পেট্রোল পাম্পের সামনে মানুষ বিক্ষোভ করেছেন
এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সময়টাতেই মহানগরবাসী গরমে ঘেমে নেয়ে ভাবছেন আবার বুঝি গ্রীষ্মকাল শুরু হলো। কিন্তু ঝকঝকে রোদে ভেজা দিনে আকাশের দিকে তাকালে, শাদা মেঘের ওড়াউড়ি দেখে মনে হবে আগাম শরত শুরু হয়ে গেছে। অথচ পঞ্জিকায় এখনও বর্ষাকাল। ভ্যাপসা গরমে মানুষ বৃষ্টি চাইছে। মেঘ কথা শুনছে না।
শুরুতে এসব মিষ্টিমিষ্টি কথা বলছি এ কারণে যে এই সপ্তাহে ঢাকাবাসী ভালর দেখা পাচ্ছে না, চারদিকে শুধু খারাপ খবর। আমার নিকট বন্ধুরা বলে থাকেন আমার কাছ থেকে তারা পজেটিভ এনার্জি পান; আমি নাকি নেতিবাচক কথা তেমন বলিই না। জানি না এর সত্যমিথ্যা। তবে আজ যে ভাল খবর খুঁজে পাচ্ছি না, তাতে আমাকে নেগেটিভ মানুষ বলা যেতেই পারে।
রাজধানীর বছিলায় আটতলা বাড়ি, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রমনা থানার ওসির একাধিক প্লট রয়েছে। বলুন, এটি কি ওই ওসির পরিবারের জন্য ভাল খবর নয়? কিন্তু দেশের জন্য খুব খারাপ খবর। অবৈধ উপয়ে তিনি অর্থ উপার্জন করেছেন। আর ওই অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে গিয়ে দেশ, দেশের মানুষের ক্ষতি করেছেন, যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। এসব নানা ঘটনার মধ্যেও এ লেখার শুরুতে কথা দিচ্ছি, একটি হলেও সুসংবাদ দেবই দেব।
তুরাগে বিস্ফোরণ
কেমিক্যাল বিস্ফোরণে মানুষের মৃত্যু আমরা একেবারেই মেনে নিতে পারি না। এবার ঢাকায় এমন একটা বিস্ফোরণ হয়েছে তুরাগের কামারপাড়ায়। তবে এ সম্পর্কিত কয়েকটি খবর পড়েও নিশ্চিত হওয়া গেল না বিস্ফোরণের উৎস কোথায়। কাছাকাছি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের গুদাম থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে, এমন সংবাদ দিয়েছে একটি পত্রিকা। আরেকটি লিখেছে পানির লাইনে আটকে যাওয়া পরিত্যক্ত পারফিউমের টিউব থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত। দগ্ধ চারজন মারা গেছেন। শনিবার দুপুরে তুরাগ থানার রাজাবাড়ী এলাকায় রিক্সার গ্যারেজে কেমিক্যাল বিস্ফোরণে আটজন দগ্ধ হন। পরে তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয়।
যে কারণেই কেমিক্যাল বিস্ফোরণ হোক না কেন এর কষ্টকর দিক হলো মানুষের মৃত্যু। চারজন রিক্সাঅলা পুড়ে মারা গেছেন। বাকি দগ্ধ চারজনের চিকিৎসা চলছে, যদিও তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এরা প্রত্যেকেই গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ। এদের একেকজনের ওপর ভার ছিল একেকটি পরিবারের। একটি পরিবার মানে অনেকগুলো মুখ। এতজনের জীবন এলোমেলা হয়ে গেল। এমন হেলাফেলার মৃত্যু আমাদের মনটা খারাপ করে দেয়।
জ¦ালানির দাম বাড়ার জ¦ালা!
