ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

রক্তদান একটি ভালো অভ্যাস

প্রকাশিত: ১৯:৪২, ১৬ জুন ২০২৫

রক্তদান একটি ভালো অভ্যাস

দিনে দিনে রক্তের চাহিদা যে হারে বাড়ছে, সে হারে পেশাদার বা স্বেচ্ছা রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ছে না। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের যে সংখ্যা, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে রক্তের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এজন্য স্বেচ্ছায় রক্তদানে আরও বেশি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের সবচেয়ে পুরানো স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন সন্ধানী। তাদের হিসাবে দেশে বছরে ৬ লাখ ব্যাগের মতো রক্তের চাহিদা রয়েছে। যার মধ্যে ১২ শতাংশ পূরণ করছেন বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা। প্রায় ৬০ শতাংশের মতো আসে পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে। বাকিটা স্বজন, বন্ধু ও পরিচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে দেওয়া হয়। রক্তদাতাদের বেশির ভাগই তরুণ ও শিক্ষার্থী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন অ্যান্ড থ্যালাসেমিয়া ম্যানেজমেন্ট শাখার তথ্যমতে, দেশে অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ব্যাগ রক্ত লাগে। এ রক্ত আমরা দুভাবে পেয়ে থাকি। আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ৬৬ শতাংশ। স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতার মাধ্যমে ৩৪ শতাংশ। রক্তদাতাদের মধ্যে ৯৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৬ শতাংশ নারী। সারা দেশে সরকারিভাবে ২২৩টি ব্লাড ব্যাংক বা রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরে নিবন্ধন ছাড়া অনেক ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে জনবল সংকটে তাদের দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না।
নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পাঁচ ধরনের পরীক্ষা করার সুপারিশ করে। তবে বাংলাদেশসহ নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ২৪ শতাংশ রক্ত পরিসঞ্চালনে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। এতে উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে রক্তগ্রহীতার জীবন। এমন পরিস্থিতি উত্তরণে রক্তদানে গুণগত মান নিশ্চিতে জাতীয় কর্মসূচি নেওয়া জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালিত হয়েছে।
নিয়মিত রক্তদান করা একটি ভালো অভ্যাস। রক্তদান করা কোনো দুঃসাহসিক বা স্বাস্থ্যঝুঁকির কাজ নয়। বরং এর জন্য একটি সুন্দর মন থাকাই যথেষ্ট। রক্তদাতার শরীরের কোনো ক্ষতি তো হয়ই না, বরং নিয়মিত রক্তদান করলে কিছু উপকারও পাওয়া যায়। বরং প্রতিবার রক্তদানের পর রক্তদাতার অস্থিমজ্জা নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। ফলে রক্তদানের দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে সে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
শরীরের রক্তকণিকাগুলোর মধ্যে লোহিত রক্তকণিকার আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ১২০ দিন। যদি রক্তদান না-ও করেন এই লোহিত রক্তকণিকা ১২০ দিন পর নষ্ট হয়ে শরীরের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে যায়। তাই প্রতি চার মাস পরপর রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি নেই। রক্তদাতার রক্তে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়ার পরজীবীর উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। রক্তদাতা রক্তদানের ফলে এই সব পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে করার সুযোগ পাবেন। তাই রক্ত দান করুন, অপরকে রক্তদানে উৎসাহিত করুন।

প্যানেল

×