ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্কতা

-

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ১৮ মার্চ ২০২৪

সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্কতা

সম্পাদকীয়

বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য গ্যাস লাইনের সরবরাহ অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধ কিংবা সীমিত করার প্রেক্ষিতে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার অতিরিক্ত বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনাও। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সিলিন্ডারের গ্যাসে আগুন লেগে বুধবার ৩৪ ব্যক্তি দগ্ধ হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে ১২ শিশু। দগ্ধদের অধিকাংশের শরীরের ৩৫ থেকে ৯৮ শতাংশ পুড়ে গেছে।

যাদের শ্বাসনালি পুড়েছে, তাদের সবার অবস্থাই সংকটাপন্ন। ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়, একটি বাড়িতে থাকা সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেলে দোকান থেকে আরেকটি সিলিন্ডার কিনে এনে সংযোগ দেওয়ার সময় এর চাবি খুলে যায়। এ সময় পাশের চুলা থেকে সিলিন্ডারের বের হওয়া গ্যাসে আগুন ধরে যায়। তখন সিলিন্ডারটি ছুড়ে মারা হলে উৎসুক নারী, পুরুষ ও শিশুদের শরীরে আগুন লেগে যায়।

সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা ব্যবহারে যে ঝুঁকি আছে এবং সেই ঝুঁকি এড়াতে যে ধরনের সচেতনতার প্রয়োজন, তার ঘাটতি রয়েছে। ফলে, প্রায়ই গ্যাস সিলিন্ডারজনিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মানুষ দগ্ধ হচ্ছে। প্রাণহানিও ঘটছে। যারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেন, তাদের অজ্ঞতা, অবহেলা ও উদাসীনতার কারণেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে সাবধানতা জরুরি। এর ব্যত্যয় হলে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও অগ্নিকা-।
দেশে বর্তমানে ৬০ লাখের বেশি গ্রাহক এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। গ্রাহকের একটি বড় অংশই গ্রামাঞ্চলের। এ মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি কোম্পানির অন্তত দুই কোটি সিলিন্ডার বাজারে রয়েছে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক বছরে এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৬ লাখের বেশি। এলপিজি ছাড়া অন্যান্য সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৩ লাখের বেশি। পাশাপাশি দেশেও সিলিন্ডার নির্মাণের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করছে দেশে নির্মিত সিলিন্ডার। কিন্তু এসব সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত কোনো পরীক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। ফলে, একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। 
এলপিজির সিলিন্ডারগুলোতে মেয়াদ লেখা থাকলেও কবে থেকে এগুলোর ব্যবহার হচ্ছে তার উল্লেখ নেই। দেশের বাজারে ২০০৬ সাল থেকে এলপিজির ব্যবহার হচ্ছে। সেই হিসেবে এক ‘লট’ সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালেই। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে পুনরায় বাজারে ছাড়া হলেও এর মধ্যে কিছু সিলিন্ডার কার্যকারিতা হারিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চুলার পাশে আগুনের উৎস থেকে কমপক্ষে ২-৩ মিটার দূরত্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় সিলিন্ডার স্থাপন করা উচিত।

খেয়াল রাখতে হবে, রান্নার জায়গা যেন আলো-বাতাসযুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং রান্নাঘরের জানালা খোলা থাকে। এছাড়া মানসম্মত রাবার টিউব অথবা হোস পাইপ ব্যবহার করা, রাবার টিউব অথবা হোস পাইপে সাবানের ফেনা লাগিয়ে লিকেজ পরীক্ষা করা, দুই বছর পরপর নতুন রাবার টিউব লাগানো উচিত। যত্রতত্র গ্যাসসিলিন্ডার রাখা বন্ধ করা চাই। অনেকে না জেনেই মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করেন, যা বিপজ্জনক। সবার সচেতনতা ও সতর্কতাই পারে ভয়াবহ সিলিন্ডার গ্যাস দুর্ঘটনা রোধ করতে।

×