ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিল গেটসের ৫ টিপস: ধীরে ধীরে ধনী হওয়ার সহজ উপায়

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১০ জুন ২০২৫

বিল গেটসের ৫ টিপস: ধীরে ধীরে ধনী হওয়ার সহজ উপায়

বিল গেটস শুধু মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নন, তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন। কিন্তু এই অবস্থানে তিনি পৌঁছেছেন শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতা বা ব্যবসায়িক আইডিয়ার কারণে নয়—বরং দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা, সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা এবং অদম্য কৌতূহলের মাধ্যমে। 

তার অনেক ধনসম্পদ তৈরির কৌশল যে কেউ অনুসরণ করতে পারে—আপনার যদি বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা না-ও থাকে, তবুও। চলুন জেনে নিই বিল গেটস অনুপ্রাণিত পাঁচটি সহজ টিপস, যা আপনাকে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারে।

১. এমন দক্ষতা গড়ে তুলুন যেগুলো কখনো পুরনো হয় না
গেটস সারাজীবনের একজন শিক্ষার্থী। তিনি প্রতিবছর অসংখ্য বই পড়েন এবং নতুন বিষয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা করেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গেটস বলেন, “নতুন কিছু শেখা এবং নিজের বোঝাপড়া যাচাই করার প্রধান মাধ্যম এখনো পড়াশোনা।”

তিনি কোড শেখা, ডেটা বিশ্লেষণ এবং বিজ্ঞান বা সিস্টেম-ভিত্তিক চিন্তাধারায় দক্ষ হওয়ার ওপর জোর দেন। তবে শুধু প্রযুক্তিগত বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকার দরকার নেই। লেখালেখি, সমস্যা সমাধান বা নেতৃত্বের মতো ‘চিরকালীন’ দক্ষতাও আপনাকে জীবনে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে।

২. ধৈর্য ধরুন, অগ্রগতির গতি ধীর হলেও আশাবাদী থাকুন
বিল গেটস দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য স্থির করতে ভালোবাসেন। তিনি বহু বছর ধরে দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সমস্যা ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি নিয়ে কাজ করে আসছেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, “চরম সংকটেও আশাবাদই নতুন উদ্ভাবনের জন্ম দেয়, যা দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে পারে।”

অর্থনৈতিক দিক থেকেও এই মনোভাব জরুরি। শুরুটা যদি শূন্য থেকে হয়, তবুও হাল না ছাড়া—এটাই মূল চাবিকাঠি। গেটস বলেন, দ্রুত বড়লোক হওয়া সম্ভব না হলেও ধৈর্য, আশাবাদ এবং নিয়মিত চেষ্টা একসঙ্গে করলে উন্নতি হবেই।

৩. সঞ্চয়ে সাবধান, বিনিয়োগে সাহসী হোন
গেটস একবার বলেন, “একজন হতাশাবাদীর মতো সঞ্চয় করুন, আর আশাবাদের মতো বিনিয়োগ করুন।” অর্থাৎ, ভবিষ্যতের খারাপ সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন, কিন্তু বিনিয়োগের সাহস হারাবেন না।

মাইক্রোসফটের সময় তিনি এমন ব্যবস্থা রেখেছিলেন যাতে এক বছর আয় না-ও আসলে প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারে। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে ইন্টারনেট, সফটওয়্যার ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির মতো অগ্রগামী খাতে বিনিয়োগ করেছিলেন, যখন এসব এখনকার মতো আলোচনায় ছিল না।

৪. ব্যস্ততা নয়, গুণগত কাজই এগিয়ে নেয়
একসময় গেটস মনে করতেন ঠাসা সূচি মানেই সাফল্যের চিহ্ন। কিন্তু ওয়ারেন বাফেটের কাছ থেকে তিনি শিখেছেন, ব্যস্ত থাকাই সব কিছু নয়। গেটস বলেন, “বাফেটের ক্যালেন্ডারে সপ্তাহজুড়ে একটাও অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।”

এরপর থেকে তিনি নিজের সময়কে আরও গুরুত্বসহকারে ব্যবস্থাপনা করতে শিখেছেন—পড়ার জন্য, চিন্তার জন্য এবং গভীর কাজের জন্য নিরবিচারে সময় রেখে দেন।

৫. ভবিষ্যৎমুখী চিন্তা করুন
গেটস সবসময় চেষ্টা করেছেন সময়ের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে। সফটওয়্যারের যুগে তিনি মাইক্রোসফট গড়েছিলেন। মহামারি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসার অনেক আগেই তিনি গণস্বাস্থ্যে বিনিয়োগ শুরু করেন।

এক্স-এ (পূর্বের টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেন, যদি এখন ছাত্র হতেন, তাহলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জ্বালানি ও বায়োসায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতেন।

এটা আমাদের জন্যও ইঙ্গিত: চাকরি, ব্যবসা বা ইনভেস্টমেন্ট বেছে নেওয়ার সময় শুধু আজকের ট্রেন্ড না দেখে, আগামী দশক কী বদলে দিতে পারে সেটার দিকেও নজর দিন।

ধনী না হলেও ভাবুন বিল গেটসের মতো
বিলিয়ন ডলার না থাকলেও বিল গেটসের মত করে ভাবা যায়। কৌতূহল, অধ্যবসায়, ভবিষ্যৎ-চিন্তা—এই গুণগুলো আজই শুরু করা যায়, খরচ একটুও নেই। টেক জায়ান্ট না হলেও এসব অভ্যাস যেকোনো মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে শক্ত ভিত্তি গড়তে সাহায্য করতে পারে।

সানজানা

×