ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাশিত রায়

প্রকাশিত: ০৭:১১, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

প্রত্যাশিত রায়

‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’- এমনটি বোধহয় আর বলা যায় না দেশের আদালত তথা বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে। বর্তমান সরকার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পর দেখা যাচ্ছে যে, কিছু বিলম্ব হলেও অনেক মামলার বিচার হচ্ছে। প্রত্যাশিত রায়ও পাওয়া যাচ্ছে। এমনই দুটি মামলার রায় হলো চট্টগ্রাম গণহত্যা মামলার রায় এবং রাজধানীর পল্টনে সিপিবির সমাবেশে জঙ্গীদের বোমা হামলার রায়। চট্টগ্রামে গণহত্যার ঘটনাটি ঘটে ৩২ বছর আগে তৎকালীন স্বৈরশাসক প্রয়াত জেনারেল এরশাদের আমলে। এরশাদ সরকারের পতনের দাবিতে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগসহ ১৫ দলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবচেয়ে দুঃখজনক ও মর্মান্তিক হলো, এ সময় আদৌ কোন কারণ বা উস্কানি ছাড়াই উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা সমবেত জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে নেতাকর্মীসহ নিহত হন ২৪ জন। আহত হন অনেকেই। ফলে এটি পরিচিতি পায় চট্টগ্রাম গণহত্যা হিসেবে। আদালতের রায়ের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার দায়িত্বরত পুলিশদের ওয়্যারলেস থেকে নির্দেশ দেন ‘যত পার গুলি কর। সবাইকে শোয়ায় ফেল। হাসপাতাল ভর্তি করে ফেল।’ এ সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বার বার গুলি থামানোর অনুরোধ জানালেও পুলিশ ক্ষান্ত হয়নি গুলিবর্ষণে। এ থেকেই তৎকালীন স্বৈর শাসকের জিঘাংসা তথা গণহত্যাসুলভ মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। যা হোক, শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যায়বিচার। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও হত্যার রায়ে ৫ পুলিশ সদস্যকে অর্থদন্ডসহ ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। অতঃপর উচ্চ আদালতেও এ রায় বহাল থাকবে বলেই প্রত্যাশা। দ্বিতীয় মামলাটিও পুরনো, যার সঙ্গে জড়িত জঙ্গীরা। রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা হয়েছিল দীর্ঘ ১৯ বছর আগে, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি। আকস্মিক ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহত হন ৫ জন এবং আহত অর্ধশতাধিক। এই বোমা হামলার ১৯তম বার্ষিকী ছিল গত সোমবার। আর এই দিনেই ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মামলার ১২ আসামির মধ্যে ১০ জঙ্গীর ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়, যারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি-বি) নেতাকর্মী। সিপিবির সদস্য বিধায় এবং নিরপরাধ প্রমাণ হওয়ায় দুজনকে খালাস দেয়া হয়। মামলার ১৩ আসামির মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রধান আসামি হুজি-বির কুখ্যাত নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, দেশে যার হাত ধরে জঙ্গীবাদ ও কার্যক্রমের উদ্ভব ঘটে। উল্লেখ্য, মুফতি হান্নানের ফাঁসি ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে অন্য হত্যা মামলার রায়ে। বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মামলাটি বিভিন্নভাবে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাসহ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার হীন অপচেষ্টা করা হয়। সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার উদ্দেশ্য ছিল বামপন্থী দলটিকে নিশ্চিহ্ন করা এবং দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে ব্যাহত করা। তবে আশা ও স্বস্তির কথা এই যে, শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সত্য ও ন্যায়বিচার। তিন বছরেরও বেশি সময় আগে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গীরা ভয়াবহ হামলা চালিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেমে নেই বরং সেটি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। জঙ্গীরা ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে ইসলামবিরোধী যে নারকীয় হত্যাকান্ড চালিয়েছিল, তা অত্যন্ত জঘন্য ও নিন্দনীয়। ওই নৃশংস ঘটনার কুশীলবদের মৃত্যুদন্ডই ছিল প্রত্যাশিত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাত জঙ্গীর ফাঁসির আদেশ তাদের কৃতকর্মেরই উপযুক্ত ফল। এটা স্বস্তির বিষয় যে, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর দেশে নিরাপত্তাহীনতার যে বোধ তৈরি হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অব্যাহত তৎপরতার কারণে সেই পরিস্থিতি কাটানো গেছে। এক্ষেত্রে স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছে বিচার বিভাগও। চট্টগ্রাম গণহত্যা মামলাসহ সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার রায় দীর্ঘদিন পরে হলেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
×