। আদিকাল থেকেই গারোরা শিকারি পেশায় খুবই দক্ষ ছিল গারোদের অধিকাংশ পরিবার বনে-জঙ্গলে বাস করে থাকেন। পারিবারিক দিক দিয়ে গারোরা মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত পরিবার। এ সম্প্রদায়ের প্রধান ও পছন্দনীয় খাবার হলো ভাত ও শূকরের গোশত। পাশাপাশি ‘নাখাম’ বা শুঁটকি মাছ দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম প্রধান খাবার। শূকরের গোশত পছন্দীয় খাবার হওয়ায় গারোরা নিজ উদ্যোগে শূকর পালন করে থাকেন। এরা প্রধানত ৬টি গোত্রে বিভক্ত। এগোলো হলো- আত্তং, মিগাম, আবেং, দোয়াল, চিবক ও রোগা। বাংলাদেশে আবেং গোত্রের লোকই বেশি। গারো সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ লোকই রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। বিয়েশাদির ব্যাপারে গারোরা নিজেদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। পাত্রপাত্রীর পছন্দ অনুযায়ী মিশনারির ধর্মযাজকরা বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন। বর্তমানে গারোদের পোশাক-পরিচ্ছদেও আধুনিকতার ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়। মেয়েরা দকবান্দা-দকশাড়ি ও সালোয়ার কামিজ আর ছেলেরা শার্ট, প্যান্ট ও লুঙ্গি পরিধান করেন। গারো নারীরা কৃষি কাজে খুবই পারদর্শী তাই তারা পুরুষের পাশাপাশি কৃষি কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তবে অভাবের তাড়নায় অনেক গারো পরিবার আগাম শ্রম বিক্রি করে থাকেন। গারোরা সংস্কৃতি ও অতিথি আপ্যায়নকে খুব পছন্দ করে থাকেন। তারা মনে করেন ‘সেবাই পরম ধর্ম।’ তারা আর বিশ্বাস করে নাচে-গানে প্রভু ঈশ্বরকে খুশি করা যায়। আর তিনি খুশি হলেই পরকালে স্বর্গ পাওয়া যাবে। প্রাচীনকালে গারোদের শিক্ষার হার খুব কম ছিল। বর্তমানে প্রায় ৮০ শতাংশ গারো উপজাতিরা শিক্ষিত। গারোদের একটি নিজস্ব ভাষা আছে যার নাম ‘আচিক ভাষা’। উপজেলার খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামের কল্পনা কোচনী বলেন, আমরা খুব কষ্ট করে সংসার চালাই প্রয়োজনে সরকারী সাহায্য সহযোগিতা পাই না। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছি না। আমাদের দিকে বিশেষ নজর দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ রইল। আদিবাসী নেতা মি. লুইস নেংমিনজা জানান, এখানকার আদিবাসীরা দরিদ্র, ভূমি সমস্যা ও বন্যহাতির তা-বে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। সরকার গারো আদিবাসীদের দিকে ঠিকমতো নজর দেয় না।
সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর