
মানুষের বিশ্বাস
পশু-পাখি-পতঙ্গ-মাছ বিষয়ক কত শত বিশ্বাস মানুষের, পশু-পাখি-পতঙ্গ-মাছ যদি জানত!
পাখির বাসা থেকে পড়ে যাওয়া ছ্টো পাখির বাচ্চাকে তুলে পরম যত্নে বাসায় ফেরত দিতে দেখে এক সোমালি বুড়ো বলেছিল, এই বাচ্চাকে নাকি ওর পাখির বাপ-মা আর ছুঁয়েও দেখবে না। মানুষের হাতের ছোঁয়া লেগেছে বাচ্চার শরীরে, মানুষের গন্ধ পেয়ে পাখির বাপ-মা নাকি ওকে আর পাখি বলে মনে করবে না। সোমালি বুড়োটাকে বোঝানো সম্ভব হলো না যে, বেশিরভাগ পাখিরই খুব দুর্বল ঘ্রানেন্দ্রিয় থাকে। মানুষের গায়ের গন্ধ পাখিরা নিতে পারে না।
নানান দেশে গিয়েছি, কতশত মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে, চেনা-জানা হয়েছে। মুরগির কলিজা খেলে সাহস কমে যাবে বলে আমাদের দেশের ছেলেদের যেমন মুরগির কলিজা খেতে দেওয়া হয় না, সে রকম কত বিশ্বাস-অবিশ্বাস সংস্কার-কুসংস্কারের বাস সব দেশের সব মানুষের মনে আছে, ভাবলেই অবাক হতে হয়। এক মেজাজি আরবের সঙ্গে ঝামেলা হচ্ছিল পাকিস্তানি দোকানির। তিন দিরহামে যে ক’টা স্ট্রবেরি সে পেয়েছে, তা নাকি হিসাবমতো হয়নি।
দোকানি ভদ্রলোক আরবের আরবি ভাষার বকাবকি সইতে না পেরে মাথা নিচু করে অন্য কাজে মন দিয়েছিল। খাল্লিবাল্লি আবদুসকে ভয় পাওয়ানো গেছে ভেবে বিজয়ীর ভঙ্গিতে আরবীয় উচ্চারণে ইংরেজিতে ভেসে এলো আরবটার কণ্ঠস্বর, য়্যু বারি য়্যুর হেদ ইন দ্য স্যান্দ লাইক আ অস্ত্রিচ!
অস্ট্রিচ পাখি ভয় পেলে নাকি বালির ভেতর মাথা গুঁজে থাকে। দোকানির মাথাটা নিচু হতে দেখে অস্ট্রিচের কথাই কী না মনে এলো! কে বোঝাবে আরবটাকে, অস্ট্রিচ মোটেও বালির ভেতর মাথা গুঁজে থাকে না। থাকতে পারে না। তা হলে ওটা নিশ্বাস নেবে কী করে? আসল ঘটনা হলো, উড়তে না পারা বিশাল এই পাখিগুলো বালির ভেতর গর্ত বানিয়ে ডিম পাড়ে, ওখানেই ডিম ফোটানোর ব্যবস্থা করে।
দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার বালির গর্তে মাথা ঢুকিয়ে ডিমগুলোর হাল হকিকত দেখে নেয়। ডিমের সব দিকে যেন সমান তাপ পায় সে জন্য ডিমগুলোকে উল্টে পাল্টেও তো দিতে হয়। অথচ এই ব্যস্ত দায়িত্ববান পাখিগুলোকে ভুল বুঝে যাচ্ছি আমরা মানুষরা।
বরফের দেশের পেঙ্গুইনকে নিয়েও এ রকম ভুল বোঝাবুঝি আছে। এই কোট পরা ভদ্রলোকরা নাকি মাথা তুলে আকাশে উড়ে যাওয়া এরোপ্লেন দেখতে গিয়ে উল্টো দিকে উল্টে পড়ে যায়। মেরু অভিযাত্রীদের মধ্যেই এ রকম কথা প্রচলিত ছিল বেশি। পরে তো রীতিতো গবেষণা করে দেখা গেছে, এ কথা মোটেও সত্য নয়। ঘাড় উঁচু করা অবস্থায় নিজের শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখার ক্ষমতা পেঙ্গুইনদের ভালোই আছে।
