ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

মাদ্রাসার ছাত্রকে হাত-পা বেঁধে বলাৎকার করেছে জাতীয় পার্টির নেতা

প্রকাশিত: ০১:৩৪, ১৩ আগস্ট ২০১৮

মাদ্রাসার ছাত্রকে হাত-পা বেঁধে বলাৎকার করেছে জাতীয় পার্টির নেতা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর ॥ শরীয়তপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব, পৌরসভার বাঘিয়া নিবাসী বদরুল আলম নান্নু মুন্সীর বিরুদ্ধে তার বাড়ির পাশের মাহমুদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্রকে নিজ বসতঘরে ডেকে এনে হাত-পা বেঁধে সারারাত বলাৎকার করার অভিযোগ ওঠেছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই ছাত্রকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত জেলা জাতীয় পার্টির ওই নেতা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানা পুলিশ সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক ইয়াছিন মিয়া ও অভিযুক্তের ভাই চুন্নু মুন্সীকে থানায় নিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। মাদ্রাসা ও ভিকটিমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার গ্রামচিকন্দি গ্রামের ফরিদ মৃধার ছেলে ফয়সালকে (১১) গত এক মাস পূর্বে শরীয়তপুর পৌরসভাধীন বাঘিয়া এলাকার মাহমুদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায় কোরআন শিক্ষার জন্য আবাসিক ছাত্র হিসেবে ভর্তি করা হয়। শনিবার রাতে ওই মাদ্রাসার পাশের নিবাসী জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব বদরুল আলম নান্নু মুন্সী মাদ্রাসার শিক্ষকের নিকট আবদার করে ওই ছাত্রকে তার সাথে রাত্রিযাপন করার জন্য নিজ বসতঘরে ডেকে নিয়ে যায় এবং ফয়সালের হাত-পা বেঁধে সারারাত তাকে জোরপূর্বক পায়ুপথ দিয়ে ধর্ষণ (বলাৎকার) করে। এতে ফয়সালের পায়ুপথ ফেঁটে গিয়ে রক্তাক্ত হয়। রবিবার সকালে ওই ছাত্র বিষয়টি মাদ্রাসার শিক্ষককে জানালে সে সময়ক্ষেপণ করে এবং লম্পট নান্নু মুন্সীর সাথে যোগসাজশে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে। এ ঘটনা ফয়সালের বাবা-মা জানতে পেরে তাকে মাদ্রাসা থেকে উদ্ধার করে রবিবার রাত ৯টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফয়সালকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফয়সাল জানায়, রাতে নান্নু মুন্সী তার হাত-পা বেঁধে জোরপূর্বক পায়ুপথ দিয়ে ধর্ষণ করে। সে কান্নাকাটি ও চিৎকার করেও রক্ষা পায়নি। এতে তার পায়ুপথ রক্তাক্ত হয়ে যায়। সকালে সে মাদ্রাসায় এসে বিষয়টি হুজুরকে জানায়। তখন হুজুর বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করে। পরবর্তীতে নান্নু মুন্সীকে ডেকে ইয়াছিন হুজুর মীমাংসার চেষ্টা করে। ফয়সালের বাবা ফরিদ মৃধা বলেন, আমার নাবালক ছেলের সাথে খুব খারাপ কাজ করেছে। ইয়াছিন হুজুর ও লম্পট নান্নু মুন্সী দু’জনেই দায়ী। আমি আইনের কাছে বিচার চাই। একজন ছাত্র হুজুরের কাছে নিরাপদ না থাকলে আর কোথায় যাবে? মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ ইয়াছিন বলেন, গত তিনদিন পূর্বে নান্নু মুন্সীর পরিবার ঢাকায় চলে যায়। এসময় নান্নু মুন্সী বাড়িতে রাতে একা থাকতে ভয়পায় জানিয়ে প্রথমে মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষককে রাতে তার বাসায় থাকার প্রস্তাব করে। আবাসিক মাদ্রাসা হিসেবে ছাত্রদের দুইকক্ষ আমরা দুই শিক্ষকে দেখাশোনা করি। পরে ছাত্র ফয়সালকে তার বাসায় পাঠানো হয়। ঘটনা জানার পর নান্নু মুন্সীকে জিজ্ঞেস করি। সে জানায় হুজুর বিষয়টি ভুল হয়ে গেছে। আপনি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস ছামাদ বেপারী স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, আমি কয়েকদিন যাবৎ অসুস্থ। তবে বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। এ বিষয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি শুনে নিজেই মর্মাহত। কোন কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। এটা মারাত্মক অন্যায়। পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, অভিযুক্তকে কব্জায় নেয়ার চেষ্টা চলছে। ভিকটিমের পক্ষে অভিযোগ পেলে মামলা নেয়া হবে।
×