ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ৮ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকার দিনরাত

হাত ধরাধরি করে আসছে ঈদ ও নববর্ষ

হাত ধরাধরি করে আসছে ঈদ ও নববর্ষ; এ এক দারুণ সময়। ঢাকা ফাঁকা হচ্ছে বটে, তবে সেটি ঈদের দিন সন্ধ্যা, আর পহেলা বৈশাখের দিন সকালে জনসমাগমের ক্ষেত্রে তেমন ঊনিশ-বিশ ঘটাবে না বলেই ধারণা করি। ঢাকা এমন এক জনভারাক্রান্ত শহর যে সেখান থেকে অর্ধেক মানুষ ছুটিছাটায় চলে গেলেও যানজট থেকে মুক্তি মেলে না। আনন্দ-উৎসবের স্থানে ভিড়ের কমতি হয় না। তবে গরমও বাড়ছে মারাত্মকভাবে। যতো গরমই পড়ুক, এ দুটি উৎসব পালন যেন খুব অস্বস্তিকর না হয়, এটাই চাওয়া। 

নববর্ষ উৎসব হোক অবাধ
এবারও নববর্ষ উৎসবের ডানা ছেঁটে ফেলার ১৪ দফা নির্দেশনা এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। বলা হয়েছে পহেলা বৈশাখে রাজধানীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাতিরঝিল ও রবীন্দ্র সরোবরসহ দেশে যেসব অনুষ্ঠান খোলা জায়গায় হবে সেগুলো সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করতে হবে।
আমরা বারবার লিখে জনমত তৈরি করতে চাইছি যাতে সর্বজনীন উৎসবে কোনো বাধা না আসে। পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ উৎসবই দেশের একমাত্র উৎসব যেটি সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক; সব ধর্মের মানুষ একযোগে উৎসবে মেতে উঠতে পারে। এমন একটি উৎসব যতো পুষ্পপত্রপল্লব শোভিত হবে, মুক্ত ও অবাধ হবে, যত নতুন নতুন মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হবে, ততোই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক।

তাই এই উৎসবের ডানা ছেঁটে ফেলা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, এই উৎসবের ওপর হামলা চালিয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, স্পষ্ট করে বললে মৌলবাদÑ যা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যা বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধাচারণকারী। আরেকটি কলংক তিলকও পরিয়ে দিতে চেয়েছিল নারীনির্যাতনকারী, তথা নারীস্বাধীনতাবিরোধী চক্র। উৎসবে যোগ দেওয়া কয়েকজন নারীকে লাঞ্ছনা করা হয়েছিল।

এখন কথা হলো, অশুভ শক্তির ভয়ে নিরাপত্তার অজুহাত তুলে যদি আমরা সান্ধ্যকালীন মুক্তমঞ্চের প্রসারিত উৎসবকে গৃহবন্দি করে ফেলি তাহলে কাদের পরাজয় হবে? মঙ্গল শোভাযাত্রায় যদি মুখোশ পরে কেউ অপরাধ সংঘটিত করে, তবে জনতাই তাকে পুলিশে সোপর্দ করবেÑ এটাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। 
পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের এমনই উৎসব- যা ধর্ম, সমাজ, বয়স ও বৃত্তির সীমা পেরিয়ে সর্বত্র একাকার। নববর্ষের আনন্দ চিত্তে নতুনের জাগরণ ঘটায়। উৎসবের মধ্যে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায় বৃহত্তরের গ-িতে। রবীন্দ্রনাথ যেমনটা বলেছেন, ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী- কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ; সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন যে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ।’ পহেলা বৈশাখ নতুন আঙ্গিকে জীবন গড়ার শপথের দিন। পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির প্রেরণার দিন। এমন দিনে কোনো বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা কাম্য।
দেশের মানুষ পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণের জন্য অধীর প্রতীক্ষায় আছে তাদের উৎসাহ উদ্যম আন্তরিকতা ও সৃষ্টিশীলতা নিয়ে। এই উৎসব হওয়া উচিত অবাধ, মুক্ত, আনন্দমুখর। উৎসবের নামে উচ্ছৃঙ্খলতাকে এদেশের মানুষ আগে সমর্থন করেনি। আগামীতেও করবে না। এটা অনস্বীকার্য যে, নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকতে পারে। কিন্তু সে ঝুঁকি নিরসন ও প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও রয়েছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ইতোপূর্বে তারা এক্ষেত্রে দৃঢ় ভূমিকাও রেখেছেন।

