ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

ব্যাটারিচালিত রিকশা

-

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২২ মে ২০২৪

ব্যাটারিচালিত রিকশা

সম্পাদকীয়

ঢাকা এক সময় মসজিদের নগরী হিসেবে পরিচিতি পেলেও এ ক্ষেত্রে অবহেলা করার উপায় নেই রিকশাকে। অথচ এই যানটির উদ্ভব ও বিকাশ বাংলাদেশে নয়, বরং সুদূর জাপানে। বিশ্বের অন্যতম আধুনিক ও উন্নত দেশ জাপানে বর্তমানে রিকশা খুঁজে পাওয়া ভার। সে সময় রিকশা ছিল হাতেটানা-মনুষ্যচালিত। প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় এক সময় হাতেটানা রিকশার ব্যাপক প্রচলন ছিল।

পর্যায়ক্রমে তা তুলে দেওয়া হয়েছে। স্যুভেনির বা ঐতিহ্য হিসেবে এর কিছু নিদর্শন এখনো খুঁজে পাওয়া যায় ধর্মতলার আশপাশের অলিগলিতে। তবে প্যাডেলচালিত রিকশা এখন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার অন্যতম যান হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। মনুষ্যচালিত এবং শ্লথগতির বিধায় একটি আধুনিক মেট্রোপলিস শহরে রিকশা রাখা আদৌ উচিত কি উচিত নয়Ñ সে বিতর্ক চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।

ঢাকার অসহনীয় যানজট নিরসনে পর্যায়ক্রমে তা তুলে দেওয়ার দাবিও উঠছে বিভিন্ন সরকারের আমলে। তবে প্রধানত অগণিত মানুষ এবং তাদের পরিবার-পরিজনের জীবন-জীবিকা এবং কিছুটা রাজনৈতিক বিবেচনায়ও বটে, এখন পর্যন্ত রিকশা তুলে দেওয়া যায়নি রাজধানীর রাজপথ থেকে। বোধ করি সম্ভবও নয়। 
তবে সময় ও যুগের সঙ্গে পাল্পা দিয়ে রিকশা ও ভ্যানেরও আধুনিকায়ন ঘটেছে। অনেক রিকশা এবং ভ্যানে সংযুক্ত করা হয়েছে ব্যাটারি, যা প্রধানত চার্জ করা হয়ে থাকে বিদ্যুতের সাহায্যে। প্যাডেলচালিত রিকশার চেয়ে দ্রুতগতির হওয়ায় এগুলো খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সারাদেশেই চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-টেম্পু-নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলম সাধু ইত্যাদি।

ব্যাটারি ও মোটর বিভিন্ন আকার-আকৃতি এবং বিভিন্ন মডেলের হওয়ায় যানবাহনগুলোও গড়ে উঠেছে তদনুরূপ। স্থান-কাল ও চাহিদা অনুপাতে একেবারে ছোট, মাত্র দুজন মানুষের চলাচলের উপযোগীসহ আট-দশজনও বসতে পারে গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে। মালামাল টানার ক্ষেত্রেও অনুরূপ। স্বীকার করতে হবে যে, ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহন কিছুটা হলেও ঝুঁকিপূূর্ণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রক্ষা করা হয় না।

ব্রেকও ঠিকমতো কাজ করে না। প্রায়ই যাত্রী ও মালামাল বেশি টানা হয়। ফলে যেসব রাস্তায় দ্রুতগতির গণপরিবহন তথা বাস-ট্রাক চলাচল করে থাকে, সেসব স্থানে এসব যান রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিন ঢাকাসহ সারাদেশে এরজন্য ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছেই। 
এই প্রেক্ষাপটে গত ১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। অভিযানেও নামে পুলিশ। এর পরই শুরু হয় লঙ্কাকা-। বিশেষ করে মিরপুরে দিনভর সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ-মিছিল, সমাবেশ করে চালক ও মালিকরা। ব্যাপক ভাঙচুরসহ ট্রাফিক পুলিশবক্সে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সড়ক ও সেতু বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে অভিযান বন্ধ করতে বলেন। এও বলেন, মালিক-চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করে রিকশা বন্ধ করা ঠিক হয়নি। পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত রিকশার আধুনিকীকরণসহ উপযুক্ত মডেল উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বরোপ করা হয়।

নির্দেশ দেওয়া হয় রিকশা চলাচলের জন্য এলাকা ভাগ করে দিতে। এগুলো চলবে অলিগলিতে। সড়ক ও মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করতে হবে। তদুযায়ী চলতে হবে সবাইকে। তবে এই আইন ও নীতিমালা যেন বাস্তবসম্মত হয় এবং সংশ্লিষ্ট সবাই মেনে চলেÑ সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

×