ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

মুশফিকুর রহিমের বিশ্বরেকর্ড

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৪৬, ১৯ জুন ২০২৫

মুশফিকুর রহিমের বিশ্বরেকর্ড

স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পঞ্চম উইকেটে ১৪৯ রানের জুটি গড়ার পথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন দুই টাইগার ব্যাটারÑ মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস

১১ মার্চ ২০১৩, এই গলে ২০০ রান করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নাম লিখিয়েছিলেন ইতিহাসের পাতায়। নিজেদের ২০ বছরের টেস্ট ইতিহাসে আভিজাত্যের আঙিনায় পাঁচ ডাবল সেঞ্চুরির তিনটিই তার নামের পাশে। সেই গলেই সংখ্যাটা চার হতে পারত। বুধবার দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলায় ১৬৩ রান করে আউট হয়েছেন মুশফিক।

দুই দিনব্যাপী ৩৫০ বলের ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন ৯টি চার দিয়ে। ডাবল সেঞ্চুরি না হলেও  ক্রিকেট ইতিহাসেই অনন্য এক কীর্তি গড়েছেন ৩৮ বছর বয়সী এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ারে একটি বলও (বোলিং) না করা ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫৬১৩ রান এখন মুশফিকের। টাইগার লিটল মাস্টার ভেঙে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ১৫৪৬১ রানের রেকর্ড। গলে আফসোসের দিনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ১৪৮ এবং লিটন দাসের ৯০ রানে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৪৮৪ রান তুলে বুধবার প্রথম দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।
মুশফিকের এই রেকর্ডের তৃতীয় স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক (১২,৬৫৪ রান), এরপরই আছেন দুই ইংলিশ উইকেটকিপার ব্যাটার যথাক্রমে জস বাটলার (১১,৮৮১ রান) ও জনি বেয়ারস্টো (১১,৫৮১ রান)। ৪ উইকেটে ৪৫৮ রান। উইকেটে থিতু হওয়া অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। অনায়াসে ৬০০ রানে পৌঁছাবে বাংলাদেশ, এমনই মনে হচ্ছিল! কিন্তু আসা-যাওয়ার প্রতিযোগিতায় সেই ধারণা পাল্টে দেন সফরকারী ব্যাটাররা। গলে বৃষ্টির পর শুরু হয় বাংলাদেশের উইকেট বৃষ্টি।

দিনের শুরু থেকে বৃষ্টি পর্যন্ত একরকম, আর বৃষ্টির পর বাকি সময়ে আরেকরকম- গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের অবস্থা ছিল এমন। মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাসের ১৪৯ রানের জুটিতে দারুণভাবে এগোতে থাকলেও, শেষদিকে হোঁচট খেয়েছে তারা। শেষদিকে মাত্র ২৬ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে এখন অল আউট হওয়ার খুব কাছে সফরকারীরা। দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৪৮৪ রান ১৫১ ওভারে।

স্কোর পাঁচশ’ হবে কি না, সেই শঙ্কাই তৈরি হয়েছে এখন। শেষ ২৬ রানে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৫ উইকেট। লেজের দুই ব্যাটার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা আজ রানের খাতার খোলার জন্য মাঠে নামবেন। গলের উইকেট ফ্ল্যাট, কিন্তু উইকেটের ধারা বদলে যায় আবহাওয়ার প্রভাবে। বৃষ্টির পর আর্দ্র উইকেটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তোপ দাগেন শ্রীলঙ্কার পেস বোলাররা। বলের মুভমেন্ট কাজে লাগিয়ে ৫ উইকেটের মধ্যে ৪টি নিয়েছেন তাঁরা।

দ্বিতীয় সেশনের অনেকটা সময় চলে যায় বৃষ্টির পেটে। ডাবল সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে বৃষ্টির পর খেই হারান মুশফিক। প্রথম দিনের লাঞ্চের আগে উইকেটে এসেছিলেন মুশফিকুর রহিম, ফেরেন দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনে। ৩৫০ বলে ১৬৩ রান করে আসিতা ফার্নান্ডোর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে অল্পের জন্যই সফল হননি। আম্পায়ার্স কলের কারণেই উইকেটটি পেয়েছেন আসিতা। পঞ্চম উইকেটে মুশফিক-লিটন গড়েন ১৪৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। দলীয় ৪৫৮ রানে মুশফিকের পর ফেরেন লিটনও। 
দীর্ঘ অফফর্ম কাটিয়ে ১২৩ বলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯০ রান করেন এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার নড়বড়ে নব্বইয়ের ঘরে আউট হলেন লিটন। স্পিনার থারিন্দু রতœায়েককে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়েছেন ৯০ রান করা লিটন। লিটন এর আগে ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৪ ও ২০২১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৫ রান করে আউট হয়েছিলেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশিবার ৯০-এর ঘরে আউট হয়েছেন শুধু মুশফিকÑ৪ বার।

এর আগে ৯০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৯২ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। দিনের সপ্তম ওভারেই অতিথিরা হারায় অধিনায়ক শান্তর উইকেট। ইনিংসের ওভারের প্রথম বলে শান্তকে (১৪৮) ফেরান আসিতা। শান্তর বিদায়ের পর মুশফিক-লিটনের জুটি। এ দুজন আউট হলে মিলান রতœায়েকের তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ।

উইকেটে মুভমেন্ট পেয়ে টানা তিন উইকেট তুলে নেন বৃষ্টির আগ পর্যন্ত হতাশায় পোড়া মিলান। জাকের আলী অনিক (৮), নাঈম হাসান (১১) ও তাইজুল ইসলামকে (৬) ফেরান তিনি। তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন মিলান, আসিতা ও তারিন্দু। 
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: (আগের দিন ২৯২/৩) ১৫১ ওভারে ৪৮৪/৯ (শান্ত ১৪৮, মুশফিক ১৬৩, লিটন ৯০, জাকের ৮, নাঈম ১১, তাইজুল ৬, হাসান ০*, নাহিদ ০*; আসিথা ২৮-৫-৮০-৩, মিলান রতœায়েকে ২২.৪-৬-৩৮-৩, থারিন্ডু রতœায়েকে ৪৯.২-৩-১৯৬-৩, জয়াসুরিয়া ৪৮-২-১৫৪-০, ডি সিলভা ৩-০-৭-০)
** দ্বিতীয় দিন শেষে

×