ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৮ আগস্ট ২০২২

ঢাকার দিনরাত

পেট্রোল পাম্পের সামনে মানুষ বিক্ষোভ করেছেন

এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সময়টাতেই মহানগরবাসী গরমে ঘেমে নেয়ে ভাবছেন আবার বুঝি গ্রীষ্মকাল শুরু হলোকিন্তু ঝকঝকে রোদে ভেজা দিনে আকাশের দিকে তাকালে, শাদা মেঘের ওড়াউড়ি দেখে মনে হবে আগাম শরত শুরু হয়ে গেছেঅথচ পঞ্জিকায় এখনও বর্ষাকালভ্যাপসা গরমে মানুষ বৃষ্টি চাইছেমেঘ কথা শুনছে না

শুরুতে এসব মিষ্টিমিষ্টি কথা বলছি এ কারণে যে এই সপ্তাহে ঢাকাবাসী ভালর দেখা পাচ্ছে না, চারদিকে শুধু খারাপ খবরআমার নিকট বন্ধুরা বলে থাকেন আমার কাছ থেকে তারা পজেটিভ এনার্জি পান; আমি নাকি নেতিবাচক কথা তেমন বলিই নাজানি না এর সত্যমিথ্যাতবে আজ যে ভাল খবর খুঁজে পাচ্ছি না, তাতে আমাকে নেগেটিভ মানুষ বলা যেতেই পারে

রাজধানীর বছিলায় আটতলা বাড়ি, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রমনা থানার ওসির একাধিক প্লট রয়েছেবলুন, এটি কি ওই ওসির পরিবারের জন্য ভাল খবর নয়? কিন্তু দেশের জন্য খুব খারাপ খবরঅবৈধ উপয়ে তিনি অর্থ উপার্জন করেছেনআর ওই অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে গিয়ে দেশ, দেশের মানুষের ক্ষতি করেছেন, যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননিএসব নানা ঘটনার মধ্যেও এ লেখার শুরুতে কথা দিচ্ছি, একটি হলেও সুসংবাদ দেবই দেব

 

তুরাগে বিস্ফোরণ

কেমিক্যাল বিস্ফোরণে মানুষের মৃত্যু আমরা একেবারেই মেনে নিতে পারি নাএবার ঢাকায় এমন একটা বিস্ফোরণ হয়েছে তুরাগের কামারপাড়ায়তবে এ সম্পর্কিত কয়েকটি খবর পড়েও নিশ্চিত হওয়া গেল না বিস্ফোরণের উস কোথায়কাছাকাছি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের গুদাম থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে, এমন সংবাদ দিয়েছে একটি পত্রিকাআরেকটি লিখেছে পানির লাইনে আটকে যাওয়া পরিত্যক্ত পারফিউমের টিউব থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাতদগ্ধ চারজন মারা গেছেনশনিবার দুপুরে তুরাগ থানার রাজাবাড়ী এলাকায় রিক্সার গ্যারেজে কেমিক্যাল বিস্ফোরণে আটজন দগ্ধ হনপরে তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয়

যে কারণেই কেমিক্যাল বিস্ফোরণ হোক না কেন এর কষ্টকর দিক হলো মানুষের মৃত্যুচারজন রিক্সাঅলা পুড়ে মারা গেছেনবাকি দগ্ধ চারজনের চিকিসা চলছে, যদিও তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনকএরা প্রত্যেকেই গরিব, খেটে খাওয়া মানুষএদের একেকজনের ওপর ভার ছিল একেকটি পরিবারেরএকটি পরিবার মানে অনেকগুলো মুখএতজনের জীবন এলোমেলা হয়ে গেলএমন হেলাফেলার মৃত্যু আমাদের মনটা খারাপ করে দেয়

 

¦ালানির দাম বাড়ার জ¦ালা!

