ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবন্তিকার আত্মহনন

-

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১৮ মার্চ ২০২৪

অবন্তিকার আত্মহনন

সম্পাদকীয়

শিক্ষা প্রত্যেক মানুষের নাগরিক অধিকার। উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচকেও শিক্ষা অনেকখানিই এগিয়ে।  জাতির মেরুদ- হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে যুগ-যুগান্তরের প্রচলিত প্রবাদ বাক্যে। পবিত্রতম এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন অসহনীয় দুর্বিপাকে মূল ব্যবস্থাপনাকে কাঁপিয়ে দেয়, তেমন অনাকাক্সিক্ষত অপকর্ম নিতান্তই ঘৃণ্য। উচ্চ শিক্ষার পাদপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া হরেক দুর্বৃত্তায়ন যেন উচ্চশিক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধই শুধু নয়, বেহাল অবস্থায় নিয়ে যেতে সময় নিচ্ছে না।

নানামাত্রিকে ঘটে যাওয়া তেমন অসহনীয় ঘটনার শিকার হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। শুক্রবার রাত ১০টায় ফেসবুকে বার্তা দিয়ে অসহায় ছাত্রীটি নিজের মূল্যবান জীবনকে শেষ করে দেয়। ঘটনার জন্য দায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মান। আম্মানের দ্বারা সবসময়ই উত্ত্যক্তের শিকার হতো অবন্তিকা। বিচার চেয়েও কোনো সুরাহা পায়নি বলে হতভাগ্য পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায়।

অবন্তিকা তার সহপাঠীর উত্ত্যক্তকরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে। সহকারী প্রক্টর ছাত্রীর অভিযোগ আমলে তো নিলেনই না, বরং নতুন করে অবন্তিকাকে অপমান করতেও দ্বিধা করেননি। অভিযুক্ত দুজনকেই পুলিশ আটক করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ঝড় উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। উপযুক্ত বিচার আর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাস উত্তাল। 
অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম শনিবার কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বিক্ষোভে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা কোনো সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা বিচার করতে ব্যর্থ হলে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করারও সম্মিলিত আওয়াজ তুলেছে। তবে আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী দুজনকেই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর সাদেকা হালিম গণমাধ্যমকে আশ্বস্ত করেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে যা যা প্রয়োজন সবই কর্তৃপক্ষ করে যাবে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। 
ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় অবন্তিকা যে হয়রানি আর উত্ত্যক্তের কোপানলে বিদ্ধ হয়েছে, যা কোনো উচ্চশিক্ষার পীঠস্থানে এক জঘন্য অপরাধপ্রবণতা। উচ্চশিক্ষা আগামীর বাংলাদেশকে নিত্যনতুন আধুনিকতা ও প্রযুক্তির সম্ভারে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার এক অপরিমেয় মহাশক্তি। সেখানেই যদি এমন অমার্জনীয় অপরাধ প্রবণতা জিইয়ে থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কোথায়?

সমাজের প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান পরিবার থেকে বড় হয়ে কোনো শিশু বৃহত্তর সামাজিক বলয়ে পরবর্তীতে পা রাখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যেখানে সে নিরাপদে, নির্বিঘেœ নিশ্চিন্তে তার ভাবিষ্যৎ জীবনের সাফল্যকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসবে। সেখানেই যদি তার মূল্যবান জীবন বিভীষিকাময় অভিশাপের আবর্তে পড়ে যায়, তাহলে তার গন্তব্য কি শেষ অবধি আত্মহনন? এর প্রতিকার কোথায় এবং কিভাবে- সেটাও ভাবার বিষয়! ছাত্রত্ব বাতিল কিংবা চাকরিচ্যুত করলেই কি অবন্তিকার প্রাণ সংহারের দায় মিটে যাবে? এতে কি আদৌ সান্ত¡না মিলবে তার মা-বাবার? তদুপরি ন্যায় বিচার কি নিশ্চিত হবে শেষ পর্যন্ত?

×