ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাচারকারীদের ধরতে ডিজিটাল সূত্র

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পাচারকারীদের ধরতে ডিজিটাল সূত্র

সেলেনা লার্সন সিএনএন মানব পাচারকারীরা বিজ্ঞাপন দেয়ার এবং তাদের অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপ চালানোর জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করে। তাদের এসব কর্মকা-ের কিছু ডিজিটাল সূত্রও তারা রেখে যায়। এদের খপ্পরে পড়া নারী-পুরুষদের খুঁজে বের করা ও পাচার রোধে সাহায্য করার জন্য গ্লোবাল ইমানসিপেকেশন নেটওয়ার্ক নামে একটি সংগঠন ওই সূত্রগুলো সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে থাকে। সংগঠনটি অনুসন্ধান ও পরীক্ষা নিরীক্ষার ওই ড্যাটা বিশ্লেষণকে কাজে লাগায় এবং অনলাইনে শেয়ার করা তথ্যাবলী ও ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। মাইক্রোসফট স্পøাংক ও রেকর্ডেড ফিউচারসহ বিভিন্ন কর্পোরেট পার্টনারের সঙ্গে সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী পরিচালিত এই সংগঠনটি মানব পাচার সংক্রান্ত ডাটার সম্মান ও বিশ্লেষণ করার একটা সন্ধানযোগ্য ড্যাটাবেস ও কৌশল তৈরি করেছে। গ্লোবাল ইমানসিপেকেশন নেটওয়ার্ক বা সংক্ষেপে ‘জেন’-এর নির্বাহী পরিচালক শেরি কালটাগিরন বলেন, ভিকটিমদের শণাক্ত করা, উদ্ধার করা এবং তারা যাতে আবার পাচারকারী চক্রের শিকারে পরিণত না হয় সেই ব্যবস্থা করার জন্য অনেক কিছুই করার আছে। এদের একটা বাহ্যিক প্লাটফর্ম আছে। নাম মিনার্ভা। এটি বিটা সফটওয়্যারে পরিচালিত। পরিকল্পনা আছে যে শেষ পর্যন্ত এটা বিনামূল্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ভিকটিম সহায়তা প্রদানকারীদের দেয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে ইমেজ প্রসেসিং, ডাটা বিশ্লেষণ, বিটি কয়েন বিশ্লেষণ এবং পাবলিক রেকর্ড সমৃদ্ধকরণ। পাচারকারীদের ব্যবহৃত বিজ্ঞাপন, কোন নম্বর বা ওয়েবসাইটের মতো জিনিসগুলোর সন্ধানে পুলিশ এগুলোকে কাজে লাগাতে পারবে। অভ্যন্তরীণভাবে জেনস তার সংগৃহীত ড্যাটা মানব পাচারের প্যাটার্ন পরীক্ষা ও বিশ্বব্যাপী গতি-প্রকৃতি যাচাইয়ের কাছে ব্যবহার করে থাকে। প্রতিবছর লাখ লাখ নারী-পুরুষ পাচার হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাবে বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ১০ লাখ নারী-পুরুষ বাধ্যতামূলক শ্রমের শিকার বা বেগার শ্রমিক। জাতিসংঘের হিসেবে বিশ্বব্যাপী যত মানব পাচার হয় তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই শিশু। বর্তমানে আয়হীন কিছু সাহায্য সংস্থা মানব পাচারের সন্ধান বের করতে জেনসের ড্যাটা ব্যবহার করে থাকে। তার মধ্যে আছে থর্ন ও পোলাবিস প্রকল্প। কালটাগিরন বলেন জেনসের অনন্যতা এখানে যে এটি ২২টি দেশ ও ৮০টি অঞ্চল থেকে সব ধরনের মানব পাচার সংক্রান্ত ড্যাটা সংগ্রহ করে। ক্রেইগলিস্ট, ব্যাক প্যাকেজ এবং ডার্ক ওয়েবসাইটসহ নানা ধরনের সূত্র থেকে জেনস ড্যাটা নেয়। সøাংক নামে একটি ড্যাটা বিশ্লেষণকারী প্লাটফর্ম তার প্রযুক্তি জেনসকে দান করেছে। জেনস সংগৃহীত ড্যাটা বর্ণনাক্রমিক তালিকাভুক্ত করে এবং কীওয়ার্ড, ফোন নম্বর ভৌগোলিক উপাত্ত বা ব্যবহারকারীর নাম বিশ্লেষণ করে ড্যাটায় সন্দেহজনক সঙ্কেতগুলোর সন্ধান করে। যেমন ধরুন সেই সব এ্যাড সন্দেহজনক মনে হয় যদি সেগুলোতে একই ফোন নম্বর থাকে অথচ দুই ভিন্ন দেশে দেখা দেয়। জেনস প্লাটফর্ম ইমোজি বা ইমেজের মধ্যে আবদ্ধ টেক্সটসহ বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত ভাষাও পরীক্ষা করে দেখে। সেক্সের কাজে ব্যবহারের জন্য কম বয়সী মেয়ে পাচার করা হয়েছে বা হচ্ছে তা বোঝার একটা লক্ষণ হতে পারে বিজ্ঞাপনে ‘লোলিটা’ ও ‘ফ্রেশ’ এই জাতীয় শব্দাবলীর ব্যবহার। এ্যাডে শেয়ার করা ভাষা ও ড্যাটা পরীক্ষা করেও স্বাধীন যৌন কর্মী এবং পতিতাবৃত্তির কাজে পাচার করা মহিলার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। তবে যৌন ব্যবসার কাজে মানব পাচারের তুলনায় শ্রমের কাজে মানব পাচারের হদিস পাওয়া অধিকতর কঠিন, ‘আউল সাইবার সিকিউরিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এন্ড্রু লিউম্যান বলেন, মানব পাচারকারীরা চোরাচালান সার্ভিসের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য প্রথমে ঘন ঘন ফেসবুকের আশ্রয় নেয়। তারপর সাঙ্কেতিক চ্যাট এ্যাপে চলে যায় এবং তথ্য ও যোগাযোগের জন্য ‘টব’-এর মতো অনামা টুল ব্যবহার করে। মানব পাচারকারীদের ইন্টারনেট ও ডার্কনেট ব্যবহার করার একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে কেনা, বেচা বা লোকজনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা। যে কোন ব্যবসার মতো এই ব্যবসাও তার সিংহভাগ কাজকর্মের জন্য ওয়েবের ওপর নির্ভর করে। লিউম্যানের প্রতিষ্ঠানটি কয়েক মাস পর পর ৪০ কোটি পৃষ্ঠার ড্যাটা ওয়েব থেকে বের করে আনে। এর বেশির ভাগই আসে ডার্ক ওয়েব থেকে। অতঃপর সেই ড্যাটা জেনকে দেয়া হয়। জেন সেই তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সন্দেহজনকগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রদান করে। অনুবাদ ॥ এনামুল হক
×