
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যকার দ্বন্দ্বে সাড়ে তিন কোটি গ্রাহক সেবা বঞ্চিত ও ভোগান্তি লাঘবে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে যৌক্তিক সমাধান বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জুলাই ঐক্য।
শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সংস্কার, আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ীকরণসহ সাত দফা দাবিতে গত ১১ দিন ধরে বৃষ্টিতে ভিজে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি সারাদেশেও সমিতিগুলোতে কর্মবিরতি পালন করছে তারা। এতে শহর থেকে গ্রামে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাহকরা। ভোগান্তি বাড়ার পাশাপাশি রাজধানীর বাইরে যেসব শিল্প রয়েছে সেগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এমন অবস্থায় সরকার নীরব থাকতে পারে না। তিনি বলেন, সাড়ে তিন কোটি গ্রাহকের চিন্তা করে তাদের সঙ্গে বসুন, তাদের দাবিগুলোর যেগুলো ন্যায্য সেগুলো মেনে নিন, যেগুলো অন্যায্য সেগুলোও প্রকাশ করুন। কেন অন্যায্য সেটা তাদের জানান। কিন্তু এভাবে অনিশ্চিত কিছু চলতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের আরেক সংগঠক এবি জোবায়ের বলেন, চব্বিশের ছাত্রজনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সংস্কার কার্যক্রম। আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকার সংস্কারের চেষ্টা করলেও নানা কারণে অনেকেই এই সংস্কার গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। আমরা দেখছি সচিবালয়ে কীভাবে কাজ বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে একটি বিশেষ মহল। আমরা গত ২০ মে ৪৪ আমলার তালিকা প্রকাশ করেছিলাম। বলেছিলাম তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কিন্তু এখনও দৃশ্যমান কিছু দেখছি না।
গত কয়েকদিন যাবৎ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৬-৭ হাজার লোক মানবেতর জীবনযাপন করছে সংস্কারসহ নানা দাবিতে। গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে আমরা জানতে পারি শেখ হাসিনা সরকারের সময় থেকেই তারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে ছিল। শেখ হাসিনা সরকার সে সময় আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে। অনেককে বরখাস্ত করে। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরেও তারা একই দাবিতে মাঠে নামলে দেখা যায় সেই একই কায়দায় তাদের দমনের চেষ্টা করা হয়। আন্দোলনকারীদের এবার ফ্যাসিবাদের দোসর বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমরা জানতে পেয়েছি গ্রামাঞ্চলসহ দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪৫ হাজার কর্মী রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে জনগণের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, চলমান এই সংকটের বিষয়ে কথা বলতে জুলাই ঐক্যের পক্ষ থেকে বারবার চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।বারবার চেষ্টা করা হয়েছে সরকার এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
জোবায়ের বলেন, আমরা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনারা নিজেরা বসে এটি সমাধান করুন। যদি এখানে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয় তাহলে সংস্কার করুন।
বৈষম্যহীন যে বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের হাজারো ছাত্র-শ্রমিক-জনতা বুলেটের সামনে নিজের বুক পেতে দিয়েছিল, স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মধ্যে দ্বৈত ব্যবস্থাপনা, বৈষম্য চলতে পারে না। তাদের কিছু দাবি যৌক্তিক রয়েছে। সরকারের উচিত ছিল আরো আগেই আন্দোলনকারীদের সাথে বসে উক্ত সমস্যার সমাধান করা। সরকার সে ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে আমরা মনে করছি।
জুলাই ঐক্যের নেতারা বলেন, ঝড়-বৃষ্টিতে যারা ১১ দিন রাস্তায় পড়ে আছে তাদের কাজে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। ঈদুল আজহার আগেই তাদের বিষয়টি সমাধান করুন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি সমাধান না হলে জুলাইয়ের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। যেহেতু পুরো বিষয়গুলো রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অবগত তাই সম্ভব হলে সকলের সমন্বয়ে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে দ্রুত এটির ফয়সালা করার অনুরোধ করে জুলাই ঐক্য।
আফরোজা