লাল কাপড় দেখলে ষাঁড় রেগে তেড়ে আসে। এ রকম ধারণা প্রচলিত থাকলেও আসল সত্য হচ্ছে, ষাঁড় বর্ণান্ধ। কোনো রং দেখে আলাদা করতে পারে না এরা। আসলে কাপড়ের নাড়াচাড়া দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠে ষাঁড় (স্যার নন)। আমরা আরও বিশ্বাস করি, উটদের কুঁজে নাকি পানি জমা থাকে। আসলে কিন্তু অন্য প্রাণীদের চেয়ে বেশি পানি এক বারে পান করতে ওস্তাদ এই প্রাণীটি, প্রায় ৩২ গ্যালন! একবার পানি পান করে দুই সপ্তা পর্যন্ত পানি পান না করলেও এদের কোনো সমস্যা হয় না। কেননা পান করা পানি এদের পাকস্থলী আর নাড়িভুঁড়িতে আস্তে আস্তে শোষিত হয়, দ্রুত রক্তস্রোতে মিশে যায় না। এর ফলে উটের পানি পিপাসা লাগে না, পানিস্বল্পতার ঘটনাও ঘটে না।
এই যে দিন আর রাত, রাত আর দিন হচ্ছে, এসব নিয়েও ভাবনার শেষ ছিল না প্রাচীনকালের মানুষের। এসব নিয়েও অনেক গল্প আছে, অনেক। বলে রাখি, দিন আর রাত কেন, মহাজাগতিক ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাপিয়ে রহস্য মাখানো কুংস্কারের বিশ্বাসের টোপ টপ করে গিলে ফেলার অভ্যেস কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষরাও ছাড়তে পারেনি। আমি কি পেরেছি?
ভারতীয় পুরান, গ্রিক আর রোমান পৌরানিক গল্পের মোহে আমি কি পড়িনি? অর্ধেক শরীর ঘোড়ার, এমন মানুষ সেন্টর কি আসলে পশু, তা নিয়ে ভেবেছি। মিসরের স্ফিংক্স, যার মাথাটা মানুষেরই কিন্তু শরীর সিংহের এখনো বিস্মিত করে পর্যটকদের। পেগাসাস নামে রেডিমেড পোশাকের একটি নামকরা ব্র্যান্ড ছিল আমাদের ছোটবেলায়। টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে ছুটে যেত ঘোড়া।
ঘোড়াই তো, তবে গ্রিক আর রোমান পুরনো পেগাসাস নামের ঘোড়াটার পিঠে ছিল ডানা। ওহে, ছোটবেলায় নানি-দাদির মুখে পঙ্খীরাজ ঘোড়ার কথা কি শুনিনি আমরা? ঊাংলার লোক কাহিনীর পঙ্খীরাজ ঘোড়ার গায়ের রং ধবধবে সাদা, পিঠের ডানা উড়িয়ে চলে যায় মেঘের রাজ্যে। পঙ্খীরাজের পিঠে চড়ে মেঘের রাজ্যে যাওয়ার লোভ তো আমারও ছিল।
পৌরানিক আর লোককাহিনীর পশুপাখির চরিত্রগুলোকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন গবেষকরা। প্রথম ভাগে আছে পাখি আর পশুরা। দ্বিতীয় ভাগে মানুষ আর পশুর সংমিশণ। তৃতীয় ভাগে আছে অন্ধকারের ভয়াল প্রাণীরা। চতুর্থ ভাগে পরী। পঞ্চম ভাগে দৈত্য দানোব। এদের মাঝে চীনা এক শিংওয়ালা ঘোড়া কি-লিনের মতো ভালো প্রাণী আছে, নেটিভ আমেরিকান আলগোনকুইনদের ঘাম ঝরানো ভয় জাগানো মানুষের মাংসখেকো প্রাণী উইনডিনগো-ও আছে।