শুক্রবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে লুডু খেলছিলামসংসারের কর্ত্রী আচমকা ঘরে ঢুকে বললেন, ডিজেল-পেট্রোল সবকিছুর দাম প্রচুর বেড়ে গেছেএখন গাড়িতে করে আর আগের মতো বেড়াতে যাওয়া যাবে নাভদ্রমহিলার কথা শুনেও না শোনার ভাবে ছিলামমাঝরাতে এসব বলার কারণ কি! পরে আবার বলাতে বিষয়টি পরিষ্কার হলো যে নগদ নগদই জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকারঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফেসবুকে একজন মধ্যরাতের ফিলিং স্টেশনের ছবি পোস্ট করে বসল

ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে মোটরসাইকেল চালকেরা ভিড় জমিয়েছেন ফিলিং স্টেশনেসকাল হলেই ৫০০ টাকার তেল কিনতে হবে ৭৫০ টাকায়তাই সকাল হওয়ার আগে কিনে ফেলা ভালতাই এত ভিড়ফিলিং স্টেশনে মধ্যরাতে এমন জমজমাট তেল বিকিকিনি রেকর্ডই বটেশুধু চানরাতেই এমন বেচাকেনা দেখতে অভ্যস্ত আমরা

যা হোক, বাস্তবতা হলো সরকার হঠা করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশযেখানে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ছিল লিটারপ্রতি ৮০ টাকা, সেখানে করা হয়েছে ১১৪ টাকাঅন্যদিকে ৮৬ টাকার পেট্রোল ১৩০ এবং ৮৯ টাকার অকটেন হয়েছে ১৩৫ টাকাবাংলাদেশের ইতিহাসে একবারে এত বেশি দাম বাড়ানোর নজির নেই

খবরে দেখলাম জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল পাম্পের সামনে মানুষ বিক্ষোভ করেছেন, শনিবার নগর ও মহাসড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম থাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছেবর্ধিত ভাড়া আদায় নিয়ে পরিবহনকর্মী ও যাত্রীদের মধ্যে বচসা ও হাঙ্গামারও খবর পাওয়া গেছেদূরপাল্লার অনেক পরিবহন ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে বলেও অভিযোগ এসেছেবেশ একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিরবিবার জনকণ্ঠের প্রধান শিরোনামও হলো গণপরিবহনে নৈরাজ্যশনিবার রাস্তায় গণপরিবহন ছিল খুবই কমযারা অটোরিক্সা বা বাসে উঠতে পেরেছে, তাদের কাছ থেকে কমপক্ষে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়েছে

সত্যি মানুষের এত ভোগান্তি অসহনীয়সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম আগেই বেড়ে গেছেএখন জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ায় সব কিছুর দাম আরেক দফা বাড়বেকিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষের আয় এক টাকাও বাড়বে নামানুষ রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতেআগামী দিনগুলোয় পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, কে জানে

 

প্রসঙ্গ ডলার

ডলারের তেজীভাব মোটেই বাগ মানছে নাব্রিটেনের মুদ্রা পাউন্ড সব সময়েই ডলার থেকে অনেকটা তফাতে থেকেছেটাকার অঙ্কে ৩০-৪০ টাকা পার্থক্য ছিল ওই দুই মহামুদ্রারএখন ক্রমান্বয়ে পাউন্ডকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে ডলারএ বড় আশ্চর্যের কথাএই বাস্তবতায় ঢাকায় নতুন অভিযানও দেখতে পেল ঢাকাবাসীএকের পর এক মানি এক্সচেঞ্জের কার্যালয়ে পুলিশ হানা দিচ্ছে, একে একে অনেকেরই লাইসেন্স স্থগিত হয়েছে, শোকজ পেয়েছে অর্ধশত প্রতিষ্ঠানবলা হচ্ছে তারা খোলাবাজারে ডলার নিয়ে কারসাজি করছে

অভাবনীয় এক পরিস্থিতিডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকঅপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একাধিক টিম কাজ করছে মাঠে

 

উচ্চশিক্ষিতের মাদক গবেষণা

লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে মাদক নিয়ে গবেষণা করা ওনাইসী সাঈদকে  গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)তার কাছ থেকে একটি ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছেযেখানে তার মাদক নিয়ে গবেষণার বিষয়ে বিস্তারিত লেখা রয়েছেকোন্ মাদক কোন্ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে, কীভাবে কি পরিমাণে সেবন করতে হবে ওই ডায়রিতে এসব লেখা রয়েছেমাদকের কত ধরনের নামই না আমরা শুনেছি, কিন্তু কখনও কি ভেবেছি নারীর সুন্দর নামে নামকরণ হবে মাদকের? হ্যাঁ, আমি মলি-মাদকের কথা বলছিসাঈদ কুশ, হেম্প, মলি, ফেন্টানলের মতো মাদকের চাষ ও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্টও তৈরি করেছিলেন

