ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

অব্যবস্থাপনায় ক্ষতি

মো রিয়াজ হোসাইন

প্রকাশিত: ২১:০২, ২২ মে ২০২৪

অব্যবস্থাপনায় ক্ষতি

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষজন খুব সহজেই তার দূরবর্তী স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করছে। যা নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব। মানুষের বিপুল আবিষ্কারের মধ্যে অন্যতম আবিষ্কার হচ্ছে লিফট। মানুষ তার জীবনকে আরও উপভোগ্য করতে বানিয়েছে সুউচ্চ ভবন। আর এই সকল ভবনের শিখরে সহজেই পাড়ি দিচ্ছে লিফটের সাহায্যে। যা তাদের নিত্যদিনের কাজকে আরও সহজ করেছে।

ফলস্বরূপ শিল্প কারখানা এবং নানান ধরনের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে হাসপাতাল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিফটের গুরুত্বের কথা না বললেই নয়। মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতালের নির্দিষ্ট তলায় পৌঁছে দিতে এবং এক তলা থেকে অন্য তলায় নিতে এখন আর কষ্ট করতে হচ্ছে না। স্বল্প সময়ের ভেতর রোগীকে পাঠানো হচ্ছে নির্দিষ্ট অপারেশন থিয়েটারে। যা রোগীর কষ্টকে বহুলাংশে কমিয়ে দিয়েছে এবং অপারেশনের কাজকে আরও সহজ করেছে।

আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা লিফট ব্যবহার করে দ্রুত সময়ের ভেতর ক্লাসে পৌঁছাতে পারছে। সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হওয়া প্রেজেনটেশন জমা দেওয়া সঠিক সময়ে সম্পন্ন হচ্ছে। যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। তবে হাসপাতাল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবশ্য মান সম্মত লিফট থাকা চাই। দুর্ভাগ্য, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে মানহীন এবং বহুদিন ধরে পুরোনো লিফট বিরাজমান।

আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে পুরোনো লিফটে মেরামতের নামে নি¤œমানের যন্ত্রপাতি ব্যহার করে চালানো হচ্ছে। যা মানুষের কষ্ট লাঘবের পরিবর্তে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। সাম্প্রতিক হাসপাতালে লিফটের ভেতর আটকা পড়ে এক রোগীর মৃত্যুর হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে হৃদয়বিদায়ক। বিভিন্ন রিপোর্ট দেখা যায় এ যাবৎ হাসপাতালে নানান অব্যবস্থাপনার বিশাল সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।

দন্ডবিধি ৩০৪-ক ধারানুযায়ী কোন ব্যক্তির অবহেলামূলক কাজের মাধ্যমে কারো মৃত্যু হলে সেটি ৫ বছর কারাদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। বাস্তবে এই সকল আইনের ব্যবহার অতি নগণ্য। বিশেজ্ঞদের মতে দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ লোকজন বেসরকারি হাসপাতালে সেবা গ্রহণ করে। অর্থাৎ দেশের সরকারি হাসপাতালের অবস্থা এখনও বেশ শোচনীয়।

আমাদের দেশে হাসপাতাল কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অব্যস্থাপনার অন্যতম কারণ হচ্ছে সীমাহীন দূর্নীতি এবং জবাবদিহিতার অভাব। প্রতিষ্ঠানের অসাধু লোকজন উন্নয়নের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ফলস্বরুপ একদিকে যেমন জনগণের কষ্টের পরিমাণ বাড়ছে অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক উৎপাদনে ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন অনুসন্ধান রিপোর্টে দেখা যায় এ যাবৎ প্রায় দেশ থেকে পাঁচ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। দেশে দুর্নীতির অন্যতম কারণ হচ্ছে মূল্যবোধের অভাব এবং সরকারে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমন্বয়হীনতা।

দুর্নীতি দমনে নানান আইন করা হলেও কার্যকারিতার বেশ অভাব রয়েছে। হাসপাতালের যে শুধুমাত্র লিফট অব্যবস্থাপনার কারণে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে এ রকমটা নয়। অবকাঠামোগত দুর্বলতা, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, দক্ষ ডাক্তারের অপর্যাপ্ততা, ভুল চিকিৎসা এবং সদিচ্ছার অভাবও জড়িত। সুতরাং দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। হাসপাতালে মানসম্মত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা এবং দুর্নীতি দমনে সংশ্লিষ্ট সংস্থার তৎপরতা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে

×