ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ ১৫ বছর পর চালু করার উদ্যোগ ॥ ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১২ এপ্রিল ২০১৭

দীর্ঘ ১৫ বছর পর চালু  করার উদ্যোগ ॥ ঠাকুরগাঁও  রেশম  কারখানা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ লোকসানের অজুহাতে ১৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায় ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা। দীর্ঘ সময় পর সরকারী মালিকানাধীন এ রেশম কারখানাটি এবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি দল মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানাটি পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন দলের সদস্যগণ জানান, ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানাটি চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে গঠন করা কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে যে কোন সময় কারখানাটি চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এ সময় কারখানার দ্বিতল ভবনে রক্ষিত যন্ত্রপাতি চালুর উপযোগী কি না তা নিরীক্ষা করেন তারা। পরিদর্শন দলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল খায়ের, উপ-প্রধান (পরিকল্পনা) বেগম তানিয়া খানম, রাজশাহী রেশম বোর্ডের মহাপরিচালক আনিস উল হক ভুইয়া, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট দফতর এবং জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ। উল্লেখ্য, ১৯৭৭-৭৮ সালে বেসরকারী সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ ঠাকুরগাঁওয়ে এই রেশম কারখানাটি স্থাপন করে। এখানে উৎপাদিত হতো ঐতিহ্যবাহী মসৃণ সিল্ক কাপড়। এ সময় এ কারখানাকে কেন্দ্র করে দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের অসংখ্য চাষী তুঁত গাছ রোপণ ও রেশম গুটি পোকা উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠে। এতে প্রায় অর্ধশত তুঁতের বাগান গড়ে উঠে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও প্রায় ১৫-২০টি বাগান টিকে রয়েছে। যেসব বাগান থেকে পলু পালনের মাধ্যমে সুতা উৎপাদন করছেন রেশম কর্মীরা। অথচ নীতি-নির্ধারকদের টানাপোড়েন ও কর্মকর্তাদের গাফিলতি আর উদাসীনতায় দিনে দিনে এই কারখানাটিকে লোকসানে ফেলা হয়। বিএমআরই করা হবে এমন কথা বলে হঠাৎ কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৯৫ সালে রেশম কারখানাটি আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে। আধুনিকীকরণে মোট ব্যয় হয় এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা। লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নবেম্বর মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ফলে প্রায় পাঁচ হাজার রেশম চাষী বেকার হয়ে পড়েন। তবে এখনও প্রায় দুই হাজার চাষী রেশম চাষ ধরে রেখেছেন। কিন্তু তুঁত গাছের অভাবে তারা পলু পালন করতে পারছেন না। তা ছাড়া পুঁজি ও উপকরণের অভাবে তারা এখন বিপাকে পড়ছেন। পাঁচ হাজার চাষী বেকার হয়ে পড়ায় তারা ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। অন্যদিকে অব্যবহৃত থাকায় রেশম কারখানার ৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে। অথচ কারখানাটি চালু হলে রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত পাঁচ হাজার চাষীর আবার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বন্ধ কারখানা চালু করার কথা বলে একাধিকবার রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ঘোষণা হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। চাষী ও স্থানীয় জনগণের দাবি, ঐতিহ্যগত কারণে কারখানাটি চালু করা উচিত। কারখানাটি চালু হলে অসংখ্য বেকারের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তাছাড়া এখানকার কাপড় অত্যন্ত মূল্যবান। কাঁচামালের কোন অভাব হবে না। বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান জানান, আমরা রেশন কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। মন্ত্রণালয় ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ায় নির্দেশ দিয়েছেন। আশা রাখি খুব শীঘ্রই কারখানাটি চালু হবে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, রেশম কারখানাটি ইতোমধ্যে সার্কের একটি প্রতিনিধি দল ও মন্ত্রণালয়ের ১১ সদস্য টিম পরিদর্শন করেছে। কারখানাটি চালুর লক্ষ্যে সরকার খুবই আন্তরিক। এটি চালু হলে দেশের সর্বোচ্চ মানের কাপড় তৈরি হবে ও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
×