কেউ আবার এক অঞ্চলে ভালো তো আরেক অঞ্চলে ঘৃণা ও ভয় ছড়ায়। ড্রাগনের কথাই ধরি। প্রাচ্যে ড্রাগন সমীহ কুড়ায়। পশ্চিমে ড্রাগন শয়তানের প্রতিরূপ। সেই খ্রিস্টপূর্ব ৩ হাজার সাল থেকে মানুষের চিত্রকলায় পৌরানিক পশুপাখির উপস্থিতি দেখা গেছে। এর মানে কি, পুরাণের বয়স এর চেয়েও বেশি? পৌরানিক পশুপাখির জন্ম তবে কোথায়? গবেষকদের ধারণা, মিসর এবং মেসোপটেমিয়াতে পৃথিবীর বেশিরভাগ বিশ্বাস-সংস্কার-কুসংস্কারের জন্ম হয়েছিল।
মানুষ আর পশুর সংকর প্রাণীর ছবি মিসরীয় চিত্রকলাতে বহুবার দেখা গেছে। কালে কালে এই পশুপাখিরা পশ্চিমা সভ্যতায় পৌঁছে গেছে। তবে জন্ম মিসর আর মেসোপটেমিয়াতে হলেও মানুষের এ রকম বিশ্বাস-অবিশ্বাস, সংস্কার-কুসংস্কারের প্রকৃত যত্ন হয়েছে আফ্রিকাতে। আফ্রিকান পুরাণ অন্য সব পুরাণের মিশ্রণই বলা যায়। সভ্যতার জন্ম আফ্রিকাতে বলেই মায়ের মতো যত্ন দিতে পেরেছে এসব কিছুকে। আফ্রিকার যাযাবর সংস্কৃতি নানা দেশে পৌরানিক বিশ্বাসকে ছড়িয়ে দিতে খুব সাহায্য করেছে।
রোমান পুরাণে কিউপিড এবং সাইকির গল্পে উত্তর মেলে কেন পিঁপড়েরা মাটির নিচে ঘর বানিয়ে থাকে। দেবী ভেনাস কিছু কাজ দিয়েছিলেন সাইকিকে। সাইকির দ্বিতীয় কাজটি ঠিকভাবে করতে সাহায্য করেছিল পিঁপড়ে। দেবী রেগে যান কি না, এই ভয়ে পিঁপড়েরা মাটির নিচেই বাস করতে চায়। বিজ্ঞান বলছে, সত্যিই পিঁপড়েরা মাটির নিচে থাকতে পছন্দ করে।
আকাশের ভূমিকা আর পৃথিবীর সীমাবদ্ধতা বুঝতে দাহোমিন বা ফনদের (এ কালের বেনিন নামের পশ্চিম আফ্রিকার একটি জাতি) পুরাণে বলা উতুতু নামের পাখিটার কথা বলা যায়, যে বজ্রপাত মন্ত্রণালয়ের প্রধান কর্মকর্তা সাগবাতার দূত হিসেবে কাজ করে। পানির খোঁজে সাগবাতা তার ভাই মেভিওসোর কাছে ঈগলকে পাঠায়, পাঠায় শকুন, বিড়াল এবং রং পাল্টানো গিরগিটিকে। পানির খোঁজ পাওয়া গেল বলেই খরা থেকে রেহাই পাওয়া গেল এবং সাগবাতা হয়ে উঠল ‘পৃথিবীর প্রভু’।
কোন কোন প্রাণী মানুষের বিশ্বাসে পবিত্র প্রাণী বলে চিহ্নিত হয়েছে। ম্যান্টিসকে দেখলে মনে হয় প্রার্থনা করছে। বিশ্বজুড়ে এখনো একে পবিত্র বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। আফ্রিকান বুশম্যানরা নাকি অস্ট্রিচ পাখির কাছ থেকে একে চুরি করে আনতে আগুন জ্বালিয়ে ভয় দেখিয়েছিল। খুব কম দেখা যায় এমন সাদাটে লোমের খেকশিয়াল পবিত্র পশ্চিম আফ্রিকার মালিতে বসবাসকারী ডোগোন গোত্রের কাছে। ওরা মনে করে, স্রষ্টা ঈশ্বরের কাছ থেকে শস্য বীজ চুরি করে এনেছিল এবং কৃষি কাজের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল এ-ই। এ না থাকলে মানুষের সভ্যতা কি এভাবে ছড়িয়ে পড়ত? বিশ্বাস হয় না।