আমরা বিশ্বাস করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানুষের বর্ষবরণের আবেগ ও নান্দনিক অনুভূতিকে ভালোভাবেই অনুধাবনে সক্ষম হবে। তাই উৎসবে কোনো ভয়ে শঙ্কিত না হয়ে নিরাপত্তা বিধান ও সহযোগিতা প্রদানই বিবেচ্য হওয়া সমীচীন। উৎসবকামী সাধারণ মানুষের বিপুল উপস্থিতি ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হবে সংখ্যায় সীমিত দুর্বৃত্তমহল। শতফুল ফোটার দারুণ উপলক্ষ প্রত্যক্ষ করে তারাই বরং সংকুচিত হয়ে পড়বে। 

সবদিক বিবেচনা করে বিধিনিষেধের যৌক্তিকতা পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানুষকে উৎসববিমুখ করার অর্থ উৎসব বিরোধীদের জয়ের পথ দেখানো। সরকার দেশবাসীকে নিয়ে আয়োজন করবে উৎসবের, বরণ করবে নতুন বর্ষকে- এটাই প্রত্যাশা মানুষের।
জনকণ্ঠের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন : ‘পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার যে নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে তা এবার আর মানবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। সরকারের এই ধরনের পিছু হটার নীতির বিরোধিতা করে ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় কমপক্ষে রাত ৯টা পর্যন্ত পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।  
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামেও বৈশাখের অনুষ্ঠান বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, প্রতি বছরই উৎসবে যোগ দিতে আসা মানুষজনকে রাস্তায় আটকে দিচ্ছে পুলিশ। যেখানে খুশি গাড়ি বা রিকশা থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। মূল উৎসব হয় রমনা বটমূল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। জায়গা দুটিকে মাঝখানে রেখে চারপাশের সব সড়ক আটকে দেওয়া হয়। এত দূরে আটকে দেওয়া হয় যে, বয়স্কদের  পক্ষে হেঁটে ওই পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয় না। এবার এমন প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তি চেয়েছেন উৎসবপ্রেমীরা। 
এ প্রসঙ্গে মতামত জানতে চাইলে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ জনকণ্ঠকে বলেন, আমি নিজেই তো এতটা পথ হাঁটতে পারি না। তাহলে কী করে কাটাবন থেকে হেঁটে রমনায় যাব? আসলে এটা বাড়াবাড়ি। এই করে করে উৎসবটিকে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ক্ষতি আর না করার জোর দাবি জানান তিনি। অভিযোগ রয়েছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়েও বাড়াবাড়ি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বর্ষবরণের দিন চারুকলা থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার সামনের পুরোটা অংশ জুড়ে অস্ত্রহাতে দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশ র‌্যাব সোয়াতসহ বিভিন্ন বাহিনীর অগনিত সদস্য। সমালোচকদের মতে, এর ফলে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি এর নিজস্ব সৌন্দর্য হারাচ্ছে। টেলিভিশনে দেখে মনে হচ্ছে, এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রদর্শনী। 
এ ব্যাপারে অনেক বলেও কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজকরা। জানতে চাইলে চারুকলার ডিন নিসার হোসেন বলেন, শোভাযাত্রাটি তো দেখাই যায় না। নিরাপত্তা তো দূর থেকেও দেওয়া যায়। সাদা পোশাকেও দেওয়া যায়। কিন্তু সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগ্রহ কম বলে মনে হয়েছে। এবার আর এমন দৃশ্য দেখতে চান না বলে জানান নিসার হোসেন।’     
ঈদ-নববর্ষ মিলে সংবাদপত্রে টানা ৬ দিনের ছুটি
আজ থেকে সংবাদপত্রে ছুটি হচ্ছে টানা ৬ দিনের। তার মানে আগামী মঙ্গলবার আবার পত্রিকা হাতে পাবেন পাঠক। কাল থেকে পরবর্তী ৬ দিন পাবেন না। শনিবার সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) বৈঠক শেষে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে ৬দিন ছুটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে ৯ থেকে ১৪ এপ্রিল টানা ৬ দিন ছুটি পাচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

