
ছবি: সংগৃহীত
ধর্মীয় শিক্ষাটাকে আমরা কেন যেন কেবলমাত্র আলেম নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। অথচ শিক্ষা কিন্তু এককর্ডিং টু ইসলাম আমি জানি আমাদের মূল দায়িত্ব নিজের। এখন আগেকার সময় আমি বুঝতাম যে আলেমদের উপর আমাদেরকে পুরোপুরি নির্ভর করতে হতো। কিন্তু এখন তো ইন্টারনেটের এই যুগে আপনি বই খাতা পুস্তক যে পরিমাণ রিসার্চ বাইরে হয় ধর্ম নিয়ে, সেটা তো আমাদের যার যার দায়িত্ব ছিল ইসলাম সম্পর্কে জানা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌস।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই যে ঈদের যে মাহাত্ব, যে স্পিরিচুয়াল বিউটি আমরা বলি—এই যে কুরবানি মানে, কেন একটা উৎসাহ দেয়া হয় নিজের গৃহপালিত পশুকে দেয়া, কেন বলা হয়েছে, ঠিক কোন প্রেক্ষাপটে এই বিসর্জনের কথা বলা হয়েছে—তাহলে আজকে এই শতাব্দীতে এসে এটা রিলেশনশিপটা কোথায়? আমরা কে কতবার এটা আলোচনা করেছি, কে কতবার বোঝার চেষ্টা করেছি?
তিনি আরো বলেন, আত্মউপলব্ধি, আত্মশুদ্ধি যদি আমরা বলি—কে কতটুকু সিদ্ধান্ত নিয়েছি এক বছর থেকে আগামী বছরে? আমরা যদি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াই, দাঁড়াব—আমরা সেটাকে মাথায় রেখে যে আমি কতটুকু আত্মশুদ্ধির দিকে গিয়েছি, সেই আলোচনা কিন্তু আমাদের পরিবারেও আজকাল আর হয় না। সেটা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও হয় না।
সায়মা বলেন, একমাত্র দিয়ে রেখেছি, ঠিক ঈদের আগে কয়েকটা অনুষ্ঠানে হবে, টিভির কতগুলো চ্যানেলে হবে, যেটা কেউ হয়তো দেখবেও না, স্ক্রল করে চলে যাবে। হয়তো সেইদিন নিউজপেপারে দুই একটা ফিচার আসবে, কেউ হয়তো সেটা পড়বে ও না। তাহলে এই যে আলোচনা, এই যে স্পিরিটটা নিয়ে কথা বলা—ঠিক আমাদের আত্মউপলব্ধি, একটা দর্পণের সামনে দাঁড়ানো, যে গত বছর আমি যেখানে ছিলাম, যে প্রমিসগুলো করেছিলাম, কোনগুলো ঠিক আমি বিসর্জন দিব, ঠিক এক আল্লাহ বলি বা যে যেভাবেই ভাবছি—সেই রিফ্লেকশন তো একেবারেই নাই।
তিনি বলেন, ঈদ এখন হয়তোবা আরবান সোসাইটির জন্য একটা উৎসব—কে কত বড় গরু কিনলো। আমরা ছাগলকাণ্ড এর আগে দেখেছি, ওটা হয়তো একটা লাইমলাইটে এসছে। আপনি প্রত্যেকটা এপার্টমেন্টে যেয়ে দেখেন এখন ঢাকা শহরে—এটা কিন্তু মোটামুটি দুই একদিন আগে থেকে লাইট টাইট জ্বালিয়ে। এবং বরং আপনি যখন একটা পশুকে নিয়ে যাবেন, আমার কাছে এটা খুব কুচছিত একটা কালচার মনে হয়—তার দাম জিজ্ঞেস করাটা। এবং আপনি যখন নিয়ে যাচ্ছেন সবচেয়ে বড় গরুটা—আপনাকে দিতে হবে।
অথচ এইরকম এবং মিডিয়া কভারেজটাও কিন্তু তাই। ওভাবেই হয়। হ্যাঁ। ওইভাবে হয়। একদম সম্পূর্ণ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়েছে। এটা বহু বছর ধরে। সেখান থেকে বের হয়ে আসার... আমার কাছে মনে হয় যে আবার গোড়ায় ফেরত আসতে হবে। আবার পরিবার কেন্দ্রিক এই আলোচনাগুলো হতে হবে—ধর্ম কেন, কোনটা কী বলেছে, ধর্ম অন্ধত্বের না। ধর্মকে প্রশ্ন করে নিয়ে, নিজের পরিবারে, নিজের বাবা-মাকে প্রশ্ন করা থেকে আমাদেরকে... আমরা কে কয়জন ধর্মের বিষয়ে জ্ঞানী?
তিনি বলেন, আপনি সত্যি কথা বলেন, তা না হলে এটা চলতেই থাকবে। অন্যের বোঝা দিয়ে আমরা নিজে বুঝবো, বিতর্ক সৃষ্টি করব। আলোকিত ধর্মীয় জ্ঞানে আলোকিত আমরা কিন্তু কখনোই হবো না। তাই যতদিন যাবে, যতদিন আমরা শিক্ষিত হব, ঈদ উৎসবটা ওই যে টাকার খেলা—কে কত বড় পশু দিল, সেটার খেলাই চলবে। এবং কেউ হয়তো... আমরা সেটা একটা আনুষ্ঠানিকতার ভেতরে রাখবো।
ফরিদ