তবে পশ্চিম আফ্রিকারই বামবারা গোত্রের বিশ্বাস আবার অন্য রকম। ওরা মনে করে মানুষকে কৃষি কাজ শেখানোর জন্য ঈশ্বর স্বর্গ থেকে একটা অ্যান্টিলোপকে পাঠিয়ে দিয়েছিল। এভাবে পশুকে ‘হিরো’ বানানোর প্রবণতা মন্দ লাগে না কিন্তু। বিখ্যাত হলিউডি সিরিজ ‘ম্যানিম্যাল’-এর কথা মনে আছে? বাংলাদেশ টেলিভিশনে সিরিজটি দেখাত। একটি মানুষ বিপদ দেখলেই যে কোনো পশু বা পাখিতে পাল্টে যেত এবং সেই পশু বা পাখির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুষ্টদের শায়েস্তা করত।
হ্যারি পটার সিরিজে লেখক জে কে রাউলিং সৃষ্টি করেছেন পৌরানিক পশু-প্রাণী গ্রিফিনকে। এর শরীরের পেছনটা সিংহের, সামনের দিকটা বাজপাখির। এ কি জগাখিচুড়ি বানানোর চেষ্টা?
প্রিয় ছড়াকার সুকুমার রায়ও এ রকম খিচুড়ি করতে চেয়েছেন তাঁর ‘খিচুড়ি’ কবিতায়। কী দারুণভাবে বলেছেন এবং নিজের হাতে তুলে নিয়ে এঁকেছেন হাঁস আর সজারুর মিশ্রণে হয়ে যাওয়া হাঁস সজারুকে! বক আর কচ্ছপ ফুর্তি করতে করতে হয়ে গেল বকচ্ছপ। টিয়ামুখো গিরগিটির কোনো নাম দিলেও (টিয়াগিটি হতে পারে কি?) পোকা খাবে না কাঁচা লঙ্কা খাবে তা নিয়ে চিন্তার কথা বলেছেন।
ছাগল চেপে বসল বিছার ঘাড়ে (এটা কি ছাবিছা?), উড়তে চায় বলে বিশাল জিরাফ কী করে যেন বসে পড়ে ফড়িঙের কাঁধে (জিরাড়িঙ!), গরু আর মোরগে (গরুগে কি?) মিলেছে, সিংহ আর হরিণ (সিংহরিণ?) মিলেছে।
কুইজ চলুক। হাতিমি কে? আমি কিন্তু জানি। মনে হয়, সুকুমার রায় সব বাঙালিকেই চিনিয়ে দিয়ে গেছেন একে।
নানা মানুষের নানা বিশ্বাসে পশুপাখি এভাবেই জায়গা করে নিয়েছে। জর্জিয়ার প্রাচীন আদিবাসী ক্রীক ইন্ডিয়ানদের মধ্যে প্রচলিত গল্পটা বলি। সব পশুপাখি অর্থাৎ সমস্ত প্রাণিকুল জড়ো হলো এক জায়গায়। আলোচনা হবে বিশেষ একটি ব্যাপারে। ব্যাপারটা আর কিছুই নয়, দিন আর রাতের কথা। আলোচনা সভার নেতৃত্ব দিচ্ছে দাঙ্গাবাজ ভল্লুক নোকোজি। প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। সবাই উত্তেজিত। কেউ কেউ রাতকে পছন্দ করছে।
এরা চাইছে সারাক্ষণই রাত থাকুক। কেননা, রাতে জীবনযাপন করা অনেক আরামের। ওদের পছন্দ তাই রাত। বাকিদের কিন্তু সেটা পছন্দ হচ্ছে না। ওরা চাইছে সারাক্ষণই দিন থাকুক, রাতের উপস্থিতি মানা হবে না। কাঠবিড়ালি চু-টুল্ক-চু বসে ছিল র্যাকুন ভিট্কোর পাশে।
