
১৪৮ রান করার পথে শট খেলছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত
বৃষ্টি গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের আড়াই ঘণ্টা কেড়ে নেওয়ার পরও ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ছিল ঝলমলে। বুধবার প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৪৮৪ রানের বড় স্কোর গড়ে দিন শেষ করেছে টাইগাররা। আফসোস তিন-তিনটা ব্যক্তিগত মাইলফলক মিস করেছেন মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্ত আর লিটন দাস।
প্রিয় গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ডাবল সেঞ্চুরি বঞ্চতি মুশফিক আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ১৬৩ রানে, দেড়শ’র ২ রান দূরে দাঁড়িয়ে ১৪৮-এ প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন অধিনায়ক শান্ত, আরও একটি নার্ভাস নাইনটিজে লিটন ধরশায়ী ৯০ রানে! বৃষ্টির আগে স্বাচ্ছন্দ্যে ১১৪ রানের জুটি গড়া দুই তারকা বৃষ্টির পর খেলতে নেমে শূন্য রানের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন।
মুশফিক ১৬৩ রান করলেও সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন দাস। তিনি ১২৩ বল মোকাবিলা করে ১১টি চার আর ১টি ছক্কার সাহায্যে ৯০ রানে ফেরেন। মাত্র ১০ রানের জন্য টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুররি দেখা পাননি টি২০ অধিনায়ক। ষষ্ঠ সেঞ্চুরি পাওয়া শান্ত ২৭৯ বলে ১৫ চার ও ১ ছক্কায় ফিরেছেন ১৪৮ রানে।
টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার নড়বড়ে নব্বইয়ের ঘরে আউট হলেন লিটন। স্পিনার থারিন্দু রতœায়েককে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়েছেন ৯০ রান করা লিটন। লিটন এর আগে ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৪ ও ২০২১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৫ রান করে আউট হয়েছিলেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশিবার ৯০-এর ঘরে আউট হয়েছেন শুধু মুশফিক ৪ বার।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেটে ২৯২ রানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে। সফরকারীদের নামের পাশে তখন ৯০ ওভার। দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর সপ্তম ওভারেই বাংলাদেশ হারায় শান্তর উইকেট। ইনিংসের ৯৭তম ওভারের প্রথম বলে আসিথা ফার্নান্দোর হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলে হতচকিত হয়ে যান শান্ত। এজ হওয়া বল ম্যাথুস মিড অফে ধরলে ১৪৮ রানে থেমে যায় শান্তর ইনিংস। টেস্টে এটা তাঁর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস।
ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে সর্বোচ্চ ইনিংস তিনি খেলেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। ২০২১ সালে পাল্লেকেলেতে লঙ্কানদের বিপক্ষে ১৬৩ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। শান্ত দিনের খেলা শুরুর পর দ্রুতই আউট হতে পারতেন। ইনিংসের ৯৫তম ওভারের তৃতীয় বলে শান্তর বিপক্ষে আসিথা এলবিডব্লিউর আবেদন করলে আম্পায়ার আউট ঘোষণা করেন।
শান্ত সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন। রিভিউতে দেখা যায়, বল লেগ সাইডের বাইরে পিচ করেছে। ১৪৩ রানে বেঁচে যাওয়া শান্ত এরপর আউট হয়েছেন ১৪৮ রান করে। তাঁর বিদায়ে ভাঙে বাংলাদেশের ২৬৪ রানের ম্যারাথন জুটি। ৪৫ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর শান্ত-মুশফিক প্রথম দিনেই হাল ধরেছিলেন। সফরকারীরা চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে ৩০৯ রানে। ম্যারাথন জুটি গড়তে শান্ত-মুশফিককে খেলতে হয়েছে ৪৮০ বল। শান্ত-মুশফিকের ২৬৪ রানের জুটি বিদেশের মাঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের যে কোনো উইকেট জুটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের জুটি মুশফিক-সাকিব আল হাসানের, ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেই জুটিটা ছিল পঞ্চম উইকেটে। বিদেশের মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তিন জুটিতেই জড়িয়ে মুশফিক। ২০১৩ সালে গলে মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে ২৬৭ রানের জুটি গড়তে অবদান রেখেছিলেন মুশফিক। সেই জুটি হয়েছিল গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে। টেস্টে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি মুশফিক গড়েছিলেন গলে সেই ২০১৩ সালে।
বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ ম্যাচ, সর্বোচ্চ রান দুটি রেকর্ডই মুশফিকের দখলে। ৯৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত করেছেন ৬১৭৩ রান। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তিন ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডও তিনি করেছেন। গলে যেভাবে খেলছিলেন তিনি, তাতে টেস্টে চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যেতে পারতেন!