
বজ্রপাত একটি নীরব ঘাতক। দেশে দিন দিন প্রাণহানিও বাড়ছে। ফলে সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষক, দিনমজুর, জেলেসহ প্রান্তিক মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে প্রতি বছর গড়ে ২৫০-৩০০ মানুষ প্রাণ হারান বজ্রপাতে। এর বাইরেও রয়েছে গবাদিপশু, গাছপালা, পশুপাখি। বজ্রপাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও বিরল নয়। তদুপরি ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সময়-অসময়ে ঝড়-বৃষ্টির ফলে বজ্রপাতের সংখ্যাও বাড়ছে। বাস্তবে বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি দেশে। নিকট অতীতে দেশব্যাপী তালগাছ রোপণ, বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড স্থাপন ইত্যাদির কথা শোনা গেছে। যথেষ্ট অর্থ ব্যয়ও হয়েছে। তবে এসবের কোনোটাই তেমন সুফল বয়ে আনেনি।
এমন এক পরিস্থিতিতে প্রবল আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে আর্লি স্ট্রিমার ইমিশন এয়ার টার্মিনাল প্রযুক্তি। আইকনিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ২০১৯ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় কক্সবাজার সন্নিহিত অঞ্চলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭৫০টি স্থানে স্থাপন করে এই প্রযুক্তি। ফ্রান্সের তৈরি ইন্ডিলেক অ্যাসেট সিস্টেম কর্তৃক উদ্ভাবিত আর্লি স্ট্রিমার ইমিশন এয়ার টার্মিনাল যন্ত্রটি শুধু একটি বজ্র নিরোধক রড নয় বরং একটি পূর্ণাঙ্গ স্মার্ট ডিভাইস। এর ভেতর সংযুক্ত রয়েছে ইন্টারনেট ভিত্তিক (আইওটি) তথ্য বিশ্লেষণ ও সরাসরি পর্যবেক্ষণের সুবিধা। যন্ত্রটি সূর্যের আলো থেকে চার্জ নেয় বিধায় এতে কোনো বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। যে কোনো স্থানে বসে মোবাইল বা কম্পিউটারে এর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যায়। আধুনিক এই প্রযুক্তি স্থাপনের ফলে সেখানে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।
দেশে ১৫টি জেলায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়, যার মধ্যে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ অন্যতম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর হবিগঞ্জ জেলার দুটি ইউনিয়নে আর্লি স্ট্রিমার ইমিশন এয়ার টার্মিনাল যন্ত্র স্থাপন করেছে। এর ফলে সেখানে বজ্রপাত ঘটলেও কোনো জীবনহানি ঘটেনি। ফলে রক্ষা পেয়েছে কৃষক, দিনমজুরসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। মাঠে ও খাল-বিলে নির্ভয়ে কাজ করতে পারছেন কৃষক ও জেলে। বর্তমানে বজ্রপাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে বাংলাদেশে। দেশের মানুষের কাছে বজ্রপাত এখন রীতিমতো আতঙ্কের বিষয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই ভীতি বেশি। যেসব এলাকায় হাওড়, বাঁওড় ও বিল রয়েছে, সেসব স্থানে বজ্রপাতে মৃত্যু বেশি ঘটছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় স্থল ও জলপথে চলাচলকারীরাই এমন দুর্ঘটনার শিকার বেশি হচ্ছেন। এক একটি বজ্রপাত সাধারণত ৩০-৪৫ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে না যাওয়াই উত্তম। জরুরি প্রয়োজনে বের হলে আকাশে কালো মেঘ দেখার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া জরুরি। অনেকে মনে করেন, বজ্রপাতের সময় গাছতলায় আশ্রয় নেওয়া নিরাপদ। আসলে এটা ঠিক নয়। আশ্রয় নিতে হবে বাড়িঘরে বা পাকা স্থাপনার নিচে। এই সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখা চাই। তাছাড়াও প্রত্যেক বাড়িতে বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করা আবশ্যক। সে অবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মানুষের জীবন, গবাদিপশু ও সম্পদ রক্ষার জন্য যেসব স্থানে বজ্রপাত বেশি ঘটে সেসব স্থানে অবিলম্বে ফ্রান্সের তৈরি প্রযুক্তিটি স্থাপন করবে বলেই প্রত্যাশা।
প্যানেল