এখন র্যাকুনরা নাকি থাকে উত্তর আমেরিকায়। গায়ে অনেক লোম। ঝাঁকড়া চুলের লেজ। মাংসাশী জন্তু।
গল্পের র্যাকুন আর কাঠবিড়ালি বসে ছিল পাশাপাশি। চু-টুল্ক-চু অবাক হয়ে ভিট্কোর লেজের দিকে তাকাল। ভিট্কোর লেজে সাদা আর কাল ডোরাকাটা দাগ। নকশাটা এমন, সাদা শেষ হয়ে কাল এসেছে। আবার, কাল শেষ হতেই সাদার শুরু। পর পর আছে সাদা আর কাল দাগগুলো। চু-টুল্ক-চু বুদ্ধি পেয়ে গেল। ও প্রস্তাব করল, রাত আর দিন তো এ রকম একটার পর আরেকটা আসতে পারে। ভিট্কোর লেজের সাদা আর কালো ডোরার মতো।
চু-টুল্ক-চুর বুদ্ধি দেখে আসলেই হতবাক হয় গেল সবাই। সিদ্ধান্ত হলো, রাতের পর দিন আসবে, দিনের পর রাত। সভাপতি নোকোজির আঁতে ঘা লাগল। সামান্য কাঠবিড়ালির এত বুদ্ধি! এ তো হতে পারে না। এ মানা যায় না।
নোকোজি ভল্লুক দেখি ফিল্মের ভিলেনদের মতোই মনে মনে ঠিক করল, শায়েস্তা করতে হবে চু-টুল্ক-চুকে। এক দিন সুযোগ বুঝে নোকোজি চু-টুল্ক-চুকে ধরার আশায় থাবা বাড়িয়ে দিল। ধরতে পারল না ঠিকই, কিন্তু দাগ বসে গেল কাঠবিড়ালিটার পিঠে। সেই থেকে কাঠবিড়ালিদের পিঠে ডোরা কাটা দাগ দেখা গেল।
যে কোনো কাঠবিড়ালি দেখলে তার পিঠের ডোরা কাটা দাগ দেখে আমি কিন্তু গুনতে বসি, দিন ক’টা, রাত ক’টা, কে কার আগে আসবে ইত্যাদি। আসলে পশুপাখি বিষয়ক মানুষের এ রকম বিশ্বাস টিকে আছে লাখ লাখ বছর ধরে। জংলি ইন্ডিয়ান, আদিম মানুষ, এদের ভেতর নানা কিছিমের উটকো বিশ্বাস ছিল। ওদেরটা না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু আধুনিক শিক্ষিত মানুষের ভেতরও যে ওসব আছে।
ঘর থেকে বেরুনোর সময় হাঁচি দেওয়া অলুক্ষণে, এটা মানুষ বিশ্বাস করে। যদিও এসব বিশ্বাস করা ঠিক না। সভ্যতা উন্নত হচ্ছে। আমরা অনেক উন্নত হয়েছি। পরিবেশের কারণে বিশ্বাসের একটু হেরফের হয়েছে, এই যা। আধুনিক মানুষের প্রতিদিনকার জীবনে প্রযুক্তি ভূমিকা রাখলেও, এখনো অদ্ভুত বিশ্বাসগুলোও পাশাপাশি বাস করছে। যদি কিছু হয়, এই ভয়ে মানুষ কিছুতেই পারে না বিশ্বাসমুক্ত হতে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এক সংস্কৃতিতে যে বিশ্বাসটি শুভ কিছুর প্রতীক, তা-ই হয়তো অন্য সংস্কৃতিতে ভয় ডেকে আনছে। পশুপাখির অধিকার নিয়ে সচেতনতা যত বাড়বে, পশু-পাখিদের নিয়ে এ রকম টানা-হেঁচড়া কমবে বলে মনে হয়। বিশ্বাসের নামে কাউকে যা নয় তা ভেবে নেওয়াটা ঠিক নয়। পশুপাখিরা জানতে পারলে ব্যাপারটা কিভাবে নেবে, ভাবছি।
লেখক : শিশু সাহিত্যিক