ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

সমুদ্রপথে সীমিত সুযোগ, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে রপ্তানি খাত

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

মোঃ এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া, সিলেট

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ২৮ জুন ২০২৫

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্য, বোনা কাপড়, শণ ও সুতার পণ্যসহ বেশ কয়েকটি রপ্তানি পণ্যের ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর। শুক্রবার প্রকাশিত এক সরকারি বিবৃতিতে এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে এসব পণ্য আমদানি আর সম্ভব নয়। শুধু মাত্র নাভা শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে সীমিতভাবে এসব পণ্য প্রবেশ করতে পারবে।

নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রয়েছে: একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক ও ব্লিচ না করা পাটের বোনা কাপড়, শণ ও পাটের সুতা, তৈরি পোশাক (RMG), প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী, ফলের স্বাদযুক্ত কার্বনেটেড পানীয়, তুলা ও সুতির সুতার বর্জ্য, প্লাস্টিক ও পিভিসি পণ্য, কাঠের আসবাবপত্র, রং ও প্লাস্টিসাইজারসহ বিভিন্ন শিল্প কাঁচামাল।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনের ওপর প্রযোজ্য নয়। তবে এসব দেশের হয়ে আসা পণ্য ভারতীয় বাজারে পুনঃরপ্তানি করা যাবে না।

এর আগে চলতি বছরের ১৭ মে ভারত বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ কিছু পণ্যের ওপর একই ধরনের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তখনও বলা হয়েছিল, এসব পণ্য কেবল কলকাতা ও নাভা শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা। সীমান্তবর্তী ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। স্থলপথে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ ও কম ব্যয়বহুল হওয়ায়, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে সময়, ব্যয় ও সরবরাহ চেইন—তিনটিতেই বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিষয়টিকে ‘অপ্রত্যাশিত ও একতরফা’ বলেও আখ্যায়িত করছেন। তাঁরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের মধ্যেই এমন বাণিজ্যিক বাধা বিস্ময়কর।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা না শুধুমাত্র দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে, বরং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতাকেও ব্যাহত করবে।

বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিচ্ছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে পণ্য রপ্তানির বিকল্প বাজার খোঁজার পাশাপাশি স্থলবন্দর ব্যবহারে নীতিগত সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা এখন আরও জোরালোভাবে অনুভূত হচ্ছে।

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ও আস্থার জায়গা রয়েছে। এমন একতরফা নিষেধাজ্ঞা সেই সম্পর্কের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। এখন প্রয়োজন দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক ও টেকসই সমাধান।

সানজানা

×