ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

দুই ফুটবলার বোনের গল্প

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২১ ডিসেম্বর ২০২০

দুই ফুটবলার বোনের গল্প

রুমেল খান ॥ সদ্য সমাপ্ত নারী ফুটবল লীগে নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশকে। এই ম্যাচে দুই বোন প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলছেন। নাসরিন একাডেমিতে মারজিয়া আক্তার। আর জামালপুরের তানিয়া আক্তার। তানিয়া আক্তারের বয়স ১৫। তারা ৫ বোন, ১ ভাই। তানিয়া সবার ছোট। মারজিয়া দুই বছরের বড়। আপুকে দেখেই ফুটবল খেলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। তখন আমি চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। ময়মনসিংহের কলসিন্দুর স্কুলের হয়ে বঙ্গমাতা ফুটবল দিয়ে খেলা শুরু করা তানিয়ার। তিনি বললেন, ইচ্ছে ছিল ওই দলে আপু থাকলে একসঙ্গে খেলব। কিন্তু সিনিয়র হয়ে যাওয়ায় আপু সেবার খেলতে পারেনি। ঘরোয়া ফুটবলে, ক্লাব পর্যায়েও বড় বোনের সঙ্গে একসঙ্গে খেলার স্বপ্নটা ছিল। অবশেষে সেটা পূরণও হয়েছে। তবে অন্যভাবে। একই দলে নয়, প্রতিপক্ষ হিসেবে। নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির লেফট উইঙ্গার মারজিয়াকে আটকানোর দায়িত্ব দেয়া হয় তারই ছোট বোন লেফট ব্যাক তানিয়াকে। খেলার সময় কি দুই বোনের মধ্যে কোন কথাবার্তা হয়েছে? কিংবা রাগারাগি? লাজুক হেসে তানিয়ার জবাব, না, ওসব কিছুই হয়নি। আপু আপুর মতো খেলেছে, আমি আমার মতো খেলেছি। আসলে আমরা দুই বোনই পেশাদারিত্বের সঙ্গে খেলেছি। খেলার সময় এসব মাথায় আনিনি কে কার বোন। খেলার সময় বেশ ক’বারই তানিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন আক্রমণে ওঠা মারজিয়া। বড় বোনকে প্রতিহত করতে গিয়ে বাধ্য হয়েই বার কয়েক ট্যাকল বা ফাউল করতে হয়েছে তানিয়াকে। এ প্রসঙ্গে তানিয়ার ভাষ্য, আপুকে কয়েকবার আটকাতে পেরেছি, আবার কয়েকবার পারিনি। আমার পাশ কেটে বেরিয়ে গেছে। ম্যাচে এমনটা হতেই পারে। এবারের মহিলা লীগে প্রতিটি দলই বাকি দলগুলোর বিরুদ্ধে দুটি করে ম্যাচ খেলেছে। সেক্ষেত্রে অবশ্য প্রথম লেগে দুই বোন মুখোমুখি হননি। কারণ, প্রথম পর্বের খেলায় তানিয়া খেললেও মারজিয়া খেলেননি। বোনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে খেলতে গিয়ে কেমন লেগেছে? দল হারায় মনটা খারাপ। তবে আপুকে কয়েকবার আটকাতে পেরেছি বলে কিছুটা ভাল লাগছে। তানিয়ার প্রতিক্রিয়া। গতি, দম, স্কিল ... সবকিছুতেই আমরা নাসরিনের চেয়ে পিছিয়ে ছিলাম। তাই হেরেছি। যোগ করেন তানিয়া। নিজেদের দুই মেয়ে দুই দলে মুখোমুখি হবে? মা-বাবা কে কোন্ মেয়েকে সমর্থন করেছেন? তানিয়ার জবাব, তারা সেভাবে কোন দলকেই সমর্থন করেননি। শুধু বলেছেন, তোমরা তোমাদের খেলাটা ভাল করে খেলবে। বিকেএসপিতে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও ব্রাজিলের নেইমারের ভক্ত তানিয়ার ফুটবল নিয়ে ভবিষ্যত লক্ষ্য কী? আপুর মতো জাতীয় দলে খেলতে চাই। মারজিয়া আক্তার বলেন, তানিয়ার সঙ্গে লীগে এবারই প্রথম খেললাম। অনুভূতিটা বেশ রোমাঞ্চকর ছিল। তবে বিকেএসপিতে গিয়ে ওর দলের বিরুদ্ধে এর আগেও একবার খেলেছি। সেটা ছিল জাতীয় দলের সঙ্গে বিকেএসপির একটি প্রস্তুতি ম্যাচ। ওই ম্যাচে আমাদের জাতীয় দল জিতেছিল। বুধবারের ম্যাচে ছোট বোন তানিয়া কয়েকবারই কড়া ট্যাকল করেছেন বড় বোন মারজিয়াকে। তখন কি মেজাজ খারাপ হয়নি? মারজিয়ার উত্তর, না। ম্যাচে যতক্ষণ খেলেছি ততক্ষণই ভুলে গিয়েছিলাম তানিয়া আমার ছোট বোন। সে আমার প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়। তাকে বিট করাই আমার কাজ। এমনটা ভেবেই খেলেছি। মারজিয়া আরেকটা মজার তথ্য দেন জনকণ্ঠকে, তানিয়া আসলে রাইট ব্যাক পজিশনের খেলোয়াড়। এই ম্যাচে আমি খেলেছি লেফট উইঙ্গার হিসেবে। এজন্যই সে তার পজিশন বদলে লেফট ব্যাকে চলে আসে। এটা সে ইচ্ছে করেই করেছে। তানিয়ার সম্পর্কে মারজিয়ার মূল্যায়ন, তার ইচ্ছাশক্তি আছে। ও যদি চেষ্টা করে এবং মন দিয়ে অনুশীলন করে, তাহলে একদিন ভাল খেলোয়াড় হবে। যখন অফ সিজন থাকে কিংবা খেলা বন্ধ থাকে, তখন মারজিয়া-তানিয়া গ্রামের বাড়িতে থাকলে একসঙ্গে অনুশীলন করেন। তখন তারা আর প্রতিপক্ষ নয়, সহযোগী হয়ে যান।
×