এবার ঈদের ছুটি ৬ দিন একটি অনন্য রেকর্ড। এর আগে কখনো সংবাদমাধ্যম টানা ৬ দিন বন্ধ থাকেনি। দেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে এই প্রথম টানা ৬দিন ছুটি মিলল। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সংবাদপত্র ৩৬৫ দিনই বের হতে হবে, বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে হলেও। হতে পারে মাত্র ৪ পৃষ্ঠারও। কিন্তু প্রকাশিত হতে হবে। আর নিউজ জানার জন্য অনলাইন তো আছেই। পাঠকের আর কী অসুবিধা। পাশাপাশি এটাও বলে রাখি সাংবাদিকদের রিক্রিয়েশন লিভ প্রথা ফিরিয়ে আনা চাই। সমাজে সবচেয়ে কম ছুটি পান সাংবাদিকরাই।
প্রবাসী সাংবাদিক সওগাত আলী সাগর ছয়দিনের ছুটি নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন : 
‘১.ঈদে ঢাকার সংবাদপত্রে টানা ছয় দিন ছুটি থাকছে- এ নিয়ে তুমুল আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই আবার ৬দিনের ছুটিতে সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। সংবাদপত্রের ছুটি নিয়ে এই উদ্বেগটা ইন্টারেস্টিং।
২. আমি সংবাদপত্রের টানা ৬দিনের ছুটির সিদ্ধান্তটাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমি মনে করি, এই ৬ দিনের ছুটির কারণে পত্রিকাগুলো কোনো পাঠকই হারাবে না। 
৩. আমার তো মনে হয়, পাঠকই বরং এক ধরনের শূন্যতার মধ্যে পড়বেন, পত্রিকাগুলোর ওপর তাদের কতটা নির্ভরশীলতা- তার একটা প্রমাণও হয়ে যাবে। প্রিন্ট পত্রিকার বাইরে টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো, মাল্টিমিডিয়া- মানুষের খবরের চাহিদা কতটা মেটাতে পারে- তার একটা পরীক্ষাও না হয়  হলো। 
৪. আমরা তো এমনিতেই উঠতে বসতে পত্রিকাকে, সাংবাদিক- সাংবাদিকতাকে গালি দেই। ৬ দিন তাদের চোখের আড়ালে রেখে দেখা যাক না- আমাদের কেমন লাগে!

শপিং মলে রাত তিনটায়
ধনবান হন অনেকেই, কিন্তু হৃদয়ের দিক দিয়ে ধনী হন কয়জন? বিত্তবানদের বেশির ভাগেরই চিত্ত থাকে সংকুচিত, তাই বিত্ত ও চিত্তের মেলবন্ধন ঘটতে দেখলে আমরা আনন্দিত হই। মন ভরে ওঠে। তবে এটাও বলি, প্রসারিত চিত্তের জন্যে বিত্তবান হওয়া জরুরিও নয়। আমাদের ক্রিয়েটিভ বন্ধু সুমন একজন বিরল মানুষ, তার বিত্ত বেশি নাকি হৃদয়ের বিশালতা, সেটির বিচার আমরা করতে পারব না। সব বন্ধু এবং বন্ধুপতœীদের জন্য তিনি ঈদ উপহার কিনবেনই। ভালো কথা, কিন্তু আমি কেন? না, আমার সঙ্গ তাঁর লাগবেই, পোশাক-পছন্দে তাঁকে সাহায্য করতেই হবে।

