
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় আগামী নির্বাচনে দেশপ্রেমিক শক্তিকে বিজয়ী করতে হবে। কোনো বিদেশি প্রভুর কথায় আর দেশ চলবে না। নিজেরাই নিজেদের শক্তি নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। ইসলামী দলগুলোর মাঝে এক ধরনের সমঝোতা হয়েছে যে, আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর একটি ভোটবাক্স থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দিল্লির প্রেসক্রিপশনে বার বার ক্ষমতায় এসে দেশের আলেম-উলামাদের উপর জেল-জুলুম, নির্যাতন করেছে।
জামায়াত নেতাকর্মীদের প্রতিটি আসনে আগামী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে প্রতিটি বাড়ি, পাড়া ও মহল্লায় মহল্লায় কাজ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে দেশে ইসলামী বিপ্লব করতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ না হলে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অর্জিত বিজয় হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্যেই জামায়াতে ইসলামী কাজ করছে।
শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল ফারুক মিলনায়তনে থানা মজলিসে শূরা/কর্মপরিষদ সদস্য ও টিম সদস্যদের নিয়ে শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলালের পরিচালনায় শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিািথ ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম ও মুহাদ্দিস রবিউল বাশার। অন্যান্যদের মধ্যে খুলনা মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজৗ, অফিস সেক্রেটারি মীম মিরাজ হোসাইন, কর্মপরিষদ সদস্য মুকাররম বিল্লাহ আনসারী, ইঞ্জিনিয়ার মোল্লা আলমগীর, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, মাওলানা শাহারুল ইসলাম, মাওলানা শেখ মো. অলিউল্লাহ, খুলনা সদর থানা আমীর এস এম হাফিজুর রহমান, সোনাডাঙ্গা থানা আমীর জি এম শহীদুল ইসলাম, খালিশপুর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতপুর থানা আমীর মাওলানা মুশাররফ আনসারী, আড়ংঘাটা থানা আমীর মাওলানা নিয়াজ আনসারী, লবণচরা থানা আমীর মো. মোজাফফর হোসেন, হরিণটানা থানা আমীর মাওলানা আব্দুল গফুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যে আদর্শের মাধ্যমে তার সাথীদেরকে উন্নত নৈতিকতায় সমৃদ্ধ করে একটি সোনার রাষ্ট্র তৈরি করেছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও সেই আদর্শ ধারণ করে এদেশে একদল মানুষকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে আল-হামদুলিল্লাহ। আজ এদেশের জনগণ নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনে সত্যিকার নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে দেখতে চায়। তারা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে ব্যাকুল হয়ে আছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণে নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের গণমুখী কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের মানুষের সেবা অব্যাহত রাখার আহবান জানান। তিনি বলেন, আন্দোলনকে গতিশীল করতে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গণসংযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। লিডারশিপ অর্জন করতে হলে মাঠে ময়দানে লড়াই করে সংগ্রাম করতে হবে। সকল স্তরের মানুষের সাথে কথা বলা এবং যোগ্য লোক তৈরী করতে হবে। প্রত্যেকটি কাজ পরিকল্পনার আলোকে ধারাবাহিকভাবে করতে হবে। দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়ে জনমতকে ইসলামের অনুকূলে আনতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শ্রমজীবী সংগঠনের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করা প্রত্যেক নেতৃবৃন্দের মৌলিক কাজ। তিনি বলেন, মক্কায় যোগ্য লোক ছিল কিন্তু জনমত ছিল না তার জন্যই প্রথম দিকে মক্কায় বিজয় আসেনি। । তাই সকল নেতৃবৃন্দকে গণমুখী চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।
জামায়াতের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের ব্যবহারিক জীবন অন্যের কাছে অনুকরণীয় হতে হবে। সমাজের মানুষের কাছে জামায়াতে ইসলামীর একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আচার-ব্যবহার মাধুর্য পূর্ণ হতে হবে। অনাচার পাপাচারে ভরা জাহেলি জনগোষ্ঠীর সামনে প্রিয় রাসূল (সা.) চারিত্রিক মাধুর্যতা দিয়ে তাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদেরকেও তেমন চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠিত জাহেলিয়াতকে উৎখাত করে এই জমিনে মহান আল্লাহ তায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে নিজের জানমালের কুরবানি পেশ করে ইসলামী আন্দোলনের সত্যিকার কর্মী হওয়া। প্রতিষ্ঠিত জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করছি। এ কাজ সহজ নয়, সকল যুগেই ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিলো একথা সত্য। বাংলাদেশেও জামায়াতে ইসলামী কোনো ফাঁকা মাঠে গোল দেবার চিন্তা করে না। রাজনৈতিক পরিসরে এখানেও আমাদের শক্ত প্রতিপক্ষ রয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস পড়ে আমরা জেনেছি, যুগে যুগে নবী রাসূল আম্বিয়ায়ে কেরামগণ তাদের সময়ে শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই ইকামাতে দ্বীনের বিজয় নিশ্চিত করেছেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এখানে আমরা আল্লাহ তায়ালার দ্বীন কায়েমের স্বপ্ন দেখি। এখানকার মাঠ পরিচ্ছন্ন করেই আমাদেরকে ইসলামী আদর্শকে বিজয়ী করতে হবে। এখানে মুসলিম সমাজে শিরক, নাস্তিক্যবাদ ও মানবরচিত যত মতবাদ রয়েছে তার বিরুদ্ধে আমরা গুটি কয়েক মানুষ আল্লাহর গোলাম হিসেবে লড়াই সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি। পুরো শিকড় সহ আমরা এই জাহেলিয়াতের মূলোৎপাটন করতে চাই। পরবর্তীতে এই সমাজ পরিচালনায় কুরআন ও সুন্নাহকে সর্বত্র চালু রাখার ব্যবস্থা করতে চাই। মহান আল্লাহ তাঁর কিতাব দিয়েই সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের জীবনের প্রকৃত কল্যাণ ও সফলতার দিকনির্দেশনা এখানে রয়েছে।
মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করতে একদল দক্ষ, যোগ্য ও আদর্শের জন্য পাগলপারা দায়িত্বশীল প্রয়োজন। তড়িঘড়ি করে মঞ্জিলে পৌঁছে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। তাই ইসলামী জীবন-বিধান গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের মন মানসিকতা সম্পন্ন কাঙ্ক্ষিত মানের দায়িত্বশীল গঠন করে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। এ জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। একই সাথে এই মানের কর্মী তৈরির জন্য মাঠে ময়দানে ভুমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের কাজই হচ্ছে আল্লাহর বিধান মানা। এটা ঈমানের প্রথম দাবি। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী অন্যায় ও জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তোলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এদেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের দুর্গ। ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলরা জীবন দিয়ে হলেও সেই দুর্গকে রক্ষা করবে। এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেয়া কোন ভাবেই তারা সহ্য করবে না। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী আমাদের দেশের জন্য রহমত। ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীল হিসেবে সেই রহমত পেয়েছি আমরা। আল্লাহ তায়ালা দয়া করেছেন, এরকম একটা অটোমেটিক প্লাটফর্ম এদেশের মানুষ ও মুসলিম হিসেবে আমরা পেয়েছি। এই আন্দোলন সংগঠন যারা করে গেছেন, রাহাবার ছিলেন মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলকে জান্নাতে কবুল করুন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য একদল যোগ্য ও দক্ষ লোকের প্রয়োজন। সেই দক্ষ ও যোগ্য লোক তৈরির জন্যই আজকে দিনব্যাপী শিক্ষা শিবিরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলনকে বেগবান করতে আমাদেরকে মাঠে ময়দানে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীলদের নিজেদের সর্বোচ্চ উজাড় করে আন্দোলনকে বিজয়ী করতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করা একটি ফরয ইবাদত। তাই সমাজের সকল মানুষের কাছে ইসলামের সু-মহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে নিজেদের আওতাধীন সকল ব্যক্তির উপর দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া অবশ্যক। পরিবারের কর্তা তার স্ত্রী-সন্তানদের, প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের, এলাকার মেম্বার-কমিশনার, চেয়ারম্যান কিংবা শাসকগণ যার যার অধীনস্থ সবাইকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়ের জন্য দাওয়াত দেবেন। কেননা রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই জিম্মাদার এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তাদের অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে।’
মিরাজ খান