ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

শেয়ারবাজারে কারসাজি

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২২ মে ২০২৪

শেয়ারবাজারে কারসাজি

সম্পাদকীয়

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিন লেনদেন শুরুর পরে অধিকাংশ শেয়ারের প্রায় কোনো ক্রেতা থাকে না। গত এক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯০টির। আর ১৭টির দাম অপরিবর্তিত।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭ হাজার ২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা বা দশমিক ৭৪ শতাংশ। দরপতনের বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

এ জন্য আসন্ন বাজেটে ভালো প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীকে শেয়ারবাজারে আকৃষ্ট করতে বহাল থাকতে পারে কর সুবিধা।
শেয়ারবাজারের দুর্বল কোম্পানিকে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করার ক্ষমতা আবারও স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করতে হলে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে বিএসইসির পূর্বানুমোদন নিতে হয়।

আগামী ২ জুলাই থেকে এ অনুমোদন নিতে হবে না। নতুন আদেশে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পর পর দুই বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দিলে ওই কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হবে। জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পূর্বানুমোদন ছাড়া শেয়ারবাজারে ও শেয়ারবাজারের বাইরে কোনো শেয়ার লেনদেন বা হস্তান্তর করতে পারবে না। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম একদিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না।

বাজারের পতন ঠেকাতে গত ২৫ এপ্রিল থেকে শেয়ারের দাম কমার এ সীমা বেঁধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এই সীমা বেঁধে দেওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে, দরপতনের বাজারে অল্প কিছু শেয়ারের হাতবদলে দিনের শুরুতেই বেশিরভাগ শেয়ারের দাম ৩ শতাংশ কমে যাচ্ছে। এতে সূচকের বড় পতন ঘটছে। আর বাজারে দেখা দিচ্ছে ক্রেতা সংকট।

বরাবরই দেখা যায়, বাজেটে বিনিয়োগকারীদের যৌক্তিক চাওয়া-পাওয়াগুলো পেছনে ফেলে সবচেয়ে যে বিষয়টি আলোচনার বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়, সেটি হলো কালো টাকা বিনিয়োগ। তবে এবার কালো টাকার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের ভাবনার জায়গায় কতটা গুরুত্ব পাবে, সেটাও দেখার বিষয়। 
দীর্ঘদিন যাবৎ শেয়ারবাজারে যে তারল্য সংকট চলছে তা দূর করতে পারে একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক। শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। অস্বাভাবিক দর পতন থেকে বাজারকে বের করে আনার প্রধান উপায় তারল্য ও আস্থার সংকট দূর করা।

এ জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত উদ্যোগ। পরস্পরকে দোষ না দিয়ে খুঁজে বের করতে হবে এর সমাধান। কেননা, শেয়ারবাজারের সংকট তীব্র হলে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে সামষ্টিক অর্থনীতিতেও।

×