অগত্যা একপ্রকার বাধ্যই হলাম, গুলশানের পুলিশ প্লাজা শপিং মলে গেলাম রাত এগারটায়। কিন্তু কেনাকাটা করতে করতে যে রাত তিনটা হবে, কে জানতো। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে ঢাকার সব বড় বড় মার্কেট সেহরি পর্যন্ত খোলা থাকে। এই শপিং মলটি রমজানে সর্বোচ্চ দুটোয় বন্ধ হয়ে যায়, তবে ‘কাতান শাড়ির মেলা’ নামের যে পোশাক-বিতানে আমরা দুটোর দিকে প্রবেশ করেছিলাম, সেটির মালিক নাজমা নিঝুম জানালেন, মার্কেটের নিচতলায় সর্ব বামের কোনায় তার শোরুম, তাই আলাদা দরোজা দিয়ে বেরুনোর সুবিধা আছে। তিনি শপিং মলে প্রতিদিন সকালে আসেন, যান সেহরির আগে-আগে।

যাহোক, আমার ধারণা আরও কিছু শোরুম এভাবে কিছুটা বাড়তি সময় খোলা থাকে রমজান মাসে। গুলশান-বনানীর কোনো কোনো পোশাকের শোরুম সেহরি পর্যন্ত নিশ্চয়ই খোলা রাখার ব্যবস্থা আছে। তা না হলে ক্রেতারা গভীর রাতে শপিং করতে বেরুতেন না। সে যাক, অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে বলি। মলের নিচতলায় ঐতিহ্যবাহী পাঞ্জাবির শোরুমে কাটালাম অনেকটা সময়।

ঈদের কেনাকাটার শেষ সপ্তাহে এখানে ক্রেতাদের ভিড় পাবো না, এমনটা সত্যিই ভাবিনি। অথচ আড়ংয়ের প্রতিটি শাখাতেই লোক সমাগম হয়ে থাকে। এটাই বাস্তবতা। আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করলাম, লোকে ইন্ডিয়ান শাড়ি ও থ্রিপিস বরাবরের মতোই কিনছে। অবশ্য বিচক্ষণ মালিকরা ইন্ডিয়ান কাপড়ে বেশ ছাড়ও দিচ্ছেন। 
শপিং মলের কথা বলতে গিয়ে প্রসঙ্গত আমাদের বন্ধু ফাতিমা জাহানের একটি পোস্টের কথা মনে পড়ল। মানবিকতার বিষয়টি ঊর্ধে তুলে ধরে তিনি লিখেছেন: ‘শপিং মলের দোকানগুলোতে চাকরি করা ছেলেমেয়েরা এই রোজার মাসে কাজ শেষে প্রতিদিন বাড়ি ফেরে রাত একটা বা দুটোয়। কারণ তাদের টানাটানির সংসার। কোথাও পাঁচশ’ টাকা বাঁচাতে পারলে বাসার বাজারে তা যোগ হবে। আপনার বাড়িতে হোম ডেলিভারি বা ফুডপান্ডা ডেলিভারি দেয়া ছেলেটিরও একই অবস্থা। আর এরা কারো কাছে হাত পেতে সাহায্য চাইতে পারে না।

শপিং মলে গেলে যে ছেলেটি আপনাকে পণ্য দেখাচ্ছে বা হোম ডেলিভারি দেয়া ছেলেদের হাতে পারলে কিছু বখশিশ দিয়েন। এরকম অনেক পরিবার আছে যারা ঈদের জন্য কাঁচাবাজার করতে গেলেও কয়েকবার ভাবে। পরিচিত হলে ঈদের জন্য কিছু বাজার করে দিন। ঈদের আনন্দ তো সবার। ওরাও একটু ভালো থাকুক। আমরা সবাই ভালো থাকি।’

ঈদের আরেক আনন্দ ঈদ সংখ্যা
রমজানের মাঝামাঝি একে একে বেরুতে থাকে ঈদসংখ্যা, সর্ববৃহৎ বার্ষিক সাহিত্য সাময়িকী। অবশ্য ঈদসংখ্যায় এখন সাহিত্য ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ও থাকে যথেষ্ট পরিমাণে। তবু ঈদসংখ্যায় সাহিত্যই প্রধান, আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয় পাঠকের কাছে ঈদসংখ্যার প্রধান আকর্ষণ উপন্যাস। দু শ’  থেকে আড়াই শ’ টাকা দাম থাকে একেকটি ঈদসংখ্যার। এই টাকায় পাঁচ থেকে দশটি উপন্যাস পাওয়া যায়। এটাই নগদ লাভ পাঠকের। তবে একথার পাশাপাশি আরেকটা সত্যও উচ্চারণ করতে হবে।