শুক্রবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে লুডু খেলছিলাম। সংসারের কর্ত্রী আচমকা ঘরে ঢুকে বললেন, ডিজেল-পেট্রোল সবকিছুর দাম প্রচুর বেড়ে গেছে। এখন গাড়িতে করে আর আগের মতো বেড়াতে যাওয়া যাবে না। ভদ্রমহিলার কথা শুনেও না শোনার ভাবে ছিলাম। মাঝরাতে এসব বলার কারণ কি! পরে আবার বলাতে বিষয়টি পরিষ্কার হলো যে নগদ নগদই জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফেসবুকে একজন মধ্যরাতের ফিলিং স্টেশনের ছবি পোস্ট করে বসল।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে মোটরসাইকেল চালকেরা ভিড় জমিয়েছেন ফিলিং স্টেশনে। সকাল হলেই ৫০০ টাকার তেল কিনতে হবে ৭৫০ টাকায়। তাই সকাল হওয়ার আগে কিনে ফেলা ভাল। তাই এত ভিড়। ফিলিং স্টেশনে মধ্যরাতে এমন জমজমাট তেল বিকিকিনি রেকর্ডই বটে। শুধু চানরাতেই এমন বেচাকেনা দেখতে অভ্যস্ত আমরা।
যা হোক, বাস্তবতা হলো সরকার হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ। যেখানে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ছিল লিটারপ্রতি ৮০ টাকা, সেখানে করা হয়েছে ১১৪ টাকা। অন্যদিকে ৮৬ টাকার পেট্রোল ১৩০ এবং ৮৯ টাকার অকটেন হয়েছে ১৩৫ টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারে এত বেশি দাম বাড়ানোর নজির নেই।
খবরে দেখলাম জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল পাম্পের সামনে মানুষ বিক্ষোভ করেছেন, শনিবার নগর ও মহাসড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম থাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বর্ধিত ভাড়া আদায় নিয়ে পরিবহনকর্মী ও যাত্রীদের মধ্যে বচসা ও হাঙ্গামারও খবর পাওয়া গেছে। দূরপাল্লার অনেক পরিবহন ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে বলেও অভিযোগ এসেছে। বেশ একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। রবিবার জনকণ্ঠের প্রধান শিরোনামও হলো ‘গণপরিবহনে নৈরাজ্য’। শনিবার রাস্তায় গণপরিবহন ছিল খুবই কম। যারা অটোরিক্সা বা বাসে উঠতে পেরেছে, তাদের কাছ থেকে কমপক্ষে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়েছে।
সত্যি মানুষের এত ভোগান্তি অসহনীয়। সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম আগেই বেড়ে গেছে। এখন জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ায় সব কিছুর দাম আরেক দফা বাড়বে। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষের আয় এক টাকাও বাড়বে না। মানুষ রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে। আগামী দিনগুলোয় পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, কে জানে।
প্রসঙ্গ ডলার
ডলারের তেজীভাব মোটেই বাগ মানছে না। ব্রিটেনের মুদ্রা পাউন্ড সব সময়েই ডলার থেকে অনেকটা তফাতে থেকেছে। টাকার অঙ্কে ৩০-৪০ টাকা পার্থক্য ছিল ওই দুই মহামুদ্রার। এখন ক্রমান্বয়ে পাউন্ডকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে ডলার। এ বড় আশ্চর্যের কথা। এই বাস্তবতায় ঢাকায় নতুন অভিযানও দেখতে পেল ঢাকাবাসী। একের পর এক মানি এক্সচেঞ্জের কার্যালয়ে পুলিশ হানা দিচ্ছে, একে একে অনেকেরই লাইসেন্স স্থগিত হয়েছে, শোকজ পেয়েছে অর্ধশত প্রতিষ্ঠান। বলা হচ্ছে তারা খোলাবাজারে ডলার নিয়ে কারসাজি করছে।
অভাবনীয় এক পরিস্থিতি। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একাধিক টিম কাজ করছে মাঠে।
উচ্চশিক্ষিতের ‘মাদক গবেষণা’
লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে মাদক নিয়ে গবেষণা করা ওনাইসী সাঈদকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তার কাছ থেকে একটি ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে তার মাদক নিয়ে গবেষণার বিষয়ে বিস্তারিত লেখা রয়েছে। কোন্ মাদক কোন্ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে, কীভাবে কি পরিমাণে সেবন করতে হবে ওই ডায়রিতে এসব লেখা রয়েছে। মাদকের কত ধরনের নামই না আমরা শুনেছি, কিন্তু কখনও কি ভেবেছি নারীর সুন্দর নামে নামকরণ হবে মাদকের? হ্যাঁ, আমি মলি-মাদকের কথা বলছি। সাঈদ কুশ, হেম্প, মলি, ফেন্টানলের মতো মাদকের চাষ ও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্টও তৈরি করেছিলেন।
সাঈদ দেশের একটি স্বনামধন্য ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) করতে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। পরবর্তীকালে মাস্টার অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) করেন মালয়েশিয়ায়। দেশে ফিরে প্রথমে বাবার টেক্সটাইল ব্যবসা দেখাশোনা করেন। বিদেশে পড়া অবস্থায় বিভিন্ন মাদকের সঙ্গে পরিচিত হন সাইদ। বাবার ব্যবসায়ের পাশাপাশি দেশে নতুন ধরনের মাদকের প্রচলন ও বাজার সৃষ্টির পরিকল্পনা করেন তিনি।
র্যাবের ভাষ্যে জানা যায় পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে নানা ধরনের মাদক নিয়ে আসতেন তিনি। এসব মাদক তিনি সাপ্লাই করতেন দেশের বিভিন্ন অভিজাত পার্টিতে। বাংলাদেশে নতুন মাদক এক্সট্যাসির অন্যতম মূলহোতা সাঈদ। তিনি গত প্রায় ৪ বছর ধরে এক্সট্যাসিসহ অন্যান্য উচ্চমূল্যের মাদকের কারবারের সঙ্গে জড়িত।
নিজে মাদকসেবী নন সাঈদ। নিশ্চয়ই তিনি মাদকের মহাক্ষতিকর দিকগুলো জানেন। আফসোস, তিনি তার প্রতিভাকে ক্ষতিকর কর্মকা-ে ব্যয় না করে যদি জনকল্যাণে নিয়োগ করতেন, তবে কত ভালোই না হতো।
বিনামূল্যে আহার
কাজের বিনিময়ে খাদ্য বা কাবিখা প্রকল্পের কথা আমরা জানি। ‘একটি ভাল কাজের বিনিময়ে খাদ্য’-এটি প্রকল্প নয়, মহান ব্রত। গরিব মানুষেরা ভাল যে কোন একটি কাজের বিনিময়ে, মানে সারাদিনে একটি ভাল কাজ করেছেন তার কথা বলে, এখানে ভরপেট খেতে পারবেন। অর্থাৎ খেতে টাকা লাগে না, যে কোন একটি ভাল কাজ করলেই খাওয়া যায় পেট পুরে। পথশিশু, ছিন্নমূল, অসহায়, ভবঘুরে মানুষগুলো এখানে আসছে, বসছে এবং পেট ভরে খেয়ে যাচ্ছে শুধু একটি ভাল কাজ করার কথা বলেই।
আট দশটা হোটেলের মতো এখানে চেয়ার, টেবিল কিংবা বিলের আওয়াজ নেই, নেই মাথার উপর ছাদও। খোলা আকাশের নিচে ফুটপাথে বসেই দিব্যি আহার সেরে নেন এই হোটেলে আসা অতিথিরা। প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ জন অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করার কথা বলছেন এর আয়োজকরা।
বর্তমানে প্রতিদিন করাইল বস্তির পাশে বনানী ১১ নম্বর রোড, কাওরানবাজার এবং কমলাপুরে রেলওয়ে স্টেশনে চলছে ‘ভাল কাজের হোটেল’। এর অর্থের জোগান দিচ্ছেন এই মহানগরীরই প্রায় দেড় হাজার মানুষ। মাসে তারা প্রত্যেকে দিচ্ছেন ৩০০ টাকা করে চাঁদা। এমন উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে আহার তুলে দেয়ার মতো, অসুস্থ রোগীকে দরকারি ওষুধ কিনে দেয়ার মতো ভালো কাজ আর হতেই পারে না। এধরনের উদ্যোগের কথা, ভালো কাজের কথা শুনে আমাদের মন আপ্লুত হয়।
৭ আগস্ট ২০২২