ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নাসার SPHEREx মিশন থেকে আসবে অজানা মহাজাগতিক তথ্য, আশা বিজ্ঞানীদের

প্রকাশিত: ১০:২১, ১০ জুন ২০২৫

নাসার SPHEREx মিশন থেকে আসবে অজানা মহাজাগতিক তথ্য, আশা বিজ্ঞানীদের

ছবিঃ সংগৃহীত

নাসা তাদের নতুন মহাকাশ মিশন ‘SPHEREx’ এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব গবেষণায় এক বিশাল অগ্রগতি আনতে চলেছে। ৪৮৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি এই আধুনিক টেলিস্কোপটি স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটে চেপে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

কী এই SPHEREx?
এর পূর্ণ নাম—Spectro-Photometer for the History of the Universe, Epoch of Reionization and Ices Explorer। এই টেলিস্কোপটি এমন সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করবে যা মানবচোখে দেখা যায় না। এটি প্রতি বছর দুইবার পুরো আকাশ স্ক্যান করে ৪৫০ মিলিয়নেরও বেশি ছায়াপথ এবং ১০ কোটির বেশি মিল্কিওয়ে তারকার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে।

ছোট অথচ শক্তিশালী টেলিস্কোপ
টেলিস্কোপটির ওজন মাত্র ৫০০ কেজি—একটি গ্র্যান্ড পিয়ানোর চেয়েও হালকা। এর বিদ্যুৎ খরচও খুব কম—মাত্র ২৭০ থেকে ৩০০ ওয়াট, যা একটি রেফ্রিজারেটরের চেয়েও কম। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার বেথ ফ্যাবিনস্কি বলেন, “SPHEREx দেখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে ছোট টেলিস্কোপ দিয়েও বড় বিজ্ঞান সাধন সম্ভব।”

প্রাণের উপাদান খুঁজবে মহাশূন্যে
SPHEREx-এর সবচেয়ে বিশেষ বৈশিষ্ট্য এর স্পেকট্রোফটোমিটার, যা আলোকে ১০২টি আলাদা রঙে বিভক্ত করতে পারে। এর ফলে বরফ জমাট বস্তুর মধ্যে থাকা হাইড্রোজেন, কার্বন, অক্সিজেনের মতো মৌলিক উপাদান শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এই উপাদানগুলো কীভাবে নক্ষত্র থেকে গ্রহে ছড়িয়ে পড়ে—তা জানার মাধ্যমে ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও বিস্তার বোঝার নতুন পথ
SPHEREx-এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো ‘কসমিক ইনফ্লেশন’—বিগ ব্যাং-এর পরপর ঘটে যাওয়া দ্রুত সম্প্রসারণের প্রমাণ খুঁজে বের করা। ছায়াপথের বণ্টন বিশ্লেষণ করে মহাবিশ্বের প্রথম দিককার ইতিহাস জানা সম্ভব হবে। এই তথ্য হয়তো আমাদের বর্তমান মহাবিশ্বের গঠন ও রূপ নিয়ে নতুন ব্যাখ্যা দেবে।

জল ও প্রাণ খুঁজে পেতে সহায়ক হতে পারে
SPHEREx টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশে বরফজাত পানি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অণুর উপস্থিতি শনাক্ত করে বোঝা যাবে কোন গ্রহ বা চাঁদে প্রাণের উপযোগী পরিবেশ থাকতে পারে কি না। এমনকি, এটি সৌরজগতের সেই রহস্যজনক নবম গ্রহের সন্ধানেও সহায়ক হতে পারে, যার অস্তিত্ব নিয়ে বহুদিন ধরেই জল্পনা চলছে।

নতুন রহস্য উন্মোচনের আশা
SPHEREx প্রজেক্ট ম্যানেজার জেমস ফ্যানসন বলেন, “আমি আশা করি এই মিশনের ডেটা থেকে এমন কিছু উঠে আসবে যা আমরা কল্পনাও করিনি।” SPHEREx প্রকল্পটি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আগের আবিষ্কারের ভিত্তিতে আরও গভীর অনুসন্ধানের সুযোগ তৈরি করবে।

এই টেলিস্কোপ থেকে সংগৃহীত তথ্য আগামী কয়েক দশক গবেষকদের ব্যস্ত রাখবে এবং আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে বহু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে জন্ম দেবে নতুন নতুন জিজ্ঞাসার। NASA-এর এই প্রকল্প ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

নোভা

×