সেটি হলো ‘একটি সম্পূর্ণ উপন্যাস’ টাইটেলে লেখা থাকলেও আসলে এসব উপন্যাস সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। সেটা সম্ভবও নয়। বইয়ের হিসাবে তিন শ’ পাতার একটি উপন্যাস ছাপাতে ম্যাগাজিনের প্রয়োজন হবে এক শ’ থেকে সোয়া শ’ পৃষ্ঠা। কিংবা ছোট উপন্যাস হলে তার অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। পাতা গুণে দেখলে দেখা যাবে ঈদসংখ্যায় সাধারণত একেকটি উপন্যাস হয় গড়ে কুড়ি পাতার মধ্যে। আসলে এটি উপন্যাসের শর্ট ভার্সন বলা যায়।

পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসটি বর্ধিত কলেবরে বেরোয় পরের বছর ফেব্রুয়ারির বইমেলায়। যা হোক, পাঠক টি২০ ম্যাচের মতো শর্টটাইম আনন্দ পান, উত্তেজনায় থাকেন ঈদসংখ্যার এসব উপন্যাস নিয়ে। এই চল এখন প্রতিষ্ঠিতই হয়ে গেছে। 
আমাদের দেশে প্রথম দিকে সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোই ঈদসংখ্যা প্রকাশ শুরু করে। পরে এতে যুক্ত হয় দৈনিক সংবাদপত্র। বর্তমানে সংবাদপত্রের ঈদসংখ্যাই প্রাধান্য বিস্তার করে চলেছে। এখনো মধ্যবিত্ত পড়ুয়া শ্রেণির ভেতর ঈদসংখ্যা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ আছে। ঈদের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ঈদসংখ্যা। ঈদের নতুন পোশাকের পাশাপাশি বহুজন অন্তত একখানা ঈদসংখ্যা কিনে থাকেন। সে বিচারে ফেব্রুয়ারির বইমেলার পর বাঙালি পাঠক সমাজে রমজান মাসই আরেকটি নতুন সাহিত্যপাঠের মৌসুম হয়ে ওঠে।

ঈদসংখ্যা প্রকাশ উপলক্ষে কয়েকটি পত্রিকা লেখক সম্মিলনের আয়োজন করেন, এটিকে ইফতার পার্টিও বলা চলে। এককালের পাঠকদের বিশেষ আকর্ষণ ঈদসংখ্যা বিচিত্রা, রোববার, সন্ধানী, পূর্বানী ও সাপ্তাহিক ২০০০ বন্ধ হয়ে গেছে। সে বিচারে টিকে থাকা পত্রিকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো হলো পাক্ষিক অন্যদিন। যেটি দেশের অন্যতম সেরা ঈদসংখ্যা হয়ে উঠেছে কালের পরিক্রমায়। বলা চলে সুদীর্ঘকাল প্রায় ৩০ বছর উচ্চমান বজায় রেখে ঈদসংখ্যা প্রকাশনার মধ্য দিয়ে একটা রেকর্ড গড়েছে অন্যদিন।

অন্যদিকে নবাগত ঈদসংখ্যা হলো খবরের কাগজ, ছয় মাস আগে চালু হওয়া দৈনিক পত্রিকাটি চমৎকার এক ঈদসংখ্যা পাঠকদের উপহার দিয়েছে। দুটি পত্রিকার আমন্ত্রণে যথাক্রমে ঢাকা ক্লাব ও বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। আন্তরিক আয়োজন। পত্রিকা দুটোও আকর্ষণীয়।

 
প্রিয় পাঠক, ঈদ মোবারক এবং শুভ নববর্ষ। 

০৭ এপ্রিল ২০২৪  

[email protected]

×