
ছবি: সংগৃহীত
ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাবান এই খেলোয়াড় যখন মাঠে নামতেন, লক্ষ লক্ষ ভক্তের হৃদয় কাঁপিয়ে দিতেন। এবার সেই ডেভিড বেকহ্যামকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে 'স্যার' উপাধি। রানী এলিজাবেথের সময় থেকে এই সম্মাননার জন্য বিবেচিত হচ্ছিলেন তিনি, অবশেষে ২০২৫ সালের সম্মাননা তালিকায় স্থান পেয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই সাবেক তারকা।
বেকহ্যামের ক্যারিয়ার শুধু ফুটবলেই সীমাবদ্ধ নয়, স্টাইল আইকন এবং মানবহিতৈষী হিসেবেও তিনি সমানভাবে পরিচিত। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে ১১৫ ম্যাচ খেলা এই মিডফিল্ডার তাঁর ক্যারিয়ারে জিতেছেন ৬টি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, ১টি চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ২টি এফএ কাপ। রিয়াল মাদ্রিদ, লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সি, প্যারিস সেন্ট-জার্মেইয়ের মতো ক্লাবগুলোতেও তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। তবে ফুটবল থেকে অবসরের পরও তাঁর জনপ্রিয়তা কমেনি, বরং ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ, নিজস্ব ফুটবল একাডেমি এবং মিয়ামি ইন্টার এফসি ক্লাব গঠনের মাধ্যমে তিনি ক্রীড়া জগতে অবদান রেখে চলেছেন।
এই সম্মাননা নিয়ে বেকহ্যামের প্রতিক্রিয়া ছিল আবেগঘন: "এটি আমার পরিবার, সহকর্মী এবং সমর্থকদের জন্য একটি অবিশ্বাস্য মুহূর্ত। ছোটবেলায় যখন আমি লন্ডনের পূর্বাংশে ফুটবল খেলতাম, তখন কখনো ভাবিনি এই দিন দেখতে পাব।" তাঁর স্ত্রী ভিক্টোরিয়া এবং চার সন্তানও এই আনন্দে শরিক হয়েছেন।
তবে এই নাইটহুড নিয়ে বিতর্কও কম নেই। কিছু সমালোচক মনে করেন, বেকহ্যামের ট্যাক্স বিষয়ক বিতর্ক এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ এই সম্মাননার জন্য বাধা হওয়া উচিত ছিল। অন্যদিকে, তাঁর সমর্থকরা যুক্তি দেখান যে ফুটবলে তাঁর অবদান এবং বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ প্রভাব বিস্তারে তাঁর ভূমিকা এই সম্মাননার যথার্থ প্রমাণ।
ব্রিটিশ সম্মাননা ব্যবস্থায় নাইটহুড পাওয়া মানে এখন থেকে তাঁর নামের আগে যুক্ত হবে 'স্যার' উপাধি। ২০০৩ সালে রানী এলিজাবেথ তাঁকে ওবিই (অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) সম্মাননা দিলেও নাইটহুড পাওয়ার জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দুই দশকের বেশি। এই উপাধি প্রাপ্তিতে বেকহ্যাম এখন সেই বিশেষ দলে যোগ দিলেন, যেখানে রয়েছেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন, স্যার ববি চার্লটনের মতো ফুটবল মহিরুহরা।
একজন ফুটবলার হিসেবে মাঠে তাঁর দেওয়া অসংখ্য মেমোরেবল মুহূর্ত, 'বেকহ্যাম কার্ভ' নামে পরিচিত সেই জাদুকরী ফ্রি-কিক, এবং বিশ্বজুড়ে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর ভূমিকা - সব মিলিয়ে ডেভিড বেকহ্যামের এই রাজকীয় স্বীকৃতি যেন তাঁর অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারেরই আরেকটি স্বর্ণাক্ষর। শেষ পর্যন্ত, এই সম্মাননা শুধু একজন ফুটবলারকেই নয়, একজন সাংস্কৃতিক আইকনকেও শ্রদ্ধা জানাল, যিনি নিজের প্রতিভা ও পরিশ্রম দিয়ে ক্রীড়া জগতের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছেন।
সাব্বির