ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বরাদ্দ

মো. আকতার হোসাইন

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ২৮ মে ২০২৫

স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বরাদ্দ

বাজেট হলো একটি রাষ্ট্রের ১ বছরের মোট ব্যয় এবং এর পাশাপাশি কি পরিমাণ আয় হবে তারও একটি চিত্র। বাজেটে দুই ধরনের খরচের বিষয় উল্লেখ থাকে। একটি হলো নির্দিষ্ট খরচ অর্থাৎ চাইলেও এ খাত থেকে খরচ কমানো বা বাড়ানোর তেমন একটা সম্ভব নয়। অপরদিকে উন্নয়ন খরচ সরকার যা চাইলে কমাতে পারে। যা সরকারের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ যেহেতু ঘাটতি বাজেট পেশ করে, তাই চাইলেও এডিপির আয়তন বড় করতে পারে না। আর এ কারণেই এডিপির আয়তন ৩০ হাজার টাকা কম। এডিপির আয়তন ছোট হলেও এডিপির ৭০ শতাংশ বরাদ্দের পাঁচটি খাতের মধ্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে আরও কম। এর যথাযথ ব্যাখ্যা হয়তো সরকারের কাছে রয়েছে। কিন্তু সরকার চাইলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-এ দুটি খাতে বরাদ্দ বেশি দিতে পারে। এ দুটি খাত মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের খাত। এ দুটি খাতে যথাযথ বরাদ্দ দিয়ে এবং সঠিক তদারকের মাধ্যমে যদি খাত দুটির উন্নয়ন সম্ভব হয়, তাহলে দেশ সুস্থ সবল ও মেধাসম্পন্ন জাতি পাবে। দুটি বিষয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।
প্রথমত শিক্ষা। কারণ এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেলে এবং শিক্ষার মান উন্নত হলে মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি তৈরি হবে। পাশাপাশি সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাষ্ট্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। আমাদের দেশে বিগত সরকারের সময়ে সবচেয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত খাত হলো শিক্ষা। বিগত সরকারের সময়ে অনেকবার শিক্ষা কাঠামো পরিবর্তিত হয়েছে, যা ভালো কোনো ফল বয়ে আনতে পারেনি। সুতরাং এ খাতে সংস্কার ছিল সর্বাগ্রে জরুরি। অথচ আমরা যে সাতটি সংস্কার কমিশন করলাম সেখানে শিক্ষা গুরুত্ব তেমন পেল না। আগামী বাজেটও শিক্ষা খাতে কম বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, পৃথিবীর দশটি দেশে অর্থনীতির আকারে তুলনায় সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়, বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। শিক্ষা খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখার প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশে উন্নয়ন ও পরিচালনা মিলিয়ে মাত্র ২ শতাংশ খরচ করা হয়। এর মানে কি? রাজনৈতিক সরকার হয়তো ভাবতে পারে লোকজন শিক্ষিত হলে, রাজনীতিবিদদের ছলচাতুরি ধরতে পারবে। হয়তো এ কারণেই তারা শিক্ষা খাতে কম বরাদ্দ ও গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সরকার তো রাজনৈতিক সরকার নয়। তাই এই সরকারের উচিত শিক্ষা খাতে যথাযথ বরাদ্দ ও গুরুত্ব দিয়ে মেধা পাচার রোধে সচেষ্ট থাকা। বাস্তবধর্মী একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে, যেখানে মেধা পাচার নয়, মেধা রপ্তানি হবে। দেশ আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে। আর এটাই হবে এই সরকারের প্রতি জনসাধারণের প্রত্যাশা।
এবার আসা যাক স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। পত্র-পত্রিকাসহ সকল ক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয় ছিল মানুষকে যেন চিকিৎসার জন্য আর দেশের বাইরে যেতে না হয়। তারপরও যার সামান্য সামর্থ্য রয়েছে, সেও চিকিৎসা নিতে ভারত যায়। আর যার একটু টাকা-পয়সা বেশি রয়েছে সে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর যায়। কিন্তু কেন? মানুষ নিজ দেশে চিকিৎসা নেওয়ার পরিবর্তে ভিনদেশে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য কেন যাবে। তার মানে আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে গলদ রয়েছে। যার ফলে মানুষের এ খাতে আস্থার সংকটে তৈরি হয়েছে। তাই এ খাতটিকে ঢেলে সাজাতে হবে। যার সামর্থ্য বা অর্থ রয়েছে সে না হয় ভিনদেশে গিয়ে চিকিৎসা সেবা পেল। কিন্তু যার অর্থ নেই তার কি হবে? তার কথা তো রাষ্ট্রকেই ভাবতে হবে। এ ভাবনাটা শুরু হবে জাতীয় বাজেট হতেই। তাই জাতীয় বাজেটে যথাযথ পরিমাণ বরাদ্দ দিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে এ খাতটিকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির ৮৮ মার্কিন ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথা পিছু খরচ হয় ৫৮ মার্কিন ডলার। যার বড় অংশই নাগরিকরা নিজেরাই সংস্থান করে থাকেন। যদি এই হয় অবস্থা, তাহলে রাষ্ট্রের ভূমিকা কি? স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামাগত উন্নয়নের পাশাপাশি চিকিৎসকদের চিন্তা ও মননের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। যেখানে অর্থ নয়, মানব সেবাই পরম ধর্ম। রোগীদের প্রতি আন্তরিকতার সাথে একটু সময় দিয়ে চিকিৎসাসেবার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। রোগী ও রোগই হবে একমাত্র মুখ্য উদ্দেশ্য। এসব বিষয়ে সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।
এডিপিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কম নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে এডিবি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী এডিপি যাতে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়, তাই সক্ষমতা বিবেচনা করে এডিপির আকার কমানো হয়েছে। অন্য বছরে দেখা গেছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকলেও তা পুরো খরচ করতে পারে না ওই দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। খরচ করার বিষয়টি নির্ভর করে প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর। কিন্তু সঠিক প্রকল্পই যদি গ্রহণ করা না হয় তাহলে? যেভাবেই হোক না কেন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়নের প্রসার ঘটাতেই হবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক : ব্যাংক কর্মকর্তা
[email protected]

প্যানেল

×