
ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ার স্বাস্থ্যসেবা ও ডায়াবেটিক হাসপাতালে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ায় রোগী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগে প্রশ্ন উঠেছে তাদের একাডেমিক যোগ্যতা নিয়েও। এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা বিএনপির নেতারা প্রতিষ্ঠানটির আহ্বায়ক নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন মুকুলের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।
দুপুরে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সহিদ উন নবী সালাম এবং কে এম খায়রুল বাশারের নেতৃত্বে একটি দল শহরের নবাববাড়ি রোডে অবস্থিত হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়ে প্রবেশ করে মুকুলের নামফলক খুলে ফেলে এবং তার কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় বিএনপি নেতা সহিদ উন নবী সালাম সাংবাদিকদের বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট মুকুলের নেতৃত্বে এ হাসপাতাল চালানো হয়েছে। এখানে অব্যাহত নিয়োগ বাণিজ্য ও লুটপাট চলেছে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে এমন লুটপাট আর বরদাশত হবে না।”
কে এম খায়রুল বাশার বলেন, “মুকুল পদ ছাড়ার আগেই নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবারো বাণিজ্যের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সচেতন বগুড়াবাসী তা বাস্তবায়ন হতে দেবে না।” হাসপাতালের একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগে স্বচ্ছতা ছিল না এবং অনেকেরই প্রয়োজনীয় ডিপ্লোমা বা একাডেমিক যোগ্যতা নেই। বিশেষ করে এক্স-রে বিভাগে ইউসুফ, আলট্রাসনোগ্রাম বিভাগে চন্দনা, ল্যাবে সবুজ, ইসিজি বিভাগে সুফিয়া ও জাহানারা এবং রক্ত সংগ্রহ বিভাগে মামুন উর রশিদের বিরুদ্ধে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সেবাগ্রহীতারা অভিযোগ করেছেন, অদক্ষ কর্মীদের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসার মান ভেঙে পড়েছে। এর ফলে একাধিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকলেও তিনিই এখনো হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করছেন—এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তার জামাই, জেলা আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজী জুয়েলের বিরুদ্ধেও একাধিক হত্যা ও বোমা হামলার মামলা রয়েছে। অভিযোগ আছে, তিনিও হাসপাতালের কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত।
জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে এই শ্বশুর-জামাই জুটির বিরুদ্ধে। হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির বিষয়েও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ব্যয় ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা না থাকায় ক্ষুব্ধ জনগণ দ্রুত তদন্ত ও শুদ্ধি অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, হাসপাতাল যেন রাজনৈতিক ব্যক্তির স্বার্থসাধনের কেন্দ্র না হয়ে ওঠে, সে লক্ষ্যে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা এবং নতুন করে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন এখন সময়ের দাবি।
আসিফ