সাঈদ দেশের একটি স্বনামধন্য ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) করতে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রেপরবর্তীকালে মাস্টার অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) করেন মালয়েশিয়ায়দেশে ফিরে প্রথমে বাবার টেক্সটাইল ব্যবসা দেখাশোনা করেনবিদেশে পড়া অবস্থায় বিভিন্ন মাদকের সঙ্গে পরিচিত হন সাইদবাবার ব্যবসায়ের পাশাপাশি দেশে নতুন ধরনের মাদকের প্রচলন ও বাজার সৃষ্টির পরিকল্পনা করেন তিনি

র‌্যাবের ভাষ্যে জানা যায় পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে নানা ধরনের মাদক নিয়ে আসতেন তিনিএসব মাদক তিনি সাপ্লাই করতেন দেশের বিভিন্ন অভিজাত পার্টিতেবাংলাদেশে নতুন মাদক এক্সট্যাসির অন্যতম মূলহোতা সাঈদতিনি গত প্রায় ৪ বছর ধরে এক্সট্যাসিসহ অন্যান্য উচ্চমূল্যের মাদকের কারবারের সঙ্গে জড়িত

নিজে মাদকসেবী নন সাঈদনিশ্চয়ই তিনি মাদকের মহাক্ষতিকর দিকগুলো জানেনআফসোস, তিনি তার প্রতিভাকে ক্ষতিকর কর্মকা-ে ব্যয় না করে যদি জনকল্যাণে নিয়োগ করতেন, তবে কত ভালোই না হতো

 

বিনামূল্যে আহার

কাজের বিনিময়ে খাদ্য বা কাবিখা প্রকল্পের কথা আমরা জানিএকটি ভাল কাজের বিনিময়ে খাদ্য’-এটি প্রকল্প নয়, মহান ব্রতগরিব মানুষেরা ভাল যে কোন একটি কাজের বিনিময়ে, মানে সারাদিনে একটি ভাল কাজ করেছেন তার কথা বলে, এখানে ভরপেট খেতে পারবেনঅর্থা খেতে টাকা লাগে না, যে কোন একটি ভাল কাজ করলেই খাওয়া যায় পেট পুরেপথশিশু, ছিন্নমূল, অসহায়, ভবঘুরে মানুষগুলো এখানে আসছে, বসছে এবং পেট ভরে খেয়ে যাচ্ছে শুধু একটি ভাল কাজ করার কথা বলেই

আট দশটা হোটেলের মতো এখানে চেয়ার, টেবিল কিংবা বিলের আওয়াজ নেই, নেই মাথার উপর ছাদওখোলা আকাশের নিচে ফুটপাথে বসেই দিব্যি আহার সেরে নেন এই হোটেলে আসা অতিথিরাপ্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ জন অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করার কথা বলছেন এর আয়োজকরা

বর্তমানে প্রতিদিন করাইল বস্তির পাশে বনানী ১১ নম্বর রোড, কাওরানবাজার এবং কমলাপুরে রেলওয়ে স্টেশনে চলছে ভাল কাজের হোটেলএর অর্থের জোগান দিচ্ছেন এই মহানগরীরই প্রায় দেড় হাজার মানুষমাসে তারা প্রত্যেকে দিচ্ছেন ৩০০ টাকা করে চাঁদাএমন উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্যক্ষুধার্ত মানুষের মুখে আহার তুলে দেয়ার মতো, অসুস্থ রোগীকে দরকারি ওষুধ কিনে দেয়ার মতো ভালো কাজ আর হতেই পারে নাএধরনের উদ্যোগের কথা, ভালো কাজের কথা শুনে আমাদের মন আপ্লুত হয়

 

৭ আগস্ট ২০২২

[email protected]

×