ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে ঘরে চাকরি

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ১৩ মার্চ ২০১৯

ঘরে ঘরে চাকরি

আগামী বাজেটে প্রত্যেক ঘরে একজনকে চাকরি দেয়ার কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই বক্তব্য সাধুবাদযোগ্য এবং দেশের চাকরিপ্রার্থী প্রতিটি সদস্যের পরিবার এ থেকে আশার আলো দেখবে। সাধারণত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর মাধ্যমেই দরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। কিন্তু এবার অর্থমন্ত্রী বলছেন ভিন্ন কথা। তার মতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী যেভাবে চলছে এটি অর্থনীতির জন্য সঠিক পথ নয়। এবার কাঠামোগতভাবে প্রত্যেক পরিবারের আয়ের পথ তৈরি করা হবে। এ জন্য প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর ওপর চাপ কমে আসবে। শিক্ষিত জনগণ যে কোন দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি এবং তাদের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়াও সরকারের একটি দায়িত্ব। অর্থনীতির নিয়মে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর পণ্যের দাম যেমন নির্ভর করে, তেমনি চাকরির বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর মজুরি বা বেতন এবং চাকরিপ্রাপ্তিও নির্ভর করে। শিক্ষিত বেকার নিয়ে ভাবনার কারণ সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে প্রকাশিত তথ্য, যেখানে শিক্ষিত বেকারের হার সর্বোচ্চ। একটি দেশের শিক্ষিত জনসংখ্যার উচ্চ বেকারত্বের হার মানে সমাজের মরমে মরমে ধূমায়িত ক্ষোভের সঞ্চার হওয়া এবং মূল্যবান জনসম্পদের অপচয় ঘটা। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী দেশে বেকারত্বের চিত্র তুলে ধরেছিলেন। তাতে দেখা যায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সারাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এর মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত তরুণ-তরুণী, যারা উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। অর্থাৎ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। দেশের বেকার সমস্যা দূর করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেছিলেন, বর্তমান সরকার বেকার যুব সমাজকে বেকারত্ব থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কর্মসংস্থান ও অন্যান্য সুবিধার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দফতর অধিদফতরসমূহের জনবল এক হাজার ২৫৩ থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ১৩৭ জনে উন্নীত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬৯ জনকে রাজস্ব খাতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার পরিকল্পনাটি প্রশংসাযোগ্য, এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এতে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে চলে আসে। শিক্ষাবঞ্চিত, যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে অথচ কর্মশক্তিতে ভরপুর যুবসমাজকে কিভাবে চাকরিতে যুক্ত করা হবে? তাদের কি আগে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে? সেটি করতে হলে প্রথমে গ্রাম থেকেই শুরু করা চাই। শিক্ষিত বিপুল সংখ্যক তরুণের কর্মবাজারে প্রবেশের ব্যাপারে যুক্তিগ্রাহ্য উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা দরকার জরুরী ভিত্তিতে। তা না হলে হতাশ এসব শিক্ষিত মানুষ উদ্যম হারাবে। তাদের কর্মস্পৃহাও নষ্ট হতে পারে। প্রতি পরিবারে একজন করে চাকরি করলে ওই পরিবারের আর্থিক চিত্র বদলে যাবে, এটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তি কী হবে সেটিও বিবেচনা করা চাই। এই কাজ একটি গণমুখী ও সুদূরপ্রসারী কল্যাণকর কাজ। এই কাজে কোন গাফিলতি, কোন ধরনের স্বজন ও দলপ্রীতি প্রত্যাশিত নয়। প্রতিটি পরিবারেরই সমান সুযোগ ও অধিকার রয়েছে তার একজন সদস্যের চাকরি পাওয়ার- এই সত্যতা মেনে নিয়ে আশু পরিকল্পনা গৃহীত হবে, এমনটাই চাওয়া। দেশ থেকে বেকারত্বের অভিশাপ দূর হোক, প্রতিটি পরিবারে হাসি ফিরুক- এমন যে কোন শুভ উদ্যোগকে সমর্থন জানাবে দেশের